ঠাঁই পেলেন আগুনে সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া দিনমজুর শিপুল
Published: 18th, March 2025 GMT
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্নি ইউনিয়নের মৃত রুস্তম মোল্লার ছেলে শিপুল মোল্লা। মামাদের জায়গায় একটি টিনের ঘর তৈরি করে তিন সন্তান, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে বসবাস করতেন।
অন্যের জমিতে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে চালান ছয় সদস্যের সংসার। গত ৬ ফেব্রুয়ারি আগুন লেগে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুসহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে দিনমজুর শিপুলের পরিবার।
তখন দরিদ্র ও অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ান টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যায়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় (টিআর) দিনমজুর শিপুল মোল্লাকে একটি ঘর তৈরি করে দেন উপজেলা প্রশাসন।
দিনমজুর শিপুল মোল্লা বলেন, “অনেক কষ্ট করে মামাদের জায়গায় একটি ঘর তৈরি করে মোট ছয়জন বসবাস করতাম। দিনমজুর হিসেবে কাজ করে কিছু আসবাবপত্র কিনেছিলাম এবং নগদ ৩৫ হাজার টাকা জমিয়েছিলাম। কিন্তু গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে আমাদের সব শেষ হয়ে যায়। নতুন একটি ঘর তৈরি করার সামর্থ্যও থাকায় অন্যের বাড়িতে বসবাস করছিলাম। তখন আমাদের বিষয়টি ইউএনও স্যার জানতে পেরে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তার পাশাপাশি টিনের একটি ঘর তৈরি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। অবশেষে তিনি আমাদের একটি টিনশেড ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। সোমবার থেকে নতুন ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছি। প্রশাসনের প্রতি আমরা সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।”
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক বলেন, “আগুন লেগে দিনমজুর শিপুল মোল্লা সর্বস্ব হারিয়েছেন বলে জানতে পারি। তখন সেখানে গিয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে শুকনো খাবার, নগদ কিছু অর্থ সহায়তা করি। এছাড়া তাদের একটি টিনশেড ঘর তৈরি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেই। সোমবার নতুন ঘরটি শিপুল মোল্লার মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে রয়েছে।”
ঢাকা/বাদল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ নমজ র শ প ল ঘর ত র উপজ ল বসব স
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী