১৯৮৯ সালে তিউনিসিয়ায় নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্টিফেন ডে একটি ফোনকল পান। ফোনটি করেছিলেন তাঁর তিউনিসিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট পেলেট্রো। পেলেট্রো বললেন, ‘আপনার কাছে কি ইয়াসির আরাফাতের ফোন নম্বরটা আছে?’ পেলেট্রোর কথা শুনে স্টিফেন ডে ধাক্কা খেলেন। কারণ, আরাফাত তখন আমেরিকার চোখে সন্ত্রাসী।

ডে ও পেলেট্রোর ওই টেলিকথোপকথন হয়েছিল এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন পিএলওর (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) সঙ্গে প্রকাশ্যে সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা থেকে স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করার কয়েক দিন পরই মার্কিন কর্মকর্তারা দোহায় হামাসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেন। এ ঘটনা ১৯৮৯ সালের সেই ঘটনাকে মনে করিয়ে দিল।

সন্দেহ নেই, এ ঘটনা মার্কিন নীতিতে ঘটে যাওয়া এক বড় পরিবর্তন। কারণ, মার্কিন নীতিতে হামাসের সঙ্গে যেকোনো ধরনের আলোচনা নিষিদ্ধ ছিল।

১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ পরে এ সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে। হামাসের সঙ্গে কথা বলাও ছিল মার্কিন কূটনীতিকদের জন্য ক্যারিয়ার ধ্বংসের শামিল।

যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে এসেছে, তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে কোনো আলোচনা করে না। তবে বাস্তবতা হলো, অতীতেও তাদের এ নীতি ভাঙার নজির আছে। যেমন ১৯৯৫ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক দল সিন ফেইনের নেতা জেরি অ্যাডামসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অথচ অ্যাডামসের দলটি সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আইআরএর সঙ্গে যুক্ত ছিল।

হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় বসাটা আগের ওই সব ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি ধাক্কা দেওয়ার মতো। কারণ, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই আলোচনা করে না।

কিন্তু ট্রাম্প এ নিয়ম বদলে দিয়েছেন। মার্কিন বন্দিমুক্তিবিষয়ক আলোচক অ্যাডাম বোয়েলার দোহায় হামাসের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেছেন। এ আলোচনা কোনো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে হয়নি, বরং মুখোমুখি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কেবল বন্দিবিনিময়ের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি, সেখানে হামাস ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবও দিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, ওই আলোচনার পরিধি অনেক বড় ছিল।

হামাস-যুক্তরাষ্ট্রের এ বৈঠক নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ইসরায়েলি নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ হয়েছে। কারণ, তারা আশঙ্কা করছে, যুক্তরাষ্ট্র হামাস নিয়ে আলাদা নীতি গ্রহণ করতে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এ নিয়ে ইসরায়েলকে কোনো কৈফিয়ত দেয়নি। সিএনএনের সাক্ষাৎকারে যখন বোয়েলারের কাছে এ বিষয়ে ইসরায়েলকে কিছু জানানো হয়েছে কি না বলে জানতে চাওয়া হয়, তখন তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের এজেন্ট নই।’

এ অবস্থায় মনে হচ্ছে, ইসরায়েলের নেতাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিন ও আইজাক শামির ব্রিটিশ শাসনের সময়ে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন। কারণ, তাঁরা প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছিলেন। কিন্তু এটি ব্রিটেনসহ অন্যান্য রাষ্ট্রকে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহুকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও তিনি তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই। ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ (সবার আগে আমেরিকার স্বার্থ), বরং আরও স্পষ্টভাবে বললে বলা যায়, ‘ট্রাম্প ফার্স্ট’ (সবার আগে ট্রাম্পের স্বার্থ)। তাঁর কাছে কোনো কিছুই বাইবেলের পবিত্র বাণীর মতো অপরিবর্তনীয় নয়। এমনকি এ নীতি মিরিয়াম অ্যাডেলসনের মতো তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তহবিল সরবরাহকারীকে ক্ষুব্ধ করলেও তিনি এতে একটুও বিচলিত নন।

জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো হামাসের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখেনি। তারা ‘কোয়ার্টেট নীতিমালা’ মেনে চলে। সে নীতিমালায় বলা আছে, হামাসকে বৈধতা পেতে হলে সহিংসতা ত্যাগ করতে হবে, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং আগের সব শান্তিচুক্তি মেনে চলতে হবে।

অনেকেই ট্রাম্পকে বাইডেনের চেয়ে বেশি ইসরায়েলপন্থী নেতা বলে মনে করেন। যদিও ট্রাম্প ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের দমন করার জন্য সবুজসংকেত দিয়ে থাকেন। তবে তিনি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে বাইডেনের তুলনায় অনেক বেশি স্বাধীন এবং প্রয়োজনে ইসরায়েলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতেও সক্ষম।

ট্রাম্পের এই স্বাধীনচেতা মনোভাব এবং তাঁর ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ইসরায়েলকে উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে। ট্রাম্প এরপর কী করবেন, তা নিয়ে ইসরায়েলি নেতারা চিন্তিত। তিনি কি ইসরায়েলের অনুমতি ছাড়াই হামাসের সঙ্গে কোনো চুক্তি করবেন? তিনি কি ইসরায়েলের আপত্তি উপেক্ষা করেই তেহরানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন? এসব প্রশ্ন ইসরায়েল প্রশাসনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা গোপনে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগের একটি চ্যানেল খুলেছিলেন। ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই এটি প্রকাশ্যে করতে পারেন। ট্রাম্পের অনেক সমালোচনা আছে, তবে তাঁকে কিছুটা কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, তাঁর কিছু কাজ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ। তবে এর সঙ্গে কিছু জটিলতাও রয়েছে।

ট্রাম্প হামাসের সঙ্গে চুক্তি করতে চান, আর সংঘাতরত দুই পক্ষের এক পক্ষকে, অর্থাৎ ইসরায়েলকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে সেই চুক্তি করা সম্ভব নয়।

জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো হামাসের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখেনি। তারা ‘কোয়ার্টেট নীতিমালা’ মেনে চলে। সে নীতিমালায় বলা আছে, হামাসকে বৈধতা পেতে হলে সহিংসতা ত্যাগ করতে হবে, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং আগের সব শান্তিচুক্তি মেনে চলতে হবে।

তবে হামাসকে সবকিছু থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার মাধ্যমে কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি। মিসর ও কাতার হামাসের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে।

অনেকে মনে করেন, হামাসের সঙ্গে আলোচনা করা মানে তাদের অযথা বৈধতা দেওয়া। তবে এটি তখনই সত্যি হতে পারে, যদি তাদের হোয়াইট হাউস বা ডাউনিং স্ট্রিটে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু যখন তারা দূরে, গোপনে কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা করছে, তখন এটি তেমন গুরুতর বিষয় নয়।

আরেকটি যুক্তি হলো, সহিংসতার মাধ্যমে হামাস সুবিধা আদায় করতে পারলে, তারা সহিংসতায় আরও উৎসাহিত হতে পারে।

তবে আলোচনা কোনো পুরস্কার নয়। হামাসের সঙ্গে আলোচনা মানেই তাদের সমর্থন করা নয়। বরং এটি বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা যে শত্রুপক্ষগুলোর মধ্যেও সংলাপ ফলপ্রসূ হতে পারে এবং নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলতে পারে।

ইতিহাস বলে, অন্তত এ বিষয়ে ট্রাম্প সঠিক পথে আছেন। সাবেক লেবার নেতা হিউ গেইটস্কেল একবার বলেছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত সব সন্ত্রাসীই সরকারের আমন্ত্রণে ডরচেস্টার হোটেলে এসে মদ খায়।’

যদি গেইটস্কেলের এ বক্তব্য ২০২৫ সালের জন্য হালনাগাদ করা হয়, তাহলে ‘মদ খাওয়ার’ সেই জায়গা ডরচেস্টার হোটেলের বদলে হতে পারে ‘ট্রাম্প টাওয়ার’।

ক্রিস ডয়েল কাউন্সিল ফর অ্যারাব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে (ক্যাবু) পরিচালক

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ইসর য় ল ইসর য় ল র র জন য র র জন

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ