বিরল খনিজ শিল্পে চীনের আধিপত্য মোকাবিলা করার উপায় খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তাই বিরল খনিজ ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘হত্যার’ অভিযোগ কলম্বিয়ার

অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করলেন ট্রাম্প

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, এই চুক্তির আওতায় ‘প্রস্তুত’ প্রকল্পগুলোতে ক্যানবেরা ও ওয়াশিংটন ৮.

৫ বিলিয়ন ডলার (১৩ বিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার) বিনিয়োগ করবে। এই বিনিয়োগ অস্ট্রেলিয়ার খনি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সক্ষমতা বাড়াবে। 

চুক্তির প্রাথমিক কাঠামো অনুযায়ী, আগামী ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রকল্পগুলোতে দুই দেশ ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে, তবে অ্যালবানিজ বলেছেন, এই নতুন চুক্তি ‘দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে’।

এই চুক্তির পাশাপাশি সোমবার (২০ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বহু বিলিয়ন ডলারের অকাস সাবমেরিন চুক্তি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, ‘এটি পুরোদমে এগিয়ে চলেছে’।

এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন বলেছিল, চুক্তিটি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা যাচাই করা হবে, এবং তখন ধারণা করা হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাবমেরিন কিনতে পারবে না।

তবে এবার ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, অস্ট্রেলিয়া সাবমেরিন পেতে যাচ্ছে।

বর্তমানে বিশ্বের ৭০ শতাংশ বিরল খনিজ আহরণ এবং ৯০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকরণ একাই নিয়ন্ত্রণ করে চীন। এই খনিজগুলো প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে কম্পিউটার চিপ ও গাড়ি, সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানি এই খনিজ হাতে পেতে চীনা সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল, যা তাদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। 

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি ও দুই দেশের বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের জেরে চীন সম্প্রতি বিরল খনিজ সরবরাহ সীমিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার পর এ ঝুঁকি আরো বেড়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়া বিরল খনিজ সরবরাহ চুক্তি ঘোষণার পর আজ মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার এ শিল্পের কোম্পানিগুলোর শেয়ার বেড়েছে। 

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ বলেন, এই চুক্তির লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়ায় খনিজ প্রক্রিয়াজাতকারণ প্রকল্পগুলোতে মার্কিন বিনিয়োগ সহ তিন ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগ দ্রুততর করা।

উভয় দেশ এই খাতের কোম্পানি ও প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের জন্য  বাজারমূল্য নির্ধারণ, অনুমতি এবং সরকারি পর্যালোচনার নিয়মাবলীর মতো বিষয়গুলোতে একসঙ্গে কাজ করতেও সম্মত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র আলাদাভাবে বলেছে যে, তারা পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় বার্ষিক ১০০ টন উন্নত গ্যালিয়াম শোধনাগার নির্মাণে বিনিয়োগ করবে এবং রপ্তানি-আমদানি ব্যাংকের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নিতে প্রায় ২.২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই মার্কিন বিরল খনিজ সংস্থা এমপি ম্যাটেরিয়ালস এবং কানাডার ট্রিলজি মেটালস এবং লিথিয়াম আমেরিকার মতো সংস্থাগুলোতে একাধিক বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, যাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকল্প রয়েছে।

সহায়তার বিনিময়ে দেশটির সরকার সংস্থাগুলোতে মালিকানা অংশীদারিত্ব পেয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম বড় খনিজ উৎপাদনকারী দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো তারাও সেই খনিজ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল, কারণ প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্য দিয়েই এসব কাঁচামালকে ব্যবহারযোগ্য রূপ দেওয়া সম্ভব হয়।

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র প রক র য প রকল প সরবর হ জ তকরণ

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি, আবার পুতিনকেও উষ্ণ অভ্যর্থনা: একসঙ্গে দুই কূল কি রাখতে পারবে ভারত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের সফরে ভারতে পৌঁছেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর পর দেশটির বিমানবাহিনীর পালাম ঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাঁকজমকপূর্ণ ও আনুষ্ঠানিক আয়োজনের মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানান। শুক্রবার দুজন শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবেন।

তিন বছর আগে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু করার পর প্রেসিডেন্ট পুতিনের এটাই প্রথম ভারত সফর। সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বের নয়াদিল্লি সফর করেন তিনি।

এবারের সফরে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি ২৩তম রাশিয়া-ভারত বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেবেন পুতিন। শুক্রবার শীর্ষ বৈঠকের আগে পুতিনকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হবে। পরে তিনি নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। এ হায়দরাবাদ হাউসেই পুতিন অবস্থান করবেন।

ভারতের মস্কোর দিকে ঝুঁকে পড়ার শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে। তা হয় ভারতের প্রধান প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে ওয়াশিংটন সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বাড়াতে থাকায়। তখন রাশিয়া ভারতকে অস্ত্র সরবরাহ করতে শুরু করে এবং মস্কো ভারতের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য বন্ধুরাষ্ট্র হয়ে ওঠে। রাশিয়ার এই ভূমিকাকে এখনো মূল্যায়ন করে ভারত।

পুতিনকে যে ধরনের আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের সঙ্গে বরণ করে নেওয়া হলো, তেমন আনুষ্ঠানিকতা কেবল নয়াদিল্লি তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সৌজন্যেই দেখায়। এরপরও মোদি একইসঙ্গে পুতিনের রাশিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গভীর কৌশলগত অংশীদারত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এটাই ভারতের কূটনীতির বিশেষ দিক। একদিকে রাশিয়ার উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান ও সাশ্রয়ী দামে জ্বালানি তেল কেনা এবং স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে গড়ে ওঠা দৃঢ় বন্ধুত্ব ধরে রাখা। অন্যদিকে প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার করবেন বলে আশা করা।

পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের পর ভারত তার কৌশলগত সম্পদ (বিশাল বাজার এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থান) কাজে লাগিয়ে হোয়াইট হাউস ও ক্রেমলিন দুই পক্ষেরই মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

তবে যুদ্ধ শুরুর পর পুতিন প্রথম ভারত সফরে এলেন এমন সময়ে, যখন মোদি একটি উদ্বেগজনক সময় পার করছেন।

নয়াদিল্লি এখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে খুবই প্রয়োজনীয় বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্কের অর্ধেকই আরোপিত হয়েছে ছাড় মূল্যে রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখায় নয়াদিল্লির জন্য ওয়াশিংটনের সরাসরি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে।

নয়াদিল্লি সম্প্রতি ওয়াশিংটনকে সন্তুষ্ট করতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তারা রাশিয়ান তেল কেনা কমিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২ লাখ মেট্রিক টন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) কিনতে রাজি হয়েছে।

এরপরও পুতিনের এবারের সফরে যে বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে, তা হলো মস্কোর সঙ্গে আরও প্রতিরক্ষা চুক্তি—অস্ত্র কেনা, যেটাকে পাকিস্তান ও চীনের কাছ থেকে নিজের রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান ও চীন দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের সীমান্ত উত্তেজনা বেড়েছে।

ভারতকে কত জটিল এক পরিবেশের মধ্যে পথ চলতে হয়, তা এ বিষয়ে বোঝা যায়: রাশিয়া চীনেরও ঘনিষ্ঠ অংশীদার, আবার পাকিস্তানের অস্ত্রশস্ত্রের প্রধান উৎসগুলোর একটি বেইজিং।

পুতিনের জন্য লালগালিচা বিছিয়ে নয়াদিল্লি পশ্চিমা বিশ্ব ও চীন দুই পক্ষকেই এই বার্তা দিচ্ছে যে ভারতের ‘বিকল্প আছে’, এমনটাই মনে করছেন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর কান্তি বাজপেয়ী।

প্রফেসর কান্তি বাজপেয়ী বলেন, এটা একটা ইঙ্গিত যে ভারত রাশিয়ার সঙ্গেই থাকতে চাচ্ছে, যদিও মস্কো ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই অধ্যাপকের মতে, তেল আর অস্ত্রের বাইরে এটা একধরনের কূটনৈতিক কৌশল, বেইজিং ও ওয়াশিংটনকে দেখানো যে দিল্লির হাতে তৃতীয় বিকল্প আছে। আর এতে তার দর–কষাকষির সুযোগও আরেকটু বাড়ে।

পরীক্ষিত বন্ধুত্ব

রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময়, যখন সদ্য স্বাধীন দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জোটনিরপক্ষ’ ছিল, কিন্তু নতুন রাষ্ট্র হিসেবে পথচলার শুরুতে শিল্প খাত ও অর্থনীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক সহায়তা পেয়েছিল।

অবশ্য ভারতের মস্কোর দিকে ঝুঁকে পড়ার শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে। তা হয় ভারতের প্রধান প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে ওয়াশিংটন সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বাড়াতে থাকায়। তখন রাশিয়া ভারতকে অস্ত্র সরবরাহ করতে শুরু করে এবং মস্কো ভারতের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য বন্ধুরাষ্ট্র হয়ে ওঠে। রাশিয়ার এ ভূমিকাকে এখনো মূল্যায়ন করে ভারত।

বিশ্বে অস্ত্র বিক্রির ওপর নজর রাখা চিন্তনপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরই) তথ্যমতে, গত চার বছরে রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের অস্ত্র কেনা কমলেও মস্কো এখনো দেশটির প্রধান সামরিক সরবরাহকারীর অবস্থানে রয়েছে।

এসব রুশ সামরিক সরঞ্জামের বড় অংশই কেনা হয়েছে ভারতের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকা চীনের দিকে নজর রেখে। অবশ্য চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মস্কোর ঘনিষ্ঠ অংশীদারগুলোর একটি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই দেশের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সীমান্ত উত্তেজনা রয়েছে।

এসব রুশ সামরিক সরঞ্জামের বড় অংশই কেনা হয়েছে ভারতের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকা চীনের দিকে নজর রেখে। অবশ্য চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মস্কোর ঘনিষ্ঠ অংশীদারগুলোর একটি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ দেশের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সীমান্ত উত্তেজনা রয়েছে।

অন্যদিকে বেইজিং ভারতের বৈরী দেশ পাকিস্তানের বড় অস্ত্র সরবরাহকারী, যার মধ্যে জঙ্গিবিমানও রয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলেছে, এ বছরের শুরুতে সীমান্তে সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষের সময় ভারতের যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করতে তারা এটা (চীনা জঙ্গিবিমান) ব্যবহার করেছিল। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, ভারতের যেসব যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছিল, সেগুলোর একটি ছিল রাশিয়া নির্মিত সুখোই এসইউ-৩০।

রয়টার্সের তথ্যমতে, বর্তমানে ভারতের ২৯টি যুদ্ধবিমানের মধ্যে বেশির ভাগই রাশিয়ান সুখোই এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, এই সপ্তাহে রাশিয়ার সঙ্গে (ভারতের) আলোচনা সম্ভবত তাদের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান এসইউ-৫৭–এর জন্য সম্ভাব্য অস্ত্র চুক্তি নিয়ে হবে।

কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির অর্থনৈতিক সম্পর্ক বারবার শিরোনামে এসেছে, যা সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা দিলে রাশিয়ার তেলের দাম দ্রুত কমতে থাকে, ভারত সেই সুযোগ লুফে নেয়। বিকাশমান অর্থনীতিতে রসদ জোগানো এবং দেশের ১৪০ কোটি মানুষকে সহায়তার জন্য আগ্রহী ভারত রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনা ব্যাপকভাবে বাড়ায়। দেশটি ক্রেমলিনের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশের একটি হয়ে ওঠে।

পশ্চিমাদের সমালোচনার জবাবে ভারত বারবার বলেছে, দেশের জনগণ ও অর্থনীতির প্রতিই তাদের প্রথম দায়িত্ব।

নয়াদিল্লিভিত্তিক চিন্তনপ্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ডিস্টিংগুইশড ফেলো নন্দন উন্নিকৃষ্ণনান বলেন, ‘আমাদের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ আছে। তাদের দারিদ্র্যসীমার বাইরে নিয়ে আসা দরকার…আর সেটা করতে গেলে ভারতের সব বড় শক্তির সঙ্গে একটি পরিশীলিত কর্মসম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন।’
কিন্তু গত আগস্টে ট্রাম্পের ধৈর্য কমে আসে এবং তিনি ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন। এটা ছিল ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি, পাশাপাশি রাশিয়ার তেল কেনার শাস্তি।

এরপর অক্টোবরে ট্রাম্প রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন, যা ভারতে বিভিন্ন দপ্তরে ধাক্কার মতো হয়ে আসে। ভারতের বাণিজ্য ও তেল পরিশোধন–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, ডিসেম্বর মাসে দেশটির তেল আমদানি কমে অন্তত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নামতে যাচ্ছে।

ওয়াশিংটনের আর্থিক চাপ শুধু সম্পর্কেই টান দিচ্ছে না, বরং বেইজিংয়ের সঙ্গে নয়াদিল্লির উত্তেজনা প্রশমনও যেন দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ভারতের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক কার্যকর হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই একটি সম্মেলনে যোগ দিতে মোদি সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীনে যান। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সেই সম্মেলন আয়োজনের লক্ষ্য ছিল, পশ্চিমাদের পাল্টায় বৈশ্বিক নেতৃত্ব দিতে বেইজিংয়ের সমক্ষতা তুলে ধরা।

সেই সম্মেলনেই মোদি ও পুতিনের সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয়। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে দুজন হাসি দিয়ে উষ্ণ ও দৃঢ় করমর্দন করেন, এরপর জনসমাগম থেকে সরে গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্টের লিমুজিনে বসে প্রায় এক ঘণ্টার একটি ব্যক্তিগত বৈঠক করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্ধারিত দামে পাওয়া যায় না রান্নার গ্যাস এলপিজি
  • নওগাঁয় কাটা হচ্ছে সড়কের পাশের সহস্রাধিক পুরোনো গাছ
  • পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়াল, ডিসেম্বরে দাম বাড়ে কেন
  • ট্রাম্পের শুল্কের আঘাতে বড় সংকটে ভারত
  • ভারতকে ‘নিরবচ্ছিন্নভাবে’ জ্বালানি সরবরাহ দিতে প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন
  • চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, নীলফামারীতে সারসংকটে বিপাকে কৃষক
  • কমেছে মাছ মুরগি ও সবজির দাম
  • বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ-মাদ্রাসায় অনার্স শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে অন্তর্বর্তী সরকার
  • মমতাজের জনপ্রিয় পঞ্চমিশালি আচার
  • ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি, আবার পুতিনকেও উষ্ণ অভ্যর্থনা: একসঙ্গে দুই কূল কি রাখতে পারবে ভারত