সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি, এপিএর পরিবর্তে জিপিএমএস
Published: 21st, October 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের জবাবদিহি, দক্ষতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ জন্য বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) পরিবর্তে নতুন সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস) চালু হচ্ছে।
সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্ধারিত নির্দেশিকা অনুসরণ করে নিজ নিজ জিপিএমএস প্রস্তুত করে নির্ধারিত সফটওয়্যারে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত রোববার (১৯ অক্টোবর) এ–সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আরও পড়ুনবিমানবাহিনীতে বেসামরিক পদে বিশাল নিয়োগ, পদ ৩০৮২০ অক্টোবর ২০২৫পরিপত্রে জানানো হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে প্রচলিত এপিএ ব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন এই জিপিএমএস পদ্ধতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে। সংস্কার ও জনসেবার অগ্রাধিকার বিবেচনায় সরকারি কার্যক্রমকে আরও বাস্তবমুখী, সহজীকৃত ও গতিশীল করাই এর মূল লক্ষ্য। জিপিএমএসের আওতায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীন সংস্থাকে তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সেই পরিকল্পনার আলোকে প্রতি অর্থবছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন পরিকল্পনা তৈরি করা হবে এবং অর্থবছর শেষে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে কৌশলগত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
অর্থবছর শেষে জিপিএমএসের সার্বিক মূল্যায়ন উপদেষ্টা পরিষদ বা মন্ত্রিসভা কমিটি থেকে অনুমোদিত হবে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের সুবিধার্থে কাজের ধরন অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে সাতটি গুচ্ছ বা ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনব্র্যাকে ইন্টার্নশিপ, স্নাতকে আবেদন—সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের অগ্রাধিকার৪৮ মিনিট আগেনতুন পদ্ধতির আওতায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে সরকারের উন্নয়ন অগ্রাধিকার, কর্মবণ্টন কাঠামো (অ্যালোকেশন অব বিজনেস) এবং বাজেট কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জিপিএমএস প্রণয়ন করতে হবে। এতে চারটি কর্মসম্পাদন ক্ষেত্র নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী কার্যক্রম ও লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ প এমএস মন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পণ্য রপ্তানি টানা চার মাস কী কারণে কমছে
দেশের পণ্য রপ্তানি চার মাস ধরে কমছে। গত নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৯ কোটি ডলারের পণ্য। এ রপ্তানি গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ কম। গত বছরের নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল ৪১২ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য।
টানা চার মাস রপ্তানি কমলেও চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। গত জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৩ কোটি ডলারের পণ্য। এ রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পণ্য রপ্তানির এ হালনাগাদ পরিসংখ্যান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, শীর্ষ পাঁচ খাতের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ছাড়া বাকিগুলোর রপ্তানি নভেম্বর মাসে কমেছে। খাতগুলো হলো তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিপ্রক্রিয়াজাত পণ্য ও হোম টেক্সটাইল। এ ছাড়া চামড়াবিহীন জুতা, হিমায়িত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানিও কমেছে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত নভেম্বরে ৩১৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। তবে চলতি বছরের পাঁচ মাসের হিসাবে পোশাক রপ্তানি এখনো ইতিবাচক রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৬১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এ রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকরের কারণে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তৈরি পোশাকের দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে। সে জন্য মার্কিন বাজারে পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। সে জন্য বাজারটিতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী অস্থিরতার কারণে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষণশীল অবস্থান নিয়েছেন।
তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত হচ্ছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। গত নভেম্বরে এ খাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৮৯ মার্কিন ডলার। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত (জুলাই-নভেম্বর) ৫১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
দেশের তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত কৃষিপ্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে ব্যাপক ধস নেমেছে। গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৮ কোটি ২৮ লাখ ডলারের পণ্য। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসের হিসাবেও রপ্তানি কমেছে। এ সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪৬ কোটি ডলারের পণ্য, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ কম।
চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানি খাত পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি গত মাসে সাড়ে ১০ শতাংশ কমেছে। এ সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য। গত বছরের নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের পণ্য। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৩৫ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান তাপস প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাঁচা পাটের বাজার অস্থিতিশীল। দাম অনেক বেশি। সে জন্য উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। আমরা বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিযোগিতামূলক দাম দিতে পারছি না। ফলে রপ্তানি কমছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে পাটের বাজার স্থিতিশীল করার দাবি করছি। সেটি হলে কৃষক ও শিল্প দুটোই বাঁচবে।’
পঞ্চম শীর্ষস্থানীয় রপ্তানি খাত হোম টেক্সটাইলের রপ্তানিও কমেছে। গত নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল। এ রপ্তানি গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় পৌনে ৮ শতাংশ কম। যদিও সামগ্রিকভাবে এখনো হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি ইতিবাচক আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অতীতেও নির্বাচনের আগে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার এলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরবে। তখন আমরা এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে। তবে পণ্য রপ্তানিতে ট্রাম্প ট্যারিফের প্রভাব নির্বাচনের পরও অব্যাহত থাকবে।’