বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির নতুন কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ জকরিয়া। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। ১১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটির মেয়াদ ২০২৫-২০২৭ সাল। আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই খবর জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সংগঠনের সাধারণ পরিষদের ৩০তম সভায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির নতুন কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়েছে। দেশের যাত্রী অধিকার ও সড়ক নিরাপত্তায় কাজ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

নতুন কমিটি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জকরিয়া বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব। ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুহুল আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক। মহাসচিব মো.

মোজাম্মেল হক চৌধুরী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা।

সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ আহমদ। যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা তাওহিদুল হক।

কমিটির অন্যরা হলেন অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, দপ্তর সম্পাদক শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ রিজু আকতার চৌধুরী। নতুন কমিটির সদস্যরা হলেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আরিফ, অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, ইয়াসমিন আকতার সীমা।

সভায় বলা হয়, বিগত সরকারের সময়ে দেশের বিশৃঙ্খল সড়কব্যবস্থা, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বৃদ্ধি, সড়কে অব্যবস্থাপনা এবং সড়কের বিভিন্ন প্রকল্পে বেপরোয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তাই সমিতির নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছিলেন তৎকালীন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ কারণে দীর্ঘদিন নতুন কমিটি করা যায়নি।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির নিবন্ধন ফেরত পাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সভায় সড়ক পরিবহন আইন, নৌ আইন এবং রেল আইন সংশোধন করে যাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত, যাত্রীদের জন্য গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণসহ কিছু দাবি জানিয়েছে সমিতি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ব চ ত হয় ছ ন ম হ ম মদ কম ট র নত ন ক

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ