বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ব্রিটিশ দম্পতির অসামান্য অবদানের গল্প
Published: 26th, March 2025 GMT
সদ্য বিয়ে করে পল কনেট ও এলেন কনেট দম্পতি তখন হানিমুনে। মার্চের শেষের দিকে পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া গণহত্যা নাড়া দেয় তাঁদের। তখনই সিদ্ধান্ত নেন নিজেদের সবটুকু নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।
হানিমুন অসমাপ্ত রেখে মার্চে এ দম্পতি ফিরে আসেন লন্ডনে। সেখানে থাকা প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে আয়োজন করেন ২৫ হাজার মানুষের বিশাল সমাবেশ। শরণার্থীদের জন্য সহায়তা তহবিল সংগ্রহ করতে গড়ে তোলেন ‘অপারেশন ওমেগা’। এমনকি একটি মেডিকেল ভ্যানে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে তাঁরা ইউরোপ থেকে সড়কপথে চলে আসেন বাংলাদেশে। এর মধ্যে পলের স্ত্রী এলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়ে এলেনকে যশোরের এক কারাগারে পাঠায় তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক সরকার। ২০১৩ সালে সে কারাগার পরিদর্শন করেছিলেন এ ব্রিটিশ দম্পতি।
তাঁদের অনন্য সে কীর্তি ও অবদানের নানা অজানা গল্প নিয়ে রাজধানীর গুলশানের লেক পার্কে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী এক প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে এই ব্রিটিশ দম্পতির বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকার নানা চিত্র ও অন্যান্য প্রামাণিক দলিল স্থান পেয়েছে। আজ বুধবার সকালে যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যান ও জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। গুলশান সোসাইটি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে ‘হিউম্যানিটি ইজ ওয়ান’ শিরোনামে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে ২৮ মার্চ (শুক্রবার) পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টায় প্রদর্শনী শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যান বলেন, ‘আমার কাছে পল ও এলেনের যাত্রাটা অনুপ্রেরণাদায়ক। আমি তাঁদের এ অসাধারণ গল্পটা জানতাম না। আজকে জেনেছি। তাঁদের এ গল্প বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার যে ঐতিহ্য, সেটার একটি শক্তিশালী নিদর্শন।’
মহাদেশ পাড়ি দিয়ে মেডিকেল ভ্যানে বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে আসার যাত্রাটা অতুলনীয় বলে উল্লেখ করেন জেমস গোল্ডম্যান। তিনি বলেন, ‘বেশি দিন হয়নি আমি বাংলাদেশে এসেছি। যার সঙ্গেই কথা বলেছি, প্রত্যেকের গল্প কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাঁরা পড়াশোনা করেছেন সেখানে, এখন তাঁদের সন্তানেরা পড়ছেন, পরিবারের সদস্যরা থাকেন যুক্তরাজ্যে। গল্পগুলো একই সূত্রে গাঁথা। এ সম্পর্ক ঐতিহাসিক।’
১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে দুই দেশের যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে, সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও দৃঢ় হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জেমস গোল্ডম্যান।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি গুরুত্ব দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যমে ছাপা হতো বলে উল্লেখ করেন ঢাকায় জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার। তিনি বলেন, ‘আমার মনে পড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম শুনতাম তখন আমরা। স্বাধীনতার পর যে দুর্ভিক্ষ, সেটাও জার্মান সংবাদমাধ্যমে ভালোভাবে এসেছে। এভাবে বাংলাদেশ একটি পরিচিত নাম হয়ে উঠেছিল আমাদের কাছে।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটিশ দম্পতি পল কনেট ও এলেন কনেটের ভূমিকার চিত্র ও অন্যান্য প্রামাণিক দলিল নিয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথিরা। আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের লেক পার্কে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বাসায় ঢুকে ব্যবসায়ীকে গুলি
চট্টগ্রাম নগরের উত্তর মোহরা এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে বাসায় ঢুকে গুলি করে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম মো. ইউনুস। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মো. ইউনুস নদী থেকে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজার বা খননযন্ত্রের ব্যবসা করেন। রাতে নিজের বাসাতেই ছিলেন তিনি। হঠাৎ কয়েকজন দুর্বৃত্ত বাসায় ঢুকে তাঁকে চার থেকে পাঁচটি গুলি করে। তাঁর মুখে, হাঁটুতে ও হাতে গুলি লেগেছে। পরে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
উত্তর মোহরা এলাকাটি নগরের চান্দগাঁও থানার আওতাধীন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যবসায়ীকে রাতেই উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের আটক করতে অভিযান চলছে।