যার কবরে নেমে রাসুল (সা.) লাশ দাফন করেন
Published: 29th, March 2025 GMT
আরব উপদ্বীপের আস-সারাত অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন উম্মু রুমান বিনতে আমির। তাঁর বিয়ে হয় আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনে সাখবারার সঙ্গে। এই বিয়েতে তুফাইল ইবনে আবদিল্লাহ নামের এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেন উন্মু রুমানের ঘরে। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, ৮/১৯৩)
আবদুল্লাহ ইবনুল হারিসের স্বপ্ন ছিল কাবার প্রতিবেশী হওয়া। স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি বসতি স্থাপন করেন কাবায়। সেই যুগের নিয়ম ছিল, বাইরের কেউ যদি মক্কায় এসে থাকতে চায়, তাহলে স্থানীয় কারও সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস মৈত্রী চুক্তি করেন আবু বকরের (রা.
কিছুদিন যেতে না যেতে আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইন্তেকাল করেন। উম্মু রূমানের কাছে মক্কা ছিল ‘বিদেশ’। এখানে তাঁর আত্মীয় নেই, পরিচিত কেউ নেই। স্বামী হারিয়ে ছোট সন্তান নিয়ে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। ঠিক সেই সময় তাঁর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আবু বকর (রা.)। বিধবা উম্মু রুমানকে বিয়ে করে তিনি তাঁর সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, ৮/১৯৩)
রাসুল (সা.) ইসলাম প্রচার করলে পুরুষের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন আবু বকর (রা.)। স্বামীর ইসলাম গ্রহণের পর স্ত্রী উম্মু রুমানও ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু বকর-উম্মু রুমানের ঘরে দুজন সন্তান জন্মগ্রহণ করে। একজন আবদুর রহমান, আরেকজন আয়িশা (রা.)। নবীজি আয়িশাকে (রা.) বিয়ে করলে উম্মু রুমান রাসুলের শাশুড়ি হওয়ার মর্যাদালাভ করেন।
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর তাঁর ও আবু বকরের (রা.) পরিবার মক্কায় থেকে যায়। তাঁদের মদিনায় নিয়ে যেতে তিনি যায়িদ ইবনে হারিসা ও আবু রাফির (রা.) মাকে প্রেরণ করেন। তাঁরা দুজন উভয় পরিবার নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন। (বালাজুরি, আনসাব আল-আশরাফ: ১/২৬৯-২৭০)
উম্মু রুমান (রা.) ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মদিনায় বনু হারিস গোত্রে অবস্থান করেন। (সহিহ বুখারি: ৩৮৯৪) সেখানে প্রায় ৭-৮ মাস অবস্থান করেন। তিনি নিজেই সংসারের দায়-দায়িত্ব কাঁধে নেন। পরিবারের জন্য, মেহমানের জন্য রান্না করতেন। আবু বকর (রা.) আহসুল সুফফার কয়েকজন সদস্যকে তাঁর বাড়িতে খেতে পাঠাতেন। বাড়িতে তখন উম্মু রূমান ও তাঁর ছেলে আবদুর রহমান (রা.)। মেহমানদের নিয়ে খাবার খেতে গিয়ে দেখা যায় আল্লাহ অভাবনীয় বরকত দান করেছেন। খাবার পূর্বের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। প্রায় তিনগুণ বেশি। আবু বকর (রা.) অবশিষ্ট খাবার রাসুলের কাছে নিয়ে যান। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০২)
৬ হিজরিতে উম্মু রুমান (রা.) ইন্তেকাল করেন। রাসুল (সা.) মাত্র পাঁচজন ব্যক্তির কবরে নেমে তাঁদের লাশ শায়িত করেন। উম্মু রুমান(রা.), যিনি রাসুলের শাশুড়ি, তিনি ছিলেন সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের একজন। তাঁকে কবরে নামানোর সময় নবীজি এই বলে দোয়া করেন, ‘আল্লাহ, উম্মু রুমান আপনার এবং আপনার রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য যা কিছু সহ্য করেছেন তা তো আপনার কাছে গোপন নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি জান্নাতের হুর দেখে খুশি হতে চায়, সে যেন উম্মু রুমানকে দেখে।’
আরও পড়ুনইসলামের শত্রু আবু জাহেলের মা আসমা (রা.) সাহাবি ছিলেন ১০ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ ইবন ল হ র স ন কর ন মদ ন য় ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা
চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে আবাসিক হোটেলে তল্লাশি ও অতিথিদের জেরা করেছেন এক ব্যক্তি। গত শনিবার দুপুরে হান্নান রহিম তালুকদার নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন। এরপর সাংবাদিক পরিচয়ে এমন তল্লাশি চালানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেন নেটিজেনরা। তা নিয়ে চলে সমালোচনা। হান্নান রহিম তালুকদার তার ফেসবুক ওয়ালে আপলোড করা পোস্টারে নিজেকে দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদের সম্পাদক, সিএসটিভি২৪ চ্যানেলের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য পরিচয় দিয়েছেন। আরেকটি পোস্টারে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব প্রার্থী ও তারেক রহমান রাজনৈতিক দর্শন চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক।
ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি নগরের বহদ্দারহাট পপুলার গেস্ট হাউজে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে ঢুকেন। রিসিপশনে গিয়ে অতিথি কারা কারা আছেন হোটেলের রেজিস্টার দেখে যাচাই করেন। এরপর বিভিন্ন হোটেলের কক্ষে কক্ষে গিয়ে অবস্থানরত অতিথিদের নানা প্রশ্ন করে জেরা করেন। হোটেলে কেন অবস্থান করছেন? চট্টগ্রামে কেন এসেছেন? স্বামী-স্ত্রীর প্রমাণ আছেন কিনা? ১৫ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে এসব প্রশ্ন করতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, হান্নান রহিম নামে সাংবাদিক ইউনিয়নের কোনো সদস্য নেই। সাংবাদিক পরিচয়ে অনেকে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করছেন। এটি তারই অংশ। সাংবাদিক কখনো কোনো হোটেলে তল্লাশি চালাতে পারেন না। এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। সাংবাদিকতার নামে যারা অপ-সাংবাদিকতা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।'
জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, এভাবে আবাসিক হোটেলের কক্ষে কক্ষে গিয়ে তল্লাশি চালাতে পারেন না কোনো সাংবাদিক। কোনো গেস্ট হাউস কিংবা হোটেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। ভিডিওটি দেখার পর হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলা দিতে বলেছি। কিন্তু তারা মামলা দিতে আসছে না। তারা না এলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।