রোবোটিক্স ল্যাব প্রতিষ্ঠার ঘোষণা ভিভোর
Published: 3rd, April 2025 GMT
রোবোটিক্স ল্যাব প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিল ভিভো। বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া অ্যানুয়াল কনফারেন্স ২০২৫-এ ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া একই অনুষ্ঠানে উন্মোচন করা হয়েছে প্রথম মিক্সড রিয়েলিটি (এমআর) হেডসেট “ভিভো ভিশন”।
মঙ্গলবার চীনের বোয়াও হাইনানে চার দিনব্যাপী বার্ষিক এ সম্মেলন শুরু হয়।
বোয়াও ফোরামের চতুর্থ সম্মেলনের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভিভো তাদের ব্লু টেকনোলজি ম্যাট্রিক্স (ব্লুইমেজ, ব্লুএলএম, ব্লুওএস, ব্লুচিপ, ব্লুভোল্ট), সিক্সজি প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং বাজারে আসতে যাওয়া নতুন স্মার্টফোন ভিভো এক্স২০০ আল্ট্রা প্রদর্শন করেছে। ভিভো এক্স২০০ ফোনটিকে এবারের সম্মেলনের অফিসিয়াল স্মার্টফোন হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।
ভিভোর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, চিফ অপারেটিং অফিসার ও ভিভো সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হু বেইশান ‘ভিভো রিলিজ মোমেন্ট’ সেশনে ’হিউম্যানিটি ইন দ্য ফিউচার অব টেকনোলজি বাই ভিভো’ শীর্ষক বক্তব্য দেন। ভিভোর গত তিন দশকের অগ্রযাত্রা তুলে ধরেন তিনি।
হু বেইশান বলেন, ভিভো এখন ৬০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ৫০ কোটি ব্যবহারকারীকে সেবা দিচ্ছে। গত চার বছর ধরে চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড এটি। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, সহযোগিতা ও দূরদর্শিতা নিয়ে কাজ করে চলেছে ভিভো।
তিনি বলেন, বর্তমানে মোবাইল ফোন শিল্প প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং রোবোটিক্সের ক্ষেত্রে। এআই ডিজিটাল জগতে অনেক অগ্রগতি নিয়ে এসেছে। তবে রোবোটিক্স এখনও শারীরিক কাজকর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
তিনি বলেন, উন্নত এআই, শক্তিশালী হার্ডওয়্যার ও বিভিন্ন অ্যাপ দিয়ে সাজানো স্মার্টফোনগুলো এআই এবং রোবোটিক্সের মধ্যে সংযোগ সাধন করতে পারে। এর ফলে নতুন প্রজন্মের জন্য ইন্টেলিজেন্ট ডিভাইস তৈরি করা সম্ভব হবে।
এ সম্পর্কিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভিভো রোবটিক্স ল্যাবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন হু বেইশান। এই ল্যাবে রোবটের মস্তিষ্ক এবং চোখ তৈরি করতে ভিভোর এআই এবং বিশেষ কম্পিউটিংয়ের দক্ষতা ব্যবহার করা হবে।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে হু বেইশান বলেন, এআইভিত্তিক বড় মডেল ও ইমেজিংয়ে প্রায় এক দশকের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ভিভো ভিশন থেকে অর্জিত রিয়েল-টাইম স্পেসিয়াল কম্পিউটিং ক্ষমতা রোবটিক্সে নতুন উদ্ভাবন আনবে। ভিভো শিল্প রোবোটিক্সের পরিবর্তে ব্যক্তিগত ও বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য রোবটিক সমাধান তৈরি করতে চায়, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করবে। কোম্পানির লক্ষ্য হলো রোবটিক্সকে গবেষণাগার থেকে বের করে বাস্তব জীবনে ব্যবহার করা, যাতে বিভিন্ন মানুষের চাহিদা পূরণ হয়।
হু বেইশান ভিভোর প্রথম মিক্সড রিয়েলিটি হেডসেট ভিভো ভিশন উন্মোচন করেন। এটি মিক্সড রিয়েলিটি (এমআর) প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এ সময় হু বলেন, ভিভো তার ইমেজিং দক্ষতা, এআই এবং রিয়েল-টাইম স্পেসিয়াল কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে আরও বাস্তবসম্মত ডিজিটাল অভিজ্ঞতা দিতে চায়। আগামী মাসে ভিভোর সর্বশেষ ইমেজিং টেকনোলজির ভিভো এক্স২০০ আল্ট্রা উদ্বোধন করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্মার্টফোন, এআই ও রোবোটিক্সের সংমিশ্রণে মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আরও উন্নত করতে ভিভো সামনের দিনগুলোতে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানান হু বেইশান। তিনি জানান, ভিভো ব্লুটেক, সিক্সজি, এআই এবং মিক্সড রিয়েলিটিতে নিয়মিতভাবে বিনিয়োগ করতে চায়। এ ছাড়া পরবর্তী প্রজন্মের গ্রাহক প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিতে চায় ভিভো। ভিভো তার শিল্প অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ঘরে ঘরে ইন্টেলিজেন্ট রোবোটিক্স নিয়ে আসতে চায়, যাতে প্রযুক্তি মানুষের জীবনে আরও অর্থপূর্ণভাবে ও বাস্তবিক অর্থে কাজে লাগে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থা, প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, যে আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী। আধাআধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই।’
গতকাল বুধবার রাজধানীর বীরউত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। খবর বিবিসি বাংলা ও বাসসের।
নিজেকে ‘যুদ্ধবিরোধী মানুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক– এটা আমরা কামনা করি না।’ যুদ্ধের প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়– এ রকম ধারণার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তির কথা জানান ড. ইউনূস।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সব সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার, রাডার সংযোজনের জন্য বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান-দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।’
তিনি দেশের বিমানবন্দরগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে বিমানঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার
গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর বিতরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব ঘর বিতরণ করেন।
ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মাণের সামর্থ্য নেই, এ রকম তিনশ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেনীতে ১১০টি, নোয়াখালীতে ৯০টি, কুমিল্লায় ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি কক্ষ, কমন স্পেস, শৌচাগার, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। ৪৯২ বর্গফুট আয়তনের ঘরে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং ৫০০ বর্গফুটের ঘরে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেনাবাহিনী ঘরগুলো নির্মাণ করেছে।
অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান বক্তব্য দেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত ও বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় এমন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘দেশের নৌবন্দরগুলোর বর্তমান হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব।’