‘ঈদের দিন সকালে চুলায় পায়েস রান্না করছিলাম। চারদিকে ঈদ-আনন্দের আবহ। এর মধ্যে হঠাৎ জোয়ারের পানি এসে ভাসিয়ে দেয় সব কিছু। জীবন বাঁচাতে এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বেড়িবাঁধে উঠে আসি। সামনে কপালে কী আছে, কে জানে?’ 

কথাগুলো বলছিলেন নয়াখালী গ্রামের রমেছা বেগম। বেড়িবাঁধের উপর সারিবদ্ধ ঘর। পলিথিনের বেড়া, পাতার ছাউনি। কেউবা কাঠের পাটাতন দিয়ে টংঘর বানিয়েছেন। উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর জোয়ারে তোড়ে এদের সব ভেসে গেছে। মাটির ঘরগুলো একে একে ধ্বসে গেছে। রমেছার ঈদের পায়েসের পাতিল, চুলা, ঘরদোর, সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে জোয়ারের স্রোত। ঘরের মাটির দেয়াল ধ্বসে পড়েছে। অন্যান্য উপকরণ বিনষ্ট। বেড়িবাঁধ সংস্কার করে পানি আটকানো সম্ভব হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা এখনো মিলছে না। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেককে শুরু করতে হবে নতুন করে। সেজন্য প্রয়োজন টাকা।   

গ্রামটি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর তীরে; ঈদের দিনের সেই গল্পটা এই মানুষদের কাছে এখনো তাজা। একমাস পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার পর এসেছিল ঈদুল ফিতর। রমজান শেষে রাত পোহানোর আগেই সব বাড়িতে ছিল ঈদের প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল সকালেও। নয়াখালীর রমেছার মত কেউ পায়েস রান্না করছিলেন, আনুলিয়া গ্রামের আসাদুজ্জামান, আবদুস সাত্তার গাজী, সফিকুল ইসলামের মত আরো অনেক মানুষ নতুন জামা পরে গিয়েছিলেন ঈদের জামাতে। কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎ পানির স্রোত এসে সর্বনাশ ডেকে আনলো। গোটা এলাকায় ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেলো। শুধু ঈদের আনন্দ নয়, এই বিপর্যয় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জীবনে নতুন সংকট নিয়ে এলো। আকস্মিক বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় আনুলিয়া ইউনিয়নের দশটি গ্রামের অন্তত দশ হাজার মানুষ চরম সংকটের মুখে পড়েছে। 

আরো পড়ুন:

সাতক্ষীরায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ফাটল 

রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার বর্ষার আগেই শেষ হবে

ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপদের মুখোমুখি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই প্রতিবছর ওই অঞ্চলের কোথাও না কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা এখন প্রায় নিয়মিত। নাজুক বেড়িবাঁধের কারণে মানুষের মাঝে আতঙ্ক। ভাঙনের পর আসে সর্বনাশের সময়। বিপদের সময় সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে জরুরি খাবার হিসাবে চিড়া, মুড়ি, চাল, ডাল, তেল, লবণ, পানি ইত্যাদি পাওয়া যায়। কিন্তু বিপদ কেটে যাওয়ার পর, পুনর্বাসনকালে মানুষের পাশে কেউ থাকে না। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আসল লড়াই তখনই শুরু হয়। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের পুনরায় ঘরে ফিরে যেতে ৫০-৬০ হাজার থেকে এক লক্ষ কিংবা দেড় লক্ষ টাকার প্রয়োজন হবে। এ টাকা কে দেবে!  

রমেছার লড়াই আরো কঠিন!

অতি কষ্টে চলা রমেছা বেগমের সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। সাতক্ষীরার আশাশুনিতে আনুলিয়া ইউনিয়নে খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে নয়াখালী গ্রামে কঠোর পরিশ্রমে দিনমজুরি করে জীবন কাটাচ্ছিলেন রমেছা। দুই সন্তান ফেলে স্বামী চলে যাওয়ায় রমেছার ঠাঁই হয় নয়াখালী বাবার ভিটেয়। পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন রমেছা নিজেই রোজগারের পথ বের করেছিলেন। রাস্তার কাজ, মাটির কাজ, চিংড়ির ঘেরের কাজে দিনমজুরি করছিলেন তিনি। কাজ না থাকলে নদীতে চিংড়ির পোনা ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দরিদ্র বাবার ভিটেয় বসবাসের জন্য করেছিলেন মাটির দেয়ালে তৈরি একটি ঘর। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ কঠিন এক রোগে আক্রান্ত হয় রমেছার ছেলেটি। অনেক চিকিৎসার পরেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি। মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু ঠিক মায়ের মতই তার কপালেও স্বামীর ঘর ছিল না। তিন সন্তানসহ ফিরে আসে মায়ের কাছে। একদিকে সংকটে মা রমেছা, অন্যদিকে মেয়ে এবং নাতিদের বোঝাও এসে পড়ল তার ওপর।  

সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

রমেছা জানান, তার আরো এক বোন হেনা পারভীন স্বামীর ঘর থেকে ফিরে এসেছেন বাবার বাড়ি। এক মেয়ে নিয়ে পৃথক ঘরে বসবাস করেন তিনি। এ ছাড়াও দুই ভাইয়ের দুটি ঘর ছিল ওই বাড়িতে। ঈদের দিন জোয়ারের পানিতে সবগুলো ঘর ধ্বসে পড়েছে। ঘরের অধিকাংশ মালামাল রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। হাতের কাছে যা পেয়েছিলেন, তা নিয়ে মানুষগুলো ছুটেছেন বেড়িবাঁধের দিকে। রমেছা, তার বোন হেনা পারভীন এবং দুই ভাই শহীদ শেখ ও কায়মুল শেখ সকলেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানো রান্নার ব্যবস্থা হয়নি। শুকনো খাবার দিয়ে দিন কাটছে। 

রমেছা বলেন, ‘নানান সংকটের মধ্য দিয়ে জীবন এগিয়ে নিচ্ছিলাম। জোয়ারের পানির তোড়ে বসবাসের ঘর হারিয়ে এখন নতুন সংকটে পড়লাম। এখন মাথাগোঁজার ঠাঁইও নাই। বেড়িবাঁধের উপরে বসবাস করছি। কবে ঘরে ফিরতে পারবো জানি না। ঘরে ফিরতে হলে ঘর তৈরি করতে হবে। ঘর তৈরি করতে লাগবে অনেক টাকা। কোথায় পাবো সে টাকা!’

চুলা জ্বলেনি অনেক পরিবারে

ঈদের দিন বেড়িবাঁধ ধ্বসের পর অনেক পরিবারে এখনো চুলা জ্বলেনি। শুকনো খাবার চিড়া-মুড়ি-গুড় দিয়ে ক্ষুধা মেটাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। নয়াখালী গ্রামের গা ঘেঁষে বেড়িবাঁধের উপরে সারিবদ্ধ বাড়িঘর, যারা জোয়ারের পানিতে সব হারানোর পর এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘরের আসবাবপত্র যা কিছু রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে, সেগুলো দিয়ে কোনমতে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে তারা বসবাস করছেন। এপ্রিলের অসহনীয় গরমের মধ্যে তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। 

নয়াখালী গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের এই গ্রামের সব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। গ্রামের অধিকাংশ পরিবার বেড়িবাঁধে উঠে এসেছে। চুলা নাই, খাবার নাই, লাকড়ি নাই, পানি নাই। এখানে বসবাস করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে।’ পলাশ পাড়ের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ‘মাটির ঘর ধ্বসে গেছে। বেড়িবাঁধের উপরে টংঘর বানিয়ে বসবাস করছি।’ একই বাড়ির বারিক পাড়ের স্ত্রী মাসতেরাতুন খাতুন বলেন, ‘মেঘ নাই, বৃষ্টি নাই। হঠাৎ বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে আমাদের সর্বনাশ করেছে। ঈদের দিন বাড়িতে চুলা জ্বলেছে। এখন অবধি আর চুলা জ্বলেনি। শুকনো খাবার খেয়ে আর কতদিন চলতে পারব?’

ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, জোয়ারের তোড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হয়েছে। বসবাসের ঘর, রান্নার চুলা, টয়লেট, খাবার পানি, খাদ্য, চলাচলের রাস্তা, সব ক্ষেত্রেই সংকট তৈরি হয়েছে। সাতক্ষীরার এই এলাকাটি ভৌগোলিকভাবে সুপেয় পানির সংকটের এলাকা হিসাবে পরিচিত। অধিকাংশ এলাকায় নলকূপ বসে না। ফলে পুকুরের পানি একমাত্র ভরসা। কিন্তু বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে কয়েকদিন জোয়ারভাটা অব্যাহত থাকায় সুপেয় পানির পুকুরগুলো লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে অন্যান্য সংকটের সাথে খাবার পানির সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এত সংকটের মধ্যেও জরুরি ত্রাণ সহায়তা ছাড়া বিশেষ কোনো সহায়তা পৌঁছেনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়।     

চিংড়ি চাষির সর্বনাশ!

আনুলিয়া গ্রামের আসাদুজ্জামানের চারটি চিংড়ির খামার লবণ পানির তলায়। বাড়িতে তার তিনটি ঘর ধ্বসে গেছে। সব নিয়ে তার ক্ষতির পরিমাণ ৫ লক্ষাধিক টাকা। সফিকুল ইসলামের ১১ বিঘা জমিতে চিংড়ির ঘের ছিল। সব মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ছয় লক্ষ টাকা। এভাবে আরো অনেক চিংড়ি চাষি তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ চিংড়ি চাষের উপর নির্ভরশীল। এ বছর চিংড়ি চাষের মৌসুম কেবল শুরু হয়েছিল। এরই মধ্যে এই বিপর্যয়। 

আনুলিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ধারদেনা করে কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করেছিলাম। ব্যাংক এবং সমিতিতে ঋণ রয়েছে। চিংড়ি চাষে বিপর্যয় হলেও ঋণ আমাদের শোধ করতেই হবে। মৌসুমের শুরুতে ঘের থেকে কেবল চিংড়ি আহরণ শুরু হয়েছিল। পুরো মৌসুম পেলে দেনা শোধ করে লাভবান হতে পারতাম। কিন্তু এখন আমরা ব্যাপক লোকসানে আছি। চিংড়ি আমাদের উপার্জনের প্রধান অবলম্বন। চিংড়িতে ধ্বস নামলে আমাদের বিকল্প কিছু নাই। ৪৭ বিঘার চিংড়ির ঘের সমীরণ সরদারের। ১২ বিঘার ভিটেও ছিল তার। জোয়ারের তোড়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। চিংড়ি চাষিদের মধ্যে ক্ষতির মুখে পড়া আরো কয়েকজন সাত্তার গাজী, রুহুল আমীন, তারকচন্দ্র সরদার, আবদুল গাজী। এরা সকলেই এখন সামনে অন্ধকার দেখছেন।   

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগের প্রাথমিক হিসাব বলছে, উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে আটটি গ্রামের প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমির ৫০০ শতাধিক চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়েছে। এতে চাষিদের প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে চাষিদের দাবি ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ। সূত্রগুলো বলেছে, ২০ হেক্টর জমির বোরো ধান ও প্রায় দেড় হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্লাবিত এলাকার প্রায় ১০০০ ঘরবাড়ি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি গিয়ে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

বেড়িবাঁধ ভাঙনের পর আধুনিক জিও টিউব দিয়ে একটি বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে খোলপেটুয়া নদীর লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। দুর্গতদের সহায়তায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানান। ৩১ মার্চ সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে প্রায় দেড়শ ফুট এলাকাজুড়ে বেড়িবাঁধ খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে প্লাবিত হয়ে পড়ে আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়া, নয়াখালী, চেঁচুয়া কাকবাসিয়াসহ আরো কয়েকটি গ্রাম। এর মধ্যে নয়াখালী গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয় এবং এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখনো বেড়িবাঁধের উপর অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। 

চাই টেকসই বেড়িবাঁধ

স্থানীয়রা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাঙনকবলিত বাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি অবিলম্বে অবৈধ পাইপলাইন ও গেট সিস্টেম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। একইসঙ্গে তারা টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানিয়েছেন। এই দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে এলাকাবাসী বেড়িবাঁধ ভাঙনের কারণ হিসেবে বলেন, মৎস্য ঘেরে লবণ পানি উত্তোলনের জন্য স্থাপন করা পাইপের কারণে বেড়িবাঁধের নিচের মাটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ফলে এই ভাঙনের সূত্রপাত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আনুলিয়াবাসীর ঈদের আনন্দ ভাঙনে ভেসে গেছে। মানুষ ঘর-বাড়ি, ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের সবকিছুই হারিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। এ যেন অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম। এই নদীই আমাদের প্রাণ। কিন্তু অসাধুরা ইচ্ছাকৃতভাবে বেড়িবাঁধ ভাঙার সুযোগ সৃষ্টি করে, যাতে তারা ত্রাণের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে পারে। তারা বলেন, খোলপেটুয়া নদীতে জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে, ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, বাজেটের সিটিজেন চার্টার দিতে হবে।  

আনুলিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) আশাশুনি উপজেলা টিম লিডার আবদুল জলিল বলেন, ’মূল যে পয়েন্টে ভেঙেছে, সেটাতে একটি পাইপলাইন ও গেট সিস্টেম ছিল। যতগুলো ভাঙন পয়েন্ট রয়েছে, সবগুলোই পাইপলাইনের কারণে হয়েছে। এখন যদি আমরা এই পাইপলাইন বসানো বন্ধ না করি, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা এখন খাবার সংকটে পড়েছে। অনেক পরিবার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ শুরু করলেও এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।’   

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপক ল বসব স করছ ঈদ র দ ন ট কসই ব ধ র উপর পর ব র ম র সব ন র পর আম দ র নয় খ ল উপজ ল আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ