পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। কিছুটা সময় হাতে নিয়ে মাঝে মধ্যে দেশে আসেন তিনি। কিন্তু এবারের চিত্রপট ভিন্ন। হঠাৎ ঝটিকা সফরে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন এই নায়িকা।
শাবনূরের মা, ভাই-বোন ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। কিন্তু গত ছয় মাস শাবনূরের মা বাংলাদেশে ছিলেন। এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঝটিকা সফরে আসতে হয় শাবনূরকে। গত ২৮ মার্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দেশে মাত্র ৮ ঘণ্টা ছিলেন তিনি। একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান শাবনূর।
শাবনূর বলেন, “এক মাস ধরে আম্মা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। প্রতিনিয়ত ফোনে কথাবার্তা হচ্ছিল। ঢাকার বড় বড় হাসপাতালের ৩-৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখিয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই তারা আম্মার রোগ ধরতে পারছিলেন। এদিকে আম্মার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। একটা সময় বোঝা গেল, আম্মার নিউমোনিয়া হয়েছে। এর বাইরে আরো কয়েকটি সমস্যা ছিল। ২৮ মার্চ তো এমন অবস্থা হয়েছিল, আম্মা কথা বলার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলেন। শ্বাসকষ্টে একদম কাবু হয়ে পড়েন। সেদিন আম্মার শারীরিক অবস্থাও জানতে পারছিলাম না। কারণ আম্মা কথা বলতে পারছিলেন না।”
আরো পড়ুন:
মেয়ের বলিউড অভিষেক নিয়ে মুখ খুললেন কাজল
ববির ‘দিওয়ানা’
এরপরই বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন শাবনূর। পরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “আম্মার দেখাশোনার দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তাকে শুধু বলেছি, আমি আসা পর্যন্ত আম্মার সঙ্গে থাকতে। আম্মাকে মানসিকভাবে শক্তি ও সাহস দিতে। এরপর টিকিট খোঁজা শুরু করি। সেদিন রাতেই অনেক কষ্টে টিকিট পেয়ে যাই। আমার বোন আর ভাইয়েরা বলছিল, এ অবস্থায় একা যেতে পারব তো? তারা কেউ সঙ্গে আসবে নাকি? আমি বললাম, একাই যাব। কোনো সমস্যা হবে না। লাগেজ নিইনি, তাই কোনো কাপড়চোপড় নিইনি। বলা যায়, এককাপড়েই উড়াল দিই। পাসপোর্ট, টিকিট ও একটা ব্যাগপ্যাক সঙ্গী করেই আমি বাসা থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হই। প্লেনের পুরোটা সময়, ট্রানজিটের সময়— কীভাবে যে কেটেছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। আম্মার জন্য শুধু দোয়া করছিলাম।”
শাবনূর তার অসুস্থ মাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে গেছেন। তা জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, চিকিৎসকেরা একের পর এক শুধু আম্মার টেস্ট করাতে বলছেন। একপর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি করাতেও বলেন। কিন্তু এ অবস্থায় আমি কোনোভাবে হাসপাতালে ভর্তি করাতে ভরসা পাচ্ছিলাম না। আম্মার দেখাশোনা যে করছে, বারবার তাকে বলেছি, কোনো হাসপাতালে ভর্তি করানোর দরকার নেই। কষ্ট করে হলেও আমি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। কারণ আম্মাকে দেশে রাখব না। বাংলাদেশে গিয়েই আম্মাকে নিয়ে উড়াল দেব। শুনেছি, আম্মারও কষ্ট হচ্ছিল। এসেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাড়াহুড়ো করে আম্মার লাগেজ গুছিয়ে আবার উড়াল দিলাম।”
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি পৌঁছানোর পরপরই শাবনূর তার মাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করান। পরেরদিন থেকে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। এ তথ্য উল্লেখ করে শাবনূর বলেন, “চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় মা এখন পুরোপুরি সুস্থ। কয়েক দিন আম্মা হাসপাতালে ছিলেন। এখন বাসাতেই আছেন। আম্মা এখন পুরোপুরি সুস্থ।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র শ বন র আম ম র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।