মাইদ হোসেন নামে এক যুবককে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বাসায় নিয়ে আসেন আল আমীন নামে আরেক যুবক। রাতে ওই যুবককে নিজ কক্ষে ঘুমাতে বলেন আল আমীন। সুযোগ বুঝে তাকে বলাৎকার করেন আল আমীন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করেন মাইদ। পরে পাশের একটি কক্ষে লাশ রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যান তিনি। 

গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার পূর্ব চান্দনা এলাকায় ঘটে যাওয়া এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত মাইদ হোসেনকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য দেয় অভিযুক্ত যুবক। 

পিবিআইয়ের গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বুধবার সন্ধ্যায় এ সব তথ্য নিশ্চিত করেন। 

পিবিআই জানায়, শেরপুর সদরের পাকুরিয়া ফকিরপাড়া আশ্রাব আলীর ছেলে আল আমীন পাঁচ বছর ধরে গাজীপুরের চান্দনা পূর্বপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন এবং ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করতেন। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট খলিশাকুড়ি গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে মাইদ হোসেনকে গত শনিবার নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন আল আমীন। মাইদ হোসেনও পূর্ব চান্দনা এলাকায় বসবাস করত। 

পিবিআই জানায়, রাতের তারা একই কক্ষে ঘুমান। শেষ রাতে মাইদকে বলাৎকার করেন আল আমীন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আল আমীনকে হত্যার পর পাশের একটি কক্ষে লাশ রেখে পালিয়ে যান মাইদ। ঘর থেকে লাশের গন্ধ বের হলে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। গত সোমবার সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় ওই দিনই নিহত আল আমীনের মা আকলিমা আক্তার বাদী হয়ে বাসন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় আল আমীন হত্যাকাণ্ডে জড়িত মাইদকে মঙ্গলবার শ্রীপুরের শৈলাট গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

পিবিআই এর গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার বলেন, মঙ্গলবার রাতে তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য প ব আই

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ