ইউক্রেনকে ২১ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার) সামরিক সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে মিত্রদেশগুলো। গতকাল শুক্রবার ব্রাসেলসে ইউক্রেন ডিফেন্স কনটাক্ট গ্রুপের সম্মেলনে এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রায় ৫০টি দেশ নিয়ে এ জোট গঠিত হয়।

গতকাল এই জোটের ২৭তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা অংশ নেন। আগের ২৫টি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ওয়াশিংটন নিজেকে গুটিয়ে নিলে যুক্তরাজ্য সভাপতিত্ব করছে।

অবশ্য গতকালের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিও অংশ নেন। পাশাপাশি প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও।

সম্মেলন শেষে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বলেন, ইউক্রনকে ২১ বিলিয়ন ইউরোর সামরিক সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে জোটের সদস্য দেশগুলো। এটি ইউক্রেনের জন্য তহবিল সংগ্রহে নতুন রেকর্ড। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য এ বছর ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আলোচনা বিলম্বিত করছেন বলে হিলি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এই যুদ্ধের জন্য ২০২৫ সাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর।

ইউক্রেনে নিকট ভবিষ্যতে শান্তি অধরাই থেকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস। এ সময় কিয়েভের জন্য নতুন সহায়তার বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৯ সাল নাগাদ আরও ১১ বিলিয়ন ইউরোর সহায়তা দেবে জার্মানি। এটি ইতিমধ্যে প্রতিশ্রুত অর্থসহায়তার অতিরিক্ত।

এ সময় ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেন, কিয়েভকে নিরাপত্তাসহায়তার নেতৃত্ব নিচ্ছে ইউরোপ। এ জন্য ইউক্রেন কৃতজ্ঞ বলেও জানান তিনি। অবশ্য উমেরভ বলেন, এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রও অংশ নিয়েছে। এতে দেশটি যে নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে এবং আমাদের পাশে আছে, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল।

মস্কোয় ট্রাম্পের দূত

ব্রাসেলস সম্মেলনের মধ্যেই রাশিয়া সফরে গেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। গতকাল ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হলে, তা গণমাধ্যমকে অবহিত করবেন বলেও জানান পেসকভ।

এর আগে মার্চে মস্কো সফর করেছিলেন উইটকফ। ওই সময় তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনে পুতিনের অর্থনৈতিক দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গেও বৈঠক করেন উইটকফ।

ব্রাসেলসে সংবাদ সম্মেলনে উইটকফের এই সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী উমেরভের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি চান। এই সফরের অর্জন নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে তিনি শিগগিরই জানতে পারবেন বলে আশা করছেন।

এদিকে ইউক্রেনে সামরিক আইনের (মার্শাল ল) কার্যকারিতার মেয়াদ ৯ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। রাশিয়ার হামলার পরপরই দেশটিতে সামরিক আইন জারি করা হয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র জন য গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে হামলা চালিয়ে নেতানিয়াহু কি ট্রাম্পকে অবজ্ঞা করলেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বের বড় বড় সংঘাত থামিয়ে বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু সংঘর্ষ-রক্তপাত থামছেই না। গাজা, ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি তাঁর ক্ষমতার মেয়াদের পাঁচ মাস পার হতে না হতেই নতুন করে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়ে বসল।

আজ শুক্রবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল ইরানে একাধিক স্থানে বড় পরিসরে হামলা চালিয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ হামলা পুরো অঞ্চলকে বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এখন ট্রাম্পের শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘মধ্যস্থতাকারী’ হওয়ার স্বপ্ন ছারখার হওয়ার পথে।

ইরানের ওপর ইসরায়েলের এ হামলাকে ট্রাম্পের প্রতি একধরনের অবজ্ঞা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ, তিনি বারবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে অনুরোধ করেছিলেন যেন তাঁরা ইরানে হামলা না চালান। অবশ্য ট্রাম্প নিজেও পরমাণু আলোচনা ব্যর্থ হলে ইরানে হামলার হুমকি দিয়েছিলেন।

এ হামলা এখন একেবারে ভিন্ন মাত্রা পেল। এ রকম উত্তেজনা আগে কখনো দেখা যায়নি। নতুন এক বড় যুদ্ধের আশঙ্কা এখন অনেক বেশি বাস্তবচার্লস লিস্টার, মিডলইস্ট ইনস্টিটিউটের সিরিয়া ইনিশিয়েটিভের প্রধান

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ব্রেট ব্রুয়েন বলেন, ‘এ হামলার প্রথম শিকার হলো ট্রাম্পের কূটনীতি। শান্তি তো অনেক দূরের কথা, তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতিও আনতে পারেননি। ইরানের সঙ্গে আলোচনা ছিল সবচেয়ে এগিয়ে, নেতানিয়াহু সেটাও নষ্ট করে দিলেন।’

হোয়াইট হাউস, যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি দূতাবাস ও জাতিসংঘে ইরানের মিশন—তিন পক্ষই এসব বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

ট্রাম্পের বিশেষ দূতের অপমান

এ হামলা ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের জন্যও অপমানজনক। তিনি পরমাণু ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে কঠোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

উইটকফ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। ইরানের সঙ্গে আলোচনা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ট্রাম্পের কিছু ঘনিষ্ঠ মিত্রও স্বীকার করছেন, ইসরায়েলের হামলার আগেই ট্রাম্পের কূটনৈতিক চেষ্টা প্রায় ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল।

তবে দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে ট্রাম্প কিছুটা সাফল্য পেয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই উইটকফ ও বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি করান। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইসরায়েল সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও ট্রাম্পের প্রশাসন কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের আগে কিন্তু এই ট্রাম্প বলেছিলেন, অফিসে বসার আগেই তিনি যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন।

এ ছাড়া ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে করা আব্রাহাম চুক্তি সক্রিয় ও সম্প্রসারণে কোনো উদ্যোগ নেননি। ওই চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল।

সংঘাত আরও বাড়তে পারে

ট্রাম্প যখন শান্তি চুক্তি করতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন তাঁর প্রশাসনের মধ্যেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ, পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বহু কর্মকর্তা সরে গেছেন।

ইসরায়েলি হামলার আগেই অনেকে মনে করছিলেন, কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও উইটকফকে প্রধান আলোচক বানানো ট্রাম্প প্রশাসনের বড় ভুল ছিল।

ডেমোক্র্যাটরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ওবামার করা যুক্তরাষ্ট্র-ইরান-ইউরোপ চুক্তি বাতিল করেছিলেন। ট্রাম্প এখনো এর বিকল্প কিছু দিতে পারেননি।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মারফি বলেন, এই পরিস্থিতি ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর তৈরি। এখন পুরো অঞ্চল আরেকটি রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মুখোমুখি।

এ হামলা থেকে বড় ধরনের কোনো আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে কি না, তা এখনো কেউ নিশ্চিত নন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেহরান মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থগুলোকে হামলার ‘ন্যায়সংগত লক্ষ্যবস্তু’ হিসেবে দেখতে পারে। যেমন ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা আবার লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করতে পারে।

ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে স্থায়ী ক্ষতি করতে পারবে কি না, সেটাও স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে ইরানের ফোর্ডো সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা মাটির গভীরে অবস্থিত। ফলে সেটি ধ্বংস করা কঠিন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব স্থাপনায় আঘাত করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দরকার, যা এ হামলায় ছিল না।

আরেকটি অজানা বিষয় হলো তেহরান কতটা জোরালোভাবে ইসরায়েলি হামলার পাল্টা জবাব দিতে পারবে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে লক্ষ্য করেছে এবং এ অভিযান কয়েক দিন চলতে পারে।

সব মিলিয়ে এ পরিস্থিতি ট্রাম্পের ‘বিশ্বশান্তির মধ্যস্থতাকারী’ হয়ে ওঠার আশা পুরোপুরি শেষ করে দেবে, নাকি শুধু সাময়িক ধাক্কা, তা সময়ই বলে দেবে।

আরও পড়ুনমধ্যপ্রাচ্যে ‘বড় সংঘর্ষের শঙ্কা’ রয়েছে বলে ট্রাম্প সতর্ক করার পরই ইরানে ইসরায়েলের হামলা১ ঘণ্টা আগে

মিডলইস্ট ইনস্টিটিউটের সিরিয়া ইনিশিয়েটিভের প্রধান চার্লস লিস্টার বলেন, যদি ইসরায়েলের কথা সত্যি হয় যে আজকের হামলা ছিল ইরানের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরুর প্রথম ধাপ, তাহলে ইরানের শাসনব্যবস্থা এখন একেবারে অস্তিত্বসংকট এবং জীবন-মরণ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে।

চার্লস লিস্টার বলেন, ‘এ হামলা এখন একেবারে ভিন্ন মাত্রা পেল। এ রকম উত্তেজনা আগে কখনো দেখা যায়নি। নতুন এক বড় যুদ্ধের আশঙ্কা এখন অনেক বেশি বাস্তব।’

আরও পড়ুনসর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কায় দেশের চতুর্দিকে সেনা মোতায়েন করছে ইসরায়েল৫২ মিনিট আগেআরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু কী, কারা জড়িত, নিহত কারা ২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানে হামলা চালিয়ে নেতানিয়াহু কি ট্রাম্পকে অবজ্ঞা করলেন