ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য যাওয়ার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করেছে ভারত। গত ৮ এপ্রিল এই সুবিধা বাতিলের পর থেকে দুই দেশে বেশ আলোচনা–সমালোচনা চলছে। ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, করিডর—এসব সুবিধা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর সুফল পাওয়ার বড় উদাহরণ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো।

এবার দেখা যাক ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, করিডর—এসব সুবিধা কী ও কেন দেওয়া হয়। আর এসব সুবিধায় দেশগুলোর ওপর কী প্রভাব পড়ে।

ট্রানজিট

ট্রানজিট হলো একটি দেশ নিজেদের পণ্য ও যাত্রী অপর কোনো দেশের ভুখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে বা নিজের দেশের অপর একটি ভূখণ্ডে পরিবহন করার সুবিধা। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যেতে পারে। ধরা যাক, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিল বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ভারতের কলকাতা থেকে পণ্যবাহী একটি ট্রাক বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত হয়ে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় গেল—এটাই ট্রানজিট সুবিধা। একইভাবে ভারতের পণ্যের একটি চালান বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে মিয়ানমার গেল। সেটিও ট্রানজিট সুবিধা। এখানে ভারত তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট সুবিধা নিয়েছে।

এই ট্রানজিট সুবিধা শুধু স্থলপথে হবে, তা নয়। স্থল, নৌ ও আকাশপথ—বহুমাত্রিক ট্রানজিট হতে পারে। যেমন দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান নৌ প্রটোকলের আওতায় বাংলাদেশের নৌ ও স্থলপথ ব্যবহার করে ভারতের পণ্যের চালান আগরতলা যায়। এখানে কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে; পরে আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথে আখাউড়া হয়ে আগরতলা যায়।

সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া যে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে, সেটাও বহুমাত্রিক ট্রানজিট সুবিধা ছিল। বাংলাদেশ থেকে পণ্যের চালান স্থলপথে ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করে কলকাতা ও দিল্লির বিমানবন্দর পর্যন্ত যেত। তারপর আকাশপথে বাংলাদেশের পণ্যের চালান তৃতীয় কোনো দেশে চলে যেত।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত০৯ এপ্রিল ২০২৫ট্রান্সশিপমেন্ট

ট্রান্সশিপমেন্টও একধরনের ট্রানজিট সুবিধা। এটি ট্রানজিট ব্যবস্থার মধ্য থেকেই বাড়তি একধরনের সুবিধা।

ট্রানজিট সুবিধা নেওয়ার সময় পণ্যের চালানের জন্য যদি যানবাহন পরিবর্তন করা হয়, তাহলে একে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বলে। এটা হতে পারে সীমান্ত বা অন্য কোনো এলাকায় এক ট্রাক থেকে অন্য ট্রাকে পণ্য স্থানান্তর কিংবা জাহাজ থেকে ট্রাক বা ট্রেনে স্থানান্তর। মোটাদাগে পণ্যের চালানটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে যদি যানবাহন পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে একে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বলে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নৌ প্রটোকলের আওতায় ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট সুবিধায় পণ্যের চালান কলকাতা থেকে আগরতলা যেতে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে; পরে আশুগঞ্জ থেকে ট্রাকে করে আখাউড়া হয়ে আগরতলায় যায়। এখানে আশুগঞ্জে কার্গো জাহাজ থেকে ট্রাকে পণ্য ওঠানো হয়, এটি ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা।

আবার বাংলাদেশের পণ্যের চালান স্থলপথে ভারতের কলকাতা বা দিল্লি বিমানবন্দর গিয়ে আকাশপথে তৃতীয় দেশের গন্তব্যে গেছে। এখানে বিমানবন্দরে যানবাহন পরিবর্তন হয়েছে। এটিও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা।

এদিকে নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে পণ্য আমদানি রপ্তানি করতে ভারতের কাছে ট্রানজিট সুবিধা নেয়। এ ক্ষেত্রে তাদের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও নিতে হয়। কারণ, বাংলাদেশের পণ্যের চালান সীমান্তে গিয়ে ভারত, নেপাল বা ভুটানের ট্রাকে তুলে দিতে হয়। পরে সেই চালান ভারতের ভুখণ্ড দিয়ে চলে যায় নেপাল ও ভুটানে।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে ট্রানজিটের আওতায় ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নিতে হয় না। কারণ, ওই সব দেশে নির্দিষ্ট গন্তব্যে মালামাল পৌঁছাতে অপর দেশের ভুখণ্ড ব্যবহার করলেও যানবাহন পরিবর্তন করতে হয় না। পণ্যবাহী যান সরাসরি তৃতীয় দেশে চলে যায়।

আরও পড়ুনভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের সমস্যা হবে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা১০ এপ্রিল ২০২৫করিডর সুবিধা

ট্রানজিটের আওতায় একটি দেশ বা একাধিক দেশ যে সুবিধা নেয়, একে অনেক সময় করিডর সুবিধাও বলা হয়।

সাধারণত নানা অসুবিধার কারণে পণ্যের আসা–যাওয়া সহজ করতে যে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া হয়, এটাকে করিডর সুবিধা বলে। যেমন নেপাল ও ভুটান স্থলবেষ্টিত দেশ হওয়ায় নিকটবর্তী সমুদ্রবন্দর ব্যবহার বা তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য আনা–নেওয়া করতে ভারত ওই দুটি দেশকে করিডর সুবিধা দিয়েছে। এই সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য করছে নেপাল ও ভুটান।

অন্যদিকে ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য ভারতের মূল ভুখণ্ড থেকে কিছুটা অসুবিধাজনক অবস্থায় আছে। যেমন ত্রিপুরার আগরতলা থেকে কলকাতায় যেতে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আর কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে আগরতলায় যেতে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। বর্তমানে এই পথে ভারতকে যে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিচ্ছে, সেটাও একধরনের করিডর সুবিধা।

এ ছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে অবাধ পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের যে ‘বিবিআইএন’ চালুর আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে চলছে, সেটিও একধরনের করিডর সুবিধা।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল নিয়ে যা বলল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়০৯ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনইতিহাসের ভয়ংকর ট্যারিফ যুদ্ধে কে জিতবে, কে হারবে১০ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: একধরন র র আওত য হ র কর কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

সৌন্দর্য বাড়াতে বোটক্স করা কতটা ভালো

সৌন্দর্য ও তারুণ্য ধরে রাখতে এ দেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বোটক্স। মুখে বয়সের ছাপ কমিয়ে, মসৃণ ও প্রাণবন্ত চেহারা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই চিকিত্সাপদ্ধতি। বোটক্স শব্দটি এসেছে বটুলিনাম টক্সিন থেকে। এটি একধরনের প্রোটিন, যা ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি হয়।

বোটক্স প্রয়োগ করা হয় ইনজেকশনের মাধ্যমে। এটি বলিরেখা ছাড়াও অন্যান্য সূক্ষ্ম রেখা কমাতে সাহায্য করে। যে কারণে ত্বক দেখায় আরও তরুণ। এটি একটি নন-সার্জিক্যাল কসমেটিক পদ্ধতি, যা মুখের বিভিন্ন অংশে প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে আছে কপাল, চোখের চারপাশ ও ঠোঁটের আশপাশ। যদিও এটি একটি বিষাক্ত পদার্থ, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ও সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা হলে এটি নিরাপদ ও উপকারী।

বোটক্স যেভাবে কাজ করে

আমাদের মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি, যেমন হাসি, রাগ বা চিন্তার ফলে মাসল সংকোচন হয়। বারবার এ সংকোচনের ফলে ত্বকে ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে। বোটক্স ইনজেকশন মাংসপেশির ওই সংকোচনপ্রক্রিয়াকে সাময়িকভাবে শিথিল করে দেয়। এটি স্নায়ু ও মাসলের সংযোগস্থলে অ্যাসিটাইলকোলিন নামে একধরনের রিসিপ্টরকে ব্লক করে, ফলে স্নায়ু থেকে মাসলে সংকোচনের সংকেত পৌঁছায় না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মাসল শিথিল থাকে আর ওই জায়গার বলিরেখা কমে যায় বা সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়। ত্বক দেখায় মসৃণ।

সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বোটক্স

কপালে বলিরেখা দূর করে।

চোখের পাশের কুঁচকে যাওয়া বা ক্রস ফিট কমায়।

ভ্রুর মাঝের ভাঁজ কমায়।

ঠোঁটের পাশের রেখা ও চোয়ালের অংশকে সুগঠিত করে।

কিছু ক্ষেত্রে ঘাম কমাতেও সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঅ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজি কি খুব ব্যয়বহুল?২১ আগস্ট ২০২৪চিকিত্সায় ব্যবহার

বোটক্স দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে।

চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া বা চোখের পাতার খিঁচুনি কমাতে বোটক্স ব্যবহার করা হয়।

এ ছাড়া প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, অতিরিক্ত লালা ঝরার মতো অসুখেও বোটক্স ব্যবহার করা হয়।

প্রভাব ও স্থায়িত্ব

বোটক্স প্রয়োগের প্রভাব সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে দেখা যায়। এটি তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এরপর আবার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে।

সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বোটক্স নিরাপদ, তবু এটি প্রয়োগের পর কিছু সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন হালকা ব্যথা, ফোলা ভাব, মাথাব্যথা বা ইনজেকশনের স্থানে অস্বস্তি। তাই অবশ্যই এটি প্রশিক্ষিত চিকিত্সকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে করা উচিত।

বয়সের ছাপ লুকিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে বা সৌন্দর্য বাড়াতে বিশ্বজুড়ে বোটক্স এখন একটি জনপ্রিয় ও কার্যকর উপায়। তবে মনে রাখা উচিত, সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক নয়, আত্মবিশ্বাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান।

আরও পড়ুনডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, ওজন ও ইউরিক অ্যাসিড কমানোসহ কত গুণ চিচিঙ্গার ২২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৌন্দর্য বাড়াতে বোটক্স করা কতটা ভালো