‘তিনি আন্তর্জাতিক মানের আম্পায়ার হলে, আমিও আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়’
Published: 13th, April 2025 GMT
‘অধিনায়ক, সতীর্থ, প্রতিপক্ষ এবং আম্পায়ারদের কর্তৃত্বকে সম্মান কর। স্বচ্ছতার সঙ্গে খেল। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নাও।’ –ক্রিকেটারদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের কোড অব কন্ডাক্টের অন্যতম অংশ এগুলো। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান। সাকিব আল হাসানের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটারও বিশ্ব নিন্দনীয় কাজ করতে পেরেছিলেন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে। ২০২১ সালে লাথি মেরে ভেঙে ছিলেন স্টাম্প। বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠার পরও মাত্র চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল মোহামেডানের সাবেক অধিনায়ককে।
ক্রিকেট মাঠের অগ্রজ নেতিবাচক যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, অনুজরা তাই অনুসরণ করছেন। আম্পায়ারদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এবারও আলোচনায় মোহামেডানের অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয়। আন্তর্জাতিক এ ক্রিকেটার ঘরোয়া ক্রিকেটে আইসিসির এলিট আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদি হয়েছেন। বিশ্বের কাছে নন্দিত এ আম্পায়ারকে নীতিজ্ঞান দিতেও ছাড়েননি। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হচ্ছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও মোহামেডানের অধিনায়ক হৃদয়। গতকাল শুনানি শেষে এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা সুপারিশ করেন ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশীদ রাহুল।
শাস্তির শুনানিতে গিয়েও হৃদয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ রেফারির রাহুলের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন বলে অভিযোগ। শাস্তির ধারা দেওয়া হলে রাহুলকে পড়ে শোনাতে বলেন তিনি। ম্যাচ রেফারি আপত্তি জানালে, মোহামেডানের ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন শিপন পড়ে শোনান। আংশিক চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে শাস্তি মেনে নেন হৃদয়। যদিও মোহামেডান চেষ্টা করছে এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার। বিসিবি আম্পায়ার্স বিভাগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে মোহামেডানের ম্যানেজার সাজ্জাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘যা ঘটেছে তাতে মোহামেডান অধিনায়ককে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা যায় না। অধিনায়ক নিয়মের ভেতরে থেকে প্রতিবাদ করতে পারেন।’
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে আম্পায়াররা এমন কী করেছিলেন যে ক্রিকেটারদের বিতণ্ডায় জড়াতে হলো। আবাহনীর ব্যাটার মোহাম্মদ মিঠুনের এলবিডব্লিউ চাওয়া হলে প্রত্যাখ্যান করেন আন্তর্জাতিক আম্পায়ার তানভির আহমেদ। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে বিতণ্ডায় জড়ান বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। আম্পায়ার সৈকত প্রতিবাদ জানালে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান অধিনায়ক হৃদয়। আবাহনীর আরেক ব্যাটার পারভেজ হোসেন ইমনকে এলবিডব্লিউ না দেওয়ায় দ্বিতীয়বার প্রতিবাদী হয় মোহামেডান।
এই দুই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ফিল্ড আম্পায়াররা রিপোর্ট ফাইল করেন। ম্যাচ রেফারি রাহুল এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার সুপারিশ করেছিলেন। মোহামেডান ম্যানেজার সাজ্জাদের অনুরোধে জরিমানা বাদ দেওয়া হলেও এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ বহাল রয়েছে।
মোহামেডান অধিনায়ক হৃদয় যে আম্পায়ার সৈকতের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন তা প্রকাশ পেল ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে, ‘আমি যদি ভুল করি স্বীকার করব। ভুলটা স্বীকার না করে আপনি যদি মনে করেন এটা ভুল না, তাহলে হয় না। আমরা তাঁকে সম্মান করি, তিনি আন্তর্জাতিক আম্পায়ার, আমরাও আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়। আজকে যারা খেলেছে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়। এরকম বড় ম্যাচে একটা দুইটা ভুল সিদ্ধান্ত অনেক কিছু বড় একটা ব্যবধান তৈরি করে দিতে পারে। এটা যদি অন্যদিকে যায় তাহলে অবশ্যই আমি মুখ খুলব।’
আন্তর্জাতিক ম্যাচেও আম্পায়ারদের সঙ্গে অনুরূপ আচরণ করেন কিনা জানতে চাওয়া হলে হৃদয় বলেন, ‘শুধু খেলোয়াড়ের ওপর দোষ দিলে হবে না। আপনারা দেখেন আমাদের আম্পায়ারিং বিভাগের এক-দুইজন ছাড়া যে খুব ভালো করে এ রকম না। যখন জাস্টিফাই করবেন তখন আমার মনে হয় দুই দিক থেকে জাস্টিফাই করা উচিত।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড প এল আম প য় র র স দ ধ ন ত এক ম য চ ন ষ ধ জ ঞ
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি