অভিবাসীদের নিবন্ধন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন আইনের প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 13th, April 2025 GMT
অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি কোনো নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের বেশি থাকলে তাঁদের কেন্দ্রীয় সরকারে নিবন্ধন করতে হবে। অন্যথায় শাস্তি ভোগ করতে হবে। দেশটিতে অবস্থান করা নথিবিহীন অভিবাসী, মার্কিন ভিসাধারী, বৈধ স্থায়ী বসবাসকারী এবং নথিপত্র ছাড়া যাঁরা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন, তাঁদের সবাই এই নিয়মের আওতায় পড়বেন।
১১ এপ্রিল থেকে এই নিয়ম কার্যকর হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, কিন্তু দেশটিতে অবস্থান করছেন, তাঁদের সব সময় নিবন্ধনের প্রমাণ সঙ্গে রাখতে হবে। ১১ তারিখের পর যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন, তাঁদের ৩০ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। শিশুদের বয়স ১৪ বছর হলে তাদেরও আবার নিবন্ধন করার প্রয়োজন পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘এলিয়েন রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট’-এর ভিত্তিতে এই নিয়ম করা হয়েছে। ওই আইন প্রথম কার্যকর হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ২০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসার পর ‘দখলদারি থেকে মার্কিন জনগণের সুরক্ষা’ শিরোনামে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর আবার পুরোনো নিয়মটি কার্যকর করে মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তর (ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি)।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, নিবন্ধনের এই নতুন নিয়ম না মানলে তা অপরাধযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এর শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ড, জরিমানা বা দুটি শাস্তিই দেওয়া হতে পারে। আর যাঁরা বৈধভাবে দেশটিতে স্থায়ী বসবাস করছেন, তাঁরা ঠিকানা পরিবর্তন করলে ১০ দিনের মধ্যে জানাতে হবে বলে গত শনিবার উল্লেখ করেছে স্বরাষ্ট্র দপ্তর।
যে শাস্তি হতে পারেবিদেশি নাগরিকেরা নতুন অভিবাসন নিয়ম না মানলে কী শাস্তি হতে পারে, তা তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেউ যদি স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের চূড়ান্ত নির্দেশ পাওয়ার পর প্রতিদিনের জন্য ৯৯৮ ডলার করে জরিমানা দিতে হবে।
আর যদি কোনো বিদেশি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করবেন—এমন ঘোষণা দেওয়ার পরও তা না করেন, তাহলে তাঁকে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ না করলে কারাদণ্ডের সাজাও দেওয়া হতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে অভিবাসনের ক্ষেত্রে তাঁদের আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে পারে মার্কিন সরকার।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসার আগেই নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রকে অবৈধ অভিবাসীমুক্ত করা। ক্ষমতায় বসার পরপর এ-সংক্রান্ত একাধিক নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ধরপাকড় শুরু হয়। এমনকি এই অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে মানবেতরভাবে নিজ দেশে পাঠানোর ঘটনাও ঘটে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টা শুল্ক কার্যকরে নতুন সময়সূচি ঘোষণা ট্রাম্পের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার সময়সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৭ আগস্ট থেকে তা কার্যকর হবে।
এর আগে ট্রাম্প ১ আগস্টের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। তখন তিনি বলে দিয়েছিলেন, এ সময়ের মধ্যে চুক্তিতে না পৌঁছালে চড়া শুল্ক আরোপ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন নির্বাহী আদেশে ৭০টির বেশি দেশের ওপর নতুন পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করেছেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেগুলো আগামী সাত দিনের মধ্যে কার্যকর হবে।
যেসব পণ্য ৭ আগস্টের মধ্যে জাহাজে তোলা হবে বা বর্তমানে যাত্রাপথে রয়েছে এবং সেগুলো যদি ৫ অক্টোবরের আগে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে যায়, তবে সেগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।
অবশ্য কানাডার ওপর যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক ১ আগস্ট অর্থাৎ আজ থেকেই কার্যকর হচ্ছে।
আরও পড়ুনকোন দেশে কত শুল্ক বসালেন ট্রাম্প৪ ঘণ্টা আগেউত্তর আমেরিকার এই দুই প্রতিবেশী দেশ একে অপরের অন্যতম বড় বাণিজ্য সহযোগী হলেও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে অস্বস্তিকর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
কানাডা যেসব পণ্য রপ্তানি করে, তার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। ধাতব পদার্থ ও কাঠের পাশাপাশি কানাডা বিপুল পরিমাণে তেল, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, খাদ্যপণ্য এবং ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যারা বাণিজ্য চুক্তি করেনি, তাদের জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে: ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগেডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে আর কোনো চুক্তির সুযোগ নেই।