বর্ষার সময় বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাছ ধরা হলেও অল্প পানিতে দলবদ্ধ হয়ে মাছ শিকার কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের নলি বিল এলাকায় এক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। গত শুক্রবার এই বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় মাছ ধরার এক ব্যতিক্রমী আয়োজন।

সকালের আলো ফুটতেই স্থানীয় শত শত মানুষ ঠেলা জাল, টেঁটা, ঝাঁকি জালসহ নানা উপকরণ নিয়ে নেমে পড়েন বিলে। কেউ আবার কাদাপানিতে হাত ডুবিয়ে ধরেন দেশি প্রজাতির মাছ। আশপাশের গ্রাম ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে অনেকে এসে যোগ দেন এ আয়োজনে। দেশি প্রজাতির মাছের চাহিদা বেশি থাকায় নলি বিলে মাছ শিকারে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

সরেজমিনে দেখা যায়, উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে হাঁটুসমান পানিতে নানা বয়সী মানুষ দেশি প্রজাতির মাছ ধরছেন। নানা রকমের জাল ছাড়াও অনেকে কাদাপানিতে হাতড়ে ধরেন দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করেও সবার মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ। এ সময় শিকারিদের অনেকেই বলেন, গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে উৎসবের আগেই মাছ ধরে নিয়েছেন বিলের ইজারাদাররা। সে জন্য ছোট মাছ মিললেও বড় মাছ তেমন পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ মিয়া বলেন, ‘নলি বিলে মাছ ধরার দিনটি এখন আমাদের এলাকার মানুষের কাছে এক উৎসবে পরিণত হয়েছে।’ মাছ ধরতে আসা ফজলু মিয়া জানান, লোকমুখে খবর পেয়ে সকালে ঝাঁকি জাল নিয়ে চলে আসেন বিলে। দুপুর পর্যন্ত মাছ ধরলেও বড় মাছ তেমন পাননি। তবে এতে তাঁর কোনো আফসোস নেই, বরং এমন ঐতিহ্যে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত।

নেত্রকোনা থেকে ধান কাটতে আসা আবুল কাশেমও শখের বসে মাছ ধরায় অংশ নেন। তিনি বলেন, এত মানুষের একসঙ্গে মাছ শিকার দেখে শখের বসে তিনিও ধান কাটা রেখে মাছ শিকারে নেমে পড়েন। কয়েকটি তাজা বাইন মাছ ধরেছেন। পার্শ্ববর্তী খয়রত গ্রামের আবদুল হাই নামের আরেকজন বলেন, একসঙ্গে মাছ শিকারে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। কয়েক গ্রামের শৌখিন মাছশিকারিরা একসঙ্গে মাছ শিকার করেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বকুলতলায় বৃষ্টির সুর

নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক 
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • তদন্ত প্রতিবেদন দিতে এক মাস সময় বাড়ালেন ট্রাইব্যুনাল
  • কেন এবার একসঙ্গে পেকে যাচ্ছে ক্ষিরশাপাতি, আম্রপালি, ল্যাংড়া
  • শরীরের পাঁচ থেকে সাতটি অঙ্গ একসঙ্গে ব্যথা হয় যে কারণে
  • বাবাকে একটি সুন্দর দিন উপহার দিতে যা যা করতে পারেন
  • ফেনীতে একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দিলেন গৃহবধূ 
  • আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
  • এবার বাগ্‌দানের কথা নিজেই জানালেন ডুয়া
  • দেশের ক্রিকেট নিয়ে সাকিবের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে মিরাজের
  • নিজের সিনেমা দেখারও টিকিট পাননি জয়া আহসান