৫৩ বছরেও দেশে সুষ্ঠু বিচার ও আইনের শাসন গড়ে ওঠেনি: আবুল কাসেম ফজলুল হক
Published: 20th, April 2025 GMT
বাংলা একাডেমির সভাপতি ও সমাজচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, ‘গত ৫৩ বছরেও বাংলাদেশে সুষ্ঠু বিচার ও আইনের শাসন গড়ে ওঠেনি। এই সুযোগ নিয়ে বিদেশিরা আমাদের দেশে এসে তাচ্ছিল্যের সুরে কথা বলেন।’
এই সমাজচিন্তক বলেন, ‘দেশে নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন এবং হানাহানির বর্তমান চিত্র একটি ভয়ংকর অসভ্যতার লক্ষণ। এই অনাচার নিয়ন্ত্রণের গুরুদায়িত্ব রয়েছে সরকার এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলোর। এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
আগামীর বাংলাদেশে বিদেশি শক্তিগুলো যাতে কোনো খবরদারি করতে না পারেন, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক স্ট্যান্ডার্ড (মান) ঠিক হলে এসব সমস্যা সমাধান করা যায়। সেই মান কীভাবে ঠিক হবে, সেটা আমাদের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে।
সম্মিলিত বাংলাদেশ পরিষদ (সবাপ) নামে একটি মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার রাজধানীর বিএমএ ভবনের শহীদ ডা.
নতুন বাংলাদেশে সংকট কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা উল্লেখ করে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সতর্কতাভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, এমন নীতি দিয়ে বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে না।’
দেশ ও রাষ্ট্র এক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ। এটা মানুষের তৈরি। আর দেশ হলো প্রকৃতির সৃষ্টি। কোনো রাষ্ট্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে পারে না। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট কাঠামোতে প্রবেশের মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজপথের মানুষগুলোর সঙ্গে উপদেষ্টাদের থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। আমি মনে করতে পারছি না, তাঁদের সঙ্গে আদৌও আমার একসঙ্গে কোনো আন্দোলনের স্মৃতি ছিল। এই দূরত্বকে গুছিয়ে সামনে এগোতে হবে।’
৫ আগস্টের আগে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেউ ভাবতে পারেনি উল্লেখ করে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘এখন আমাদের স্বপ্ন আবারও হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া মানুষগুলো এখন তাচ্ছিল্যের শিকার। আমি চাই, রাষ্ট্র আর জনগণ একাকার হয়ে যাক।’
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা সংস্কারের কোনো পরিকল্পনা নেই অভিযোগ করে এই মুখপাত্র বলেন, ‘সরকার এখনো শিক্ষা সংস্কার কমিশন করেনি। আমি আশা করব, একটি সম্মিলিত বাংলাদেশ গড়তে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। আমাদের গণ-আকাঙ্ক্ষা পূরণে জোর দিতে হবে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ জাবিরের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান না ঘটলে ২০২৮ সাল পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক পক্ষ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করতে পারতেন না।’
‘গণ-অভ্যুত্থান ইউনূস সরকারের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করেছে। কাজেই তাঁরা সংস্কারের জন্য উপযুক্ত। খুনের দায়ে শুধু ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করলেই হবে না। আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাও সংস্কারের অংশ।’
আলোচনায় সরকারের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকারের কাঠামো ও আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার দাবি জানান অঞ্চল ও নগর পরিকল্পনাবিদ খন্দকার নিয়াজ রহমান।
সংবিধান ও আইনের সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে নিয়াজ রহমান বলেন, ‘আমরা যেকোনো পরিবর্তনের জন্য তাড়াহুড়ো করি৷ কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান কয়েক দিনের ধারাবাহিকতা। কিন্তু এটাকে যদি বিপ্লবে পরিণত করতে চাই তাহলে আমাদের সংস্কারের জন্য কাজ করতে হবে। সংস্কারের মধ্যে দিয়ে বিপ্লব কত দিনে অর্জন হবে হবে সেটা আপেক্ষিক। নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারবে না।
গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী প্রতিনিধি উশ্যেপ্রু মারমা, সবাপের সদস্য লুতফর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়াত উল্লাহ, পরিবেশ কর্মী মনোয়ারা, এবিএম মাহমুদুল হক, সবাপের সদস্য সাকিব বিন আলম, হাসান ইমতিয়াজ প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন য় সরক র র আম দ র ও আইন রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদিন কেন মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে
মৃত্যু জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য, যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য নির্ধারিত। ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
মৃত্যুর স্মরণ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পার্থিব লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে।
মৃত্যু: মুমিনের জন্য স্বস্তিপৃথিবী একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নানা দুঃখ-কষ্ট, অভাব, প্রিয়জনের মৃত্যু, দারিদ্র্য ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মুসলিমদের জন্য এ পরীক্ষা হলো আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে জীবন যাপন করা।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(আল্লাহ) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, তোমাদের মধ্যে কে উত্তম কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)
আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭মৃত্যু মুমিনের জন্য একটি স্বস্তি। এটি পার্থিব পরীক্ষা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমতের আলিঙ্গনে নিয়ে যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে স্বস্তি পায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫০৭)।
এমনকি নবীজি (সা.)-এর জীবনেও এ সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে মৃত্যু বিলম্বিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনমৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই১৮ মার্চ ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণ করার গুরুত্বমৃত্যু স্মরণ একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। যখন আমরা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু দেখি, তখন পার্থিব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হয়। আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হৃদয় মরিচার মতো মলিন হয়।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘কীভাবে তা পরিষ্কার করা যায়?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যু স্মরণ ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।’ (নাহজুল ফাসাহা)।
এ ছাড়া তিনি বলেছেন, ‘আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭)
হজরত আলী (রা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রায়ই মৃত্যুকে স্মরণ করে, সে অল্প সম্পদেও সন্তুষ্ট থাকে। সে কখনো লোভী বা কৃপণ হয় না।’ (বিহারুল আনওয়ার)
মৃত্যুর জন্য কী কামনা করা যায়ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই কোনো বিপদ বা কষ্টের কারণে মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)।
তবে শহীদ হওয়ার জন্য দোয়া করা, অর্থাৎ আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণের জন্য প্রার্থনা করা ইসলামে অনুমোদিত।
ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। মৃত্যু মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ।মৃত্যুই শেষ কথা নয়ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। এটি ভয় বা দুঃখের বিষয় হলেও মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ। মৃত্যু স্মরণ ও এর জন্য প্রস্তুতি আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে।
বিপদে পড়লে মৃত্যু স্মরণের দোয়া আমাদের ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে সাহায্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা বিপদে পড়ে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাব।)’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)
এ আয়াত মৃত্যুর সংবাদ শোনার সময়ও পাঠ করা হয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তিনি আমাদের সামর্থ্যের বাইরে পরীক্ষা দেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।
প্রতিটি বিপদের মধ্যে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ বিপদ ক্ষণস্থায়ী। কারণ, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।
আরও পড়ুনসন্তান জন্মের আগে মৃত্যু কামনা করেন নবীর মা৩১ মে ২০২৫কয়েকটি দোয়ামৃত্যু ভাবাপন্ন বিপদ হলে: কঠিন বিপদের সময় পাঠ করা যায়, তা হলো নবীজি (সা.)-এর শেখানো: ‘হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)
মৃত্যু নিকটবর্তী হলে: মৃত্যুর সময় শুধু আল্লাহই জানেন। তবে আমরা বা আমাদের প্রিয়জন মৃত্যুর কাছাকাছি থাকি এবং ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করি, তবে এই দোয়া পাঠ করা যায়: ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট থেকে আমাকে সাহায্য করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৭৮)।
নবীজি (সা.) নিজেও তাঁর মৃত্যুর সময় এই দোয়া পাঠ করেছিলেন।
হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১সহজ মৃত্যুর জন্য দোয়া: নবীজি (সা.) একটি দীর্ঘ দোয়ার শেষে বলেছেন, ‘এবং আমার মৃত্যুকে আমার জন্য স্বস্তির উৎস করো, যা আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৮)
এখানে সহজ মৃত্যু বলতে পার্থিব অর্থে আরামদায়ক মৃত্যু (যেমন ঘুমের মধ্যে মৃত্যু) বোঝায় না; বরং এটি বোঝায় মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন থেকে শুরু করে পরকালে স্থানান্তর পর্যন্ত একটি সহজ প্রক্রিয়া।
মৃত্যুর কঠিন পরীক্ষা থেকে আশ্রয়: একটি দোয়ায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, কাপুরুষতা, অক্ষমতা এবং জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৯১)
মৃত্যুর সময় শয়তান থেকে বাঁচতে: নবীজি (সা.) এ–সময় দোয়া করেছেন, ‘আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি যেন শয়তান আমার মৃত্যুর সময় আমাকে ক্ষতি করতে না পারে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)
ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। নিয়মিত মৃত্যু স্মরণ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে এবং আমাদের ভালো কাজের পথে রাখে।
আরও পড়ুনমৃত্যু কি শেষ, মৃত্যু আসলে কী৩১ জুলাই ২০২৩