কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন, অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা
Published: 22nd, April 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের ১৮ ঘণ্টা পার হয়েছে। অনশনরত ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা।
এক শিক্ষার্থী সোমবার (২১ এপ্রিল) রাতে অসুস্থ হয়ে অনশন থেকে সরে যান। অসুস্থতার আশঙ্কায় অন্য এক শিক্ষার্থীকে অনশন থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছেন তার অভিভাবক।
এদিকে, ছাত্রদের অনশন ভাঙাতে তৎপর হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তর। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা।
সোমবার (২১ এপ্রিল) পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ৩২ জন আমরণ অনশন শুরু করেন। বিকেল ৩টায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দার পূর্বদিকে অবস্থান নেন। এরপর সেখানে বিভিন্ন বিভাগের ৩২ জন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন শুরু করেন। বাকি শিক্ষার্থীরা অনশনরত শিক্ষার্থীদের চারদিকে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে উৎসাহ দেন।
অনশনরত সিই বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো.
তিনি বলেন, “আমরা ইন্টেরিম সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি, তারা কখন আমাদের দিকে তাকাবে? আমাদের কুয়েটে দুই মাস ধরে যতটুকু আন্দোলন হয়েছে, শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আমরা রেল ব্লকেড বা রাস্তা ব্লকেড করিনি? এমনকি আমরা যখন প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করতে গেছি, তখন পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছিলাম। শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থাকার জন্যই কি ইন্টেরিম আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না?”
রাহাতুল ইসলাম আরো বলেন, “আমাদের দমানোর জন্য মামলা করা হয়েছে। এমনকি আমাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারের পরে আবার নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আমাদেরকে দমানো যায়। শুধু এই তদন্ত কমিটি নয়, আবার শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছিল, যাতে আমরা দাবি আদায়ের জন্য বসতে না পারি। এত হামলা-মামলার পরে আর দাবি থেকে ফেরত যেতে চাই না।”
আইইএম বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী উপল বলেন, “আন্দোলন তো চলছে দুই মাস ধরে। ৬ দফার যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমরা আন্দোলন শুরু করছিলাম। কিন্তু, সেটা মানা হয়নি। এর পর আমরা ভিসিকে বর্জন করি। আমরা ঢাকায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের স্মারকলিপি দিয়ে আসি এ কারণে যে, ইন্টেরিম আমাদের দিকে তাকাবে। কিন্তু, দুই মাস হয়ে গেল ইন্টেরিম আমাদের দিকে তাকায়নি।”
তিনি বলেন, “আমরা মামলা খাইছি, কোপ খাইছি, গুলি খাইছি, আমরা আহত হইছি। আমরা চাইছি, আমাদের বিচার করে দেন। ওইটা ছিল আমাদের ন্যায্য দাবি। কিন্তু, সেটা মানা হয়নি। এর পর আন্দোলনরত ৩০ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হলো। এর পর হল খুলে দিয়ে আমরা সমস্যার সমাধান করতে চাইলাম। কারণ, আমাদের ক্লাসে ফিরতে হবে। তখন আমাদের নামে মামলা দেওয়া হলো। আমাদের ২৪ ঘণ্টা খোলা আকাশের নিচে রাখা হলো। ৩০ জনকে বহিষ্কারের পর আলাদা একটা তদন্ত কমিটি করা হলো, যাতে কেউ আন্দোলন করতে না আসে। আন্দোলনকারীদের ভয় দেখানো হলো, বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হলো। এত কিছুর পর আমরা এক দফায় এসেছি।”
শিক্ষকদের আলোচনার প্রস্তাব সম্পর্কে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ তৌফিক আহমেদ বলেন, “আলোচনার সময় এখন আর নেই। আমরা স্যারদের সঙ্গে বসার অনেক চেষ্টা করেছি। আমরা বলেছি, সমঝোতার সুযোগ আছে, হলগুলো খুলে দিন। তাহলে হয়ত তখন সমঝোতা হয়ে যেত। আর যে পাঁচটা দাবি, অন্তত এই পাঁচটা দাবি যদি মানত। আজকে তারা আমাদের সাথে বসছেন, এই বসাটা আরো আগে বসলে সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু, এখন যখন আমরা হার্ড লাইনে চলে এসেছি, এখন আর কথা বলার সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “যতদিন আমাদের এ দাবি আদায় না হবে, যত ক্ষতি হোক, আমরা এখানে আমারণ অনশন করব।”
সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক, সহকারী পরিচালক, ডেপুটি পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক অনশনরত শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিতে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় আসেন। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের আবারও অনুরোধ করেন অনশন থেকে সরে এসে আলোচনায় বসার জন্য। তারা এ সময় শিক্ষার্থীদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে অর্ধশতাধিক শিক্ষক সোমবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের আমরণ কর্মসূচি থেকে সরে এসে আলোচনায় বসার চেষ্টা চালান। সকালে তারা কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। অনেক চেষ্টা চালিয়েও শিক্ষার্থীদেরকে নমনীয় করতে না পেরে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালকসহ শিক্ষকরা সেখান থেকে চলে যান। কিন্তু, অনশনরত শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনড় থাকে।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের এক দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে অনশন থেকে সরব না। প্রয়োজন হলে এখানেই মৃত্যু হবে আমাদের।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অনশনরত শ ক ষ র থ আম দ র দ ক র পদত য গ অনশন থ ক ইন ট র ম ন আম দ র অবস থ ন স মব র র র পর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে: উপদেষ্টা আসিফ
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চাকরি প্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীদের অনশন তীব্র আন্দোলনের মুখে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার মধ্যস্থতায় পিএসসি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। তবে দেশের একটি গণমধ্যমের প্রতিবেদনে পিএসসির এমন সিদ্ধান্তে ‘উপদেষ্টা আসিফের বলপ্রয়োগ রয়েছে’ বলে অভিযোগ করা হয়।
এ অভিযোগের বিষয়ে এবার নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ওই রিপোর্টে আমার বিরুদ্ধে পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। তারপর সেটাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে টার্গেটেড প্রোপাগান্ডা।
মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাসে তিনি একথা বলেন।
ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা বলেন, পিএসসি সংস্কারের দাবিতে প্রায় ৮০ ঘণ্টা অনশন করে চার জন চাকরিপ্রার্থী ঝুকিপূর্ণ শারীরিক অবস্থায় পৌঁছালে পিএসসি এবং তাদের মধ্যে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিই। রাজু ভাস্কর্যে বসেও বারবার বলেছি- পিএসসি সাংবিধানিক, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। আমি পিএসসি এবং আপনাদের মধ্যে ব্রিজ হতে পারি, সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই’। প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি সুরাহা না করে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন আন্দোলনকারীরা।
তিনি বলেন, পিএসসি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে রাজুতে বসেই ফোনে কথা বলেছি। পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম স্যার তিনজন সদস্য পাঠান আলোচনার জন্য। টিএসসিতে সাংবাদিক সমিতির অফিসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এবং পিএসসির সদস্যদের মধ্যকার দীর্ঘ আলোচনার পর পিএসসি লিখিত পরীক্ষা আপাত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তা ঘোষণা করেন পিএসসির একজন সদস্য। এই প্রক্রিয়ার কোনো অংশেই পিএসসিকে আমি কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি। পিএসসি এবং ছাত্রদের মধ্যে ব্রিজ হিসেবে সমস্যার সমাধান করাই ছিল আমার লক্ষ্য। তাছাড়া অনশনরত চাকরি প্রার্থীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছিল দ্রুত।
ওই রিপোর্ট প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, রিপোর্টে আমার বিরুদ্ধে পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। তারপর সেটাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে টার্গেটেড প্রোপাগান্ডা। গণ-অভ্যুত্থানের একজন ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে দায়িত্ব পালন করছি। ফলে শিক্ষার্থীদের যেকোনও যৌক্তিক দাবি কিংবা সমস্যায় এগিয়ে যাওয়াটা আমার দায়িত্ব। আমি সে দায়িত্ব পালন করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো।