বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অতীতের বিভিন্ন সময়ের ছবি প্রদর্শনী করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুধবার বেলা দেড়টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। 

এর আগে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে ‘জয় বাংলা’ গান বাজিয়ে শিক্ষকদের ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা হয়। একইসঙ্গে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনকে সিন্ডিকেটে পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়। 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধ্যাপক মুহসিন উদ্দিনের মতো একজন সম্মানিত শিক্ষককে অপমান করেছেন উপাচার্য ড.

শুচিতা শারমিন। তাঁকে বেআইনিভাবে সিন্ডিকেট থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। অধ্যাপক মুহসিনকে পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম ভোলার মনপুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। অবসরে যাওযার পরও তাঁকে নিয়মবহির্ভূতভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে পুনরায় দায়িত্বে রাখা হয়েছে, যা প্রশাসনিক স্বচ্ছতার পরিপন্থি। তাঁকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে।

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, জুলাই আন্দোলনের সময় যারা গণহত্যার সমর্থন করেছিলেন এবং প্রশাসনের চাটুকারিতায় লিপ্ত ছিলেন, এমন বহু শিক্ষক-কর্মচারী এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন। উপাচার্য পুনরায় তাদের প্রশাসনে পুনর্বাসন করছেন। এসব শিক্ষক-কর্মচারীকে প্রশাসনিক ও লাভজনক সব কমিটি থেকে সরিয়ে দিতে হবে। 

শিক্ষার্থী রাকিন খান বলেন, ‘আমরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে কোনো ফ্যাসিবাদের দোসর দেখতে চাই না। আমাদের দাবি মানা না হলে  সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

গত মঙ্গলবার থেকে ৪ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো– ড. মুহসিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা, অপমানজনক অপবাদ প্রত্যাহার করে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের পদে পুনর্বহাল, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামকে অপসারণ, ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের লাভজনক কমিটি থেকে অপসারণ এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু নাঈমের পাশে ইবি ক্রিকেট ক্লাব

শিক্ষা বঞ্চিত ৬ বছর বয়সী ছোট্ট নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করে পাশে দাঁড়িয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্রিকেট ক্লাব। তাকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করে দেয় সংগঠনটি। 

জানা যায়, নাঈমের বাবা অন্তর দ্বিতীয় বিয়ে করে অনত্র চলে যান। নাইমের মা নুপুর গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

নাইমকে লালন-পালন করছেন তার নানী হাজেরা খাতুন। তিনি ক্যাম্পাসের একটা দোকানে কাজ করে জীবিকানির্বাহ করছেন।

আরো পড়ুন:

তরুণদের শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে: জবি উপাচার্য

শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার

বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষ থেকে সংগঠনটির সভাপতি শেখ সাকলাইন ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা সুশিক্ষার উদ্দেশ্যে নাঈমকে স্কুলে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন।

পরে নাঈমকে ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করে সংগঠনটি। এছাড়া নাঈমের পড়াশোনার জন্য আনুষঙ্গিক বই, পোশাক এবং ১ মাসের অগ্রিম বেতন প্রদান করা হয়।

নাঈমের নানী হাজেরা খাতুন বলেন, “অর্থের অভাবে নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছিলাম না। পরে ক্যাম্পাসের এই মামাদের জানালে তারা আমাকে আশ্বস্ত করেন এবং নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। এতে আমি খুশি। আমি চাই নাঈম ঠিকমতো পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হোক।”

ছোট্ট নাঈম জানায়, বড় ভাইয়েরা তাকে স্কুলে ভর্তি করাইছে। এতে সে অনেক খুশি। সে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে চায়।

ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, তাদের প্রতি সমাজের অনেক প্রত্যাশা থাকে শুধু জ্ঞানে নয়, মানবিকতাও। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের ক্লাব একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এক অসহায় ও দরিদ্র শিশুর শিক্ষা জীবনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য তাকে কেবল একটি শিক্ষার সুযোগ দেওয়া নয়, বরং একটি সম্মানজনক জীবনের পথে এগিয়ে নেওয়া। আমরা বিশ্বাস করি, সমাজের প্রতিটি শিশুরই সম্ভাবনা আছে ভালো কিছু করার, শুধু দরকার একটি সুযোগ। আর সেই সুযোগটা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। এটা শুধু একটি শিশুর গল্প নয়, এটা আমাদের ক্লাবের ভবিষ্যতের গল্প।”

ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি শেখ সাকলাইন বলেন, “ইবি ক্যাম্পাসে ক্রিকেটারদের খুব আদরের নাঈম। ছোট থেকেই সে তার নানীর কাছে থাকে। তার নানী আমাদের ক্যাম্পাসে একটা দোকানে কাজ করে। আমরা ইবি ক্রিকেট ক্লাব যখন মাঠে খেলি, তখন ছোট নাঈম আমাদের দেখলেই ছুটে আসে। আমরা আদর করে তাকে অনেক কিছু কিনে দেই।”

তিনি বলেন, “একদিন তার নানী আমাকে জানান, নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। আমি তাকে আশ্বস্ত করি, নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করব। ইবি ক্রিকেট ক্লাব, শুধু ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা সুযোগ পেলে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। খেলাধুলা মানুষের উন্নত মন মানসিকতার বিকাশ ঘটায়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে নাঈম একদিন অনেক বড় হবে এবং সে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবে, ইনশাআল্লাহ।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ