ভিডিও সম্মেলন বা সভা করার সফটওয়্যার জুমে অভিনব কৌশলে প্রতারণা করছে ‘এলুসিভ কমেট’ নামের একটি সংঘবদ্ধ হ্যাকার গ্রুপ। জুমে ভুয়া সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহারকারীদের কম্পিউটারে থাকা সংবেদনশীল তথ্য ও ডিজিটাল মুদ্রা চুরি করছে তারা। সম্প্রতি জুম ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে পরিচালিত এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা শনাক্ত করেছে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ট্রেইল অব বিটস।
ট্রেইল অব বিটস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে হ্যাকাররা নিজেদের ‘ব্লুমবার্গ ক্রিপ্টো’র গবেষক বা সাংবাদিক পরিচয়ে ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর এক্স (সাবেক টুইটার) বা ই-মেইলে ব্যবহারকারীদের ভিডিও সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য একটি লিংক পাঠায় হ্যাকাররা। পুরো যোগাযোগ প্রক্রিয়াটি এতটাই পেশাদার ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ করার সুযোগ থাকে না বললেই চলে।
নির্ধারিত সময়ে জুম মিটিং শুরু হলে প্রতারকেরা স্ক্রিন শেয়ার সুবিধা চালু করে এবং রিমোট কন্ট্রোল প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুরোধ পাঠায়। এখানেই থাকে প্রতারণার মূল ফাঁদ। হ্যাকাররা জুমে নিজেদের নাম বদলে রাখে ‘জুম’। ফলে ভুক্তভোগীর স্ক্রিনে যে অনুমতির অনুরোধটি আসে, তাতে লেখা থাকে, ‘জুম ইজ রিকোয়েস্টিং রিমোট কন্ট্রোল অব ইউর স্ক্রিন’। এতে অনেকেই মনে করেন, এটি জুম কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছে। এর ফলে না বুঝেই অনুমতি দিয়ে দেন তারা।
আরও পড়ুনজুম সভায় স্ক্রিন শেয়ার করবেন যেভাবে০৫ নভেম্বর ২০২৩ট্রেইল অব বিটসের তথ্যমতে, একবার অনুমতি দিলে হ্যাকাররা পুরো কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। এরপর তারা সংবেদনশীল তথ্য চুরি, ডিজিটাল মুদ্রা সংগ্রহ বা দূর থেকে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করার মতো কাজ করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা ‘ব্যাকডোর’ স্থাপন করে রাখে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে যেকোনো সময় দূর থেকে গোপনে যন্ত্রে প্রবেশ করা যায়।
আরও পড়ুনজুমে যুক্ত হচ্ছে নতুন এআই ফিচার, যে সুবিধা পাওয়া যাবে২১ মার্চ ২০২৫এই প্রতারণার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো অনুমতির চাওয়ার বার্তাটি দেখতে জুমের সাধারণ নোটিফিকেশনের মতো। এর ফলে অনেকেই অনুমতি দিয়ে দেন, বুঝতে পারেন না যে তাঁরা আসলে হ্যাকারদের হাতে নিজের যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিচ্ছেন।
সূত্র: ব্লিপিং কম্পিউটার
আরও পড়ুনজুম মিটিংয়ে মাইক্রোফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ রাখবেন যেভাবে২৬ এপ্রিল ২০২২.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।