নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাতিল করার দাবি করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। তিনি বলেছেন, এই নারীবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছে। এ জন্য নারীবিষয়ক কমিশনের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করতে হবে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই গণসমাবেশের আয়োজন করে খেলাফত মজলিসের রংপুর জেলা শাখা।

অনুষ্ঠানে মামুনুল হক বলেন, সংস্কারের প্রশ্ন যখন এসেছে, সংস্কার কার্যক্রমগুলোকে এ দেশের আলেম সমাজ ও ইসলামী সংগঠনগুলো স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, ১৯ এপ্রিল নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার বরাবর নারী অধিকার সংস্কারের যে প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে, সেই প্রস্তাবনা দেখে ইসলামী তৌহিদী জনতা স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে মামুনুল হক বলেন, ‘এ দেশের তৌহিদী জনতা আপনাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন, সমর্থন নিঃশর্ত সমর্থন নয়। আপনি যদি আল্লাহর কোরআনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান, আপনাকে মঞ্চ থেকে, ক্ষমতার গদি থেকে উৎখাত করতে এতটুকু হৃদয় কাঁদবে না আমাদের। কোরআনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনার পরিণতিও শেখ হাসিনার থেকে ভিন্ন কিছু হবে না।’

পশ্চিমা জীবনধারায় বিশ্বাসী কিছু এনজিওকর্মীকে দিয়ে মোহাম্মদ ইউনূস নারীবিষয়ক কমিশন গঠন করিয়ে আল্লাহর কোরআনের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করেছেন বলে উল্লেখ করেন মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘দাবি তুলতে চাই, ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য নারীবিষয়ক কমিশনের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করতে হবে। যদি এই কমিশনের রিপোর্টকে প্রত্যাখান করে, কমিশনকে যদি বাতিল করে, নতুন করে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীর অভিপ্রায় অনুযায়ী তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে নতুন কমিশন গঠন করা না হয়, এই নারী কমিশনের সদস্যদের পরিণাম সেই তসলিমা নাসরিনের মতোই ঘটানো হবে। তসলিমা নাসরিন যেপথে গেছে, নারীবিষয়ক কমিশন যাবে সেই পথে।’

কিছু মানুষ আওয়ামী লীগের জন্য মায়াকান্না শুরু করেছে উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, ‘বিএনপির নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি আপনারা তুলতে পারবেন না। আপনারা ওই সময় বিএনপির হাজার হাজার শত শত খুন, হত্যাকাণ্ডের শিকার নিহত শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি আপনারা করতে পারেন। এ দেশের জনগণ গাদ্দারি করতে পারে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে গণহত্যা, ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মোদিবিরোধী আন্দোলন ও ২০১৩ সালে শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ হাসিনা, তাঁর মন্ত্রিসভা ও প্রশাসনের যাঁরা মদদ ও নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেও ঘোষণা করতে হবে। তাদের বিচার নিশ্চিত করার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার বিষয় আসবে।’

রংপুর জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মুহাম্মদ আতাউল হকের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব শারাফাত হোসাইন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক, আবুল হাসনাত জালালী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য রেজাউল করিম।
সভা সঞ্চালনা করেন খেলাফত মসলিসের রংপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ম ন ল হক আপন র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগের নামে কোনো দল রাজনীতি করতে পারবে না: ভিপি নুর

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নামে কোনো রাজনৈতিক দল রাজনীতি করতে পারবে না।

মঙ্গলবার বিকেলে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরের চেয়ারম্যান বাজারে আয়োজিত এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

গণসমাবেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রসঙ্গে ভিপি নুর বলেন, এই সরকার সব রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। এখানে বিরোধী দলের অবস্থান নেই, বরং সবাই মিলে রাষ্ট্র সংস্কার বাস্তবায়নে কাজ করছে। আমরা সরকারবিরোধী নই; বরং এই সরকারকে সহযোগিতা করছি।

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বারবার দাবি জানিয়ে আসছি— আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে সন্ত্রাসী ও গণহত্যাকারী সংগঠন হিসেবে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। ছাত্রলীগ ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে, আশা করি শিগগিরই আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নিষিদ্ধ হবে।

নুর বলেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও তার পরিবার, এমপি-মন্ত্রীরা উন্নয়নের বুলি শুনিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সাধারণ নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে তাঁরা বিদেশে রাজকীয় জীবনযাপন করছে। দেশের মানুষ এখন এসব বুঝে ফেলেছে—তাদের আর বোকা বানানো যাবে না।

তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ গণঅধিকার পরিষদকে ভোট দেবে। আমরা তিনশ’ আসনে প্রার্থী দিব। শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাট মাঝিকে আমরা ঘোষণা করছি।

গণসমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদ মুন্সী, কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাট মাঝি, শরীয়তপুর জেলার সাবেক সদস্য সচিব ডা. শাহজালাল সাজু প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগের নামে কোনো দল রাজনীতি করতে পারবে না: ভিপি নুর