এবার দামেস্কে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে ইসরায়েলের হামলা
Published: 2nd, May 2025 GMT
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে একটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আজ শুক্রবার (২ মে) সকালে এ কথা বলেছেন।
একই সঙ্গে নেতানিয়াহু সিরিয়ায় বসবাসরত দ্রুজ সম্প্রদায়ের সদস্যদের রক্ষারও অঙ্গীকার করেছেন।
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্রুজ হলো সিরিয়ায় বসবাসরত একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী। ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে তারা ইসলাম ধর্মের একটি শাখা হিসেবে বিবেচিত। সিরিয়া ছাড়াও লেবানন ও ইসরায়েলে এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর লোকদের বসবাস রয়েছে।
সংখ্যালঘু দ্রুজদের রক্ষার অঙ্গীকারের কথা বলে ইসরায়েল এ নিয়ে পরপর দুই দিন সিরিয়ায় হামলা চালাল। এর আগে গত বুধবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে ইসরায়েল হামলা চালায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই হামলাগুলো সিরিয়ার বর্তমান ক্ষমতাসীনদের প্রতি ইসরায়েলের গভীর অবিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে। সিরিয়ার বর্তমান শাসকগোষ্ঠী সুন্নি মতাদর্শ অনুসরণকারী ইসলামপন্থী। তারা গত ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসে।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য বিষয়টি একটি অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। কেননা, তিনি দ্বিধাবিভক্ত দেশটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, “গত রাতে ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার দামেস্কে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে হামলা চালিয়েছে।”
নেতানিয়াহু আরও বলেন, “এটি সিরিয়ার শাসকগোষ্ঠীর প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা। আর তা হলো, তারা দামেস্কের দক্ষিণে সিরীয় বাহিনী মোতায়েন বা দ্রুজ সম্প্রদায়ের প্রতি কোনো হুমকি মেনে নেবে না।”
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি দামেস্কের সাহনায়াহ শহরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে ৪০ জন নিহত হয়। এলাকাটিতে দ্রুজ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে। সে সময় দ্রুজদের ওপর হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল ইসরায়েল। পরে তারা বুধবার সিরিয়ার দামেস্কের উপকণ্ঠে হামলা চালায়।
ইসরায়েল সরকার জানিয়েছে, দ্রুজ সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর একটি কট্টরপন্থী গোষ্ঠীর হামলার জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে এমন হামলাকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ বলে নিন্দা জানায় সিরিয়া। তবে সিরিয়ার এই বিবৃতিতে ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র বসব স
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।