জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে সেই দেশ শাসন করবে: নুরুল হক
Published: 3rd, May 2025 GMT
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা গণঅভ্যুত্থানের অংশিদার অনেক রাজনৈতিক দলের মধ্যে ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট লক্ষ্য করছি। আমরা চাঁদাবাজি, দখলবাজি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে কোথাও চাঁদাবাজি, দখলবাজি রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন বন্ধ হয়নি। যারা ভাবছেন ভোট কেন্দ্র দখল করে, ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরবেন- তাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নই থেকে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামীতে জনগণ যাকে ভোট দিয়ে নেতা বানাবে, জনপ্রতিনিধি বানাবে, জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে সেই দেশ শাসন করবে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণকে সচেতন করা। পরিবর্তনের যে ডাক গণঅধিকার পরিষদ দিয়েছে সেই বার্তা জনগনের কাছে পৌঁছে দেওয়া।’
শুক্রবার বিকেলে বিসিক এলাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুব অধিকার পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘যে যত বড়, তার দাায়িত্ব তত বেশি। যে বড় জায়গায় আছে, তার তত বেশি কাজ করার সুযোগ আছে।’ তিনি বড় রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পাঁচ আগস্টের পর ফ্যাসিবাদি হাসিনার পতনের পর আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও জনগনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের সকলকে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে হবে। কিন্তু কোনো দল যদি মনে করে আমরা একাই একশ, আমরা একাই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করব, আমারই সব হতাকর্তা- তাদেরকে বলব আওয়ামী লীগের পতন থেকে শিক্ষা নেন। এই দেশের মানুষ কাউকে পরোয়া করে না। বিগত ১৬ বছরের হাসিনার দানবীয় শাসন হটাতে এই দেশের ছাত্র-জনতা, শ্রমিক, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ রাজপথে বুক পেতে দিয়েছে। আগামীতে নতুন করে তারা এই দেশে কোনো ফ্যাসিবাদ তৈরি হতে দেবে না।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুব আধিকার পরিষদের সভাপতি শেখ সাব্বির হোসেন রাজের সভাপতিত্বে সমাবেশ বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ও মুখপত্র ফারুক হাসান, কেন্দ্রীয় নেতা ওয়াহিদুর রহমান মিল্কি, আবুল খায়ের শান্ত, জেলা গণআধিকার পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ, সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিয়ান শিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিন আহমেদ জয়সহ অনেকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ল হক ন র ন র য়ণগঞ জ র জন ত ক দ
এছাড়াও পড়ুন:
ইসির প্রতিটি কাজে জবাবদিহি থাকতে হবে
সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পথনকশা ঘোষণা না হলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো সম্পাদনে সচেষ্ট আছে। তারা ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চূড়ান্ত করেছে এবং ১০ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আসন বণ্টনের কাজটি খুবই জরুরি। প্রতিটি নির্বাচনের আগে কমিশন আসনের বিষয়ে জনগণের মতামত নিয়ে থাকে; এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিশেষায়িত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ইসি গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো ও বাগেরহাটে একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন ও গাজীপুরে পাঁচটি আসন রয়েছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী বাগেরহাটে সংসদীয় আসন একটি কমে হবে তিনটি। আর গাজীপুরে একটি বেড়ে হবে ছয়টি সংসদীয় আসন। তবে কমিশনের এই প্রস্তাবই চূড়ান্ত নয়। সংসদীয় আসনগুলোর সীমানার খসড়া নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আপত্তি কিংবা দাবির শুনানি শেষে চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হবে।
জনশুমারি-২০২২ অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে বিশেষ কারিগরি কমিটি শুমারিতে বেশ কিছু অসামঞ্জস্য পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ ভোটার তালিকা রয়েছে। ওই তালিকার মোট ভোটারের ভিত্তিতেই ২০ হাজার ৫০০ কমবেশি গড় ভিত্তিতে গ্রেডিং তৈরি করে কোন জেলায় বেশি ভোটার, কোথায় কম, তা পর্যালোচনা করা হয়। এক থেকে তিন আসনবিশিষ্ট জেলাগুলোকে আসন বাড়ানো-কমানোর ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়, সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে এ পর্যন্ত দেড় হাজারের মতো আবেদন কমিশন পেয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি আসনে ছোট-বড় সংশোধন, সমন্বয়ের প্রস্তাব কারিগরি কমিটি করেছে।
গত বুধবার নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, বিশেষায়িত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোনো জেলার মোট ভোটার ও জনসংখ্যা বিশ্লেষণ করে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের ৩৯ থেকে ৪২টি আসনের সীমানায় ছোটখাটো পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আড়াই শতাধিক আসনের সীমানা বহাল থাকছে। সে ক্ষেত্রে আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজটি চূড়ান্ত করতে ইসিকে খুব বেগ পেতে হবে না।
অন্যদিকে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রগুলোকেও প্রস্তুত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, কোনো কেন্দ্রের অবকাঠামো মেরামত বা সংস্কার করতে হলেও যেন তারা দ্রুততম সময়ে করে। সাধারণত সরকারি স্থাপনা মেরামতের কাজটি করে থাকে গণপূর্ত বিভাগ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংস্কারের কাজ করে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ।
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন প্রবাসীরা যাতে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। প্রবাসীরা বহু বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন তাঁদের সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশনগুলোতে নাম নিবন্ধনের অনুরোধ করেছে। দূরবর্তী স্থান থেকে সরাসরি নিবন্ধন করতে অনেকে আগ্রহী হবেন না। সে ক্ষেত্রে অনলাইনেও নিবন্ধনের সুযোগ রাখতে হবে। ইতিমধ্যে কিছু প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন। নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষিত হলে তাঁদের আগ্রহ বাড়বে আশা করা যায়।
নির্বাচন কমিশনের এসব উদ্যোগ ইতিবাচক বলে আমরা মনে করি। কিন্তু তাদের মূল যে দায়িত্ব জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, সেটা কতটা সুচারুভাবে করতে পারে, তার ওপরই সাফল্য–ব্যর্থতা নির্ভর করবে। ইসিকে মনে রাখতে হবে, নাগরিকেরা ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন, যাঁরা বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি কাজ ও পদক্ষেপে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত।