আরও পাঁচ হাজার নতুন রোহিঙ্গা কক্সবাজারে
Published: 4th, May 2025 GMT
কক্সবাজারে আরও ৫ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এ নিয়ে নতুন রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ১ মে পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এদের ‘নতুন রোহিঙ্গা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর আগে থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করছে আরও ১২ লাখ রোহিঙ্গা। সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সমকালকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল শনিবার রাতে মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, নতুনভাবে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে। তারা কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে আছে। কেউ আবার বিদ্যালয়সহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থাপনায় আশ্রয় নিয়েছে।
নতুন রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ চিঠির জবাব দেয়নি বলে জানান মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থার অনুরোধ জানিয়ে ইউএনএইচসিআরের চিঠির জবাব আমরা এখনও দিইনি। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে নতুনভাবে ঘর তৈরি করে দেওয়ার মতো অবস্থায় আমরা নেই। আমরা প্রত্যাবাসনে জোর দিচ্ছি।
এদিকে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু বুড়া শিকদাপাড়া এলাকায় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। দেশটির রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির সদস্যরা এ নিপীড়ন চালাচ্ছে। এতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্বদিকে অবস্থিত শিকদারপাড়া থেকে অনেক রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত তাদের স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কেউ কেউ পালিয়ে আসছেন।
পালিয়ে আসা এমনই একজন আমির হোসেন। টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া আমির জানান, তার কিছু স্বজন এখনও শিকদাপাড়ায় বসবাস করছে। শনিবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। এদিন সকালে গ্রামে ঢুকে খোলা আকাশের দিকে গুলি চালায় আরাকান আর্মি। এর পর মাইকিং করে ঘর থেকে সবাইকে বের হতে বলে। এক পর্যায়ে একটি খালি মাঠে সবাইকে জড়ো করে। এ সময় আরসাকে কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের নাম প্রকাশ করতে বলা হয়। এর ব্যত্যয় হলে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
তিন মাস আগে পালিয়ে আসা আমির আরও জানান, রাখাইনের লডাইং, উচিংজং, নাকমুড়া, কুলি পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় এখনও রোহিঙ্গাদের বসতি রয়েছে। সেখানে আরাকান আর্মি অনেকের ঘরে গিয়ে আরসার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের দিনভর রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখছে তারা। এতে সেখানকান রোহিঙ্গারা ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চেষ্টা করছে।
আরাকান আর্মি নতুন করে মংডুতে হামলা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মো.
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা সৈকতের মুসলিমাবাদ বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে নারী-শিশুসহ ৩৫ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র্যাব। র্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক এ আর এম মোজাফফর হোসেন বলেন, মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে বেশ কিছু রোহিঙ্গা পতেঙ্গা ঘাট দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে– এমন তথ্য পেয়ে অভিযান চালানো হয়। পরে নারী-শিশুসহ ৩৫ জনকে আটক করা হয়। তাদের চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা ভাসানচর থেকে নাকি মিয়ানমার থেকে এসেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আটক রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, প্রতিজন দুই হাজার টাকার বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে দালালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। তাদের চট্টগ্রামে পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি ছিল। এখান থেকে তারা কোথায় যেতে চেয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। তাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। নাফ নদ ও স্থলপথে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। পাশাপাশি মাদক-মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
সীমান্তে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর খোঁজ রাখেন– এমন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক দিনে মিয়ানমার জান্তার বাহিনীর কাছে রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে আরাকান আর্মি। এ নিয়ে সংঘাত চলছে। আর নতুন আসা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ বর্তমানে কক্সবাজারে ২০টি ক্যাম্পে তাদের স্বজনের ঘরে রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নত ন র হ ঙ গ আর ক ন আর ম র খ ইন র র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
মাউশির সামনে দ্বিতীয়দিনের মত অবস্থান নিয়োগপ্রত্যাশীদের
সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন চার-পাঁচ বছর আগে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাও শেষ বহু আগেই। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত ফল না পেয়ে দিশেহারা নিয়োগপ্রত্যাশীরা। তাই দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন প্রদর্শক, গবেষণা সহকারী (কলেজ), ল্যাবরেটরি সহকারী এবং সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার পদের নিয়োগপ্রত্যাশীরা। আজ বুধবার সকালেও মাউশির প্রধান ফটকের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান করতে দেখা গেছে তাদের।
অনশনকারীদের একজন সাদ্দাম হোসেন সমকালকে বলেন, ২০২১ সালে পরীক্ষা দিয়েছি, এখন ২০২৫—এই চার বছরে কত কিছু পাল্টে গেছে, শুধু আমাদের অবস্থানই বদলায়নি। শুধু একটা ফলাফলের অপেক্ষায় জীবনটা আটকে গেছে।
প্রদর্শক পদে আবেদন করা সুমাইয়া আফরিন বলেন, আমার বাবা নেই। সংসার আমার ওপর নির্ভরশীল। ভাইভা শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর, অথচ আজও কোনো ফল নেই। মানসিকভাবে আমরা ভেঙে পড়ছি।
অবশ্য, দ্রুত ফল প্রকাশের দাবি জানিয়ে এরইমধ্যে আন্দোলনকারীরা লিখিতভাবেও মাউশিতে আবেদন জানিয়েছেন। তবে কোন সাড়া মেলেনি। তাই প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ২০২০ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২০২১ সালে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ বিলম্বে ২০২৪ সালের এপ্রিলে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় এবং মে-জুনে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এখন ২০২৫ সালের জুন—কিন্তু এখনও কোনো চূড়ান্ত ফল নেই। এতে চাকরির বয়সসীমা পার হওয়ার শঙ্কায়ও পড়েছেন অনেকেই।
এর আগে, আজ সকাল থেকে চাকরিপ্রত্যাশীরা মাউশি ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করেন। তারা প্ল্যাকার্ড হাতে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানান চূড়ান্ত ফল প্রকাশের। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস বা পদক্ষেপ না পেয়ে দুপুর থেকে তারা আমরণ অনশনে বসেন। পরে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে অনশনরত এক ফলপ্রত্যাশী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানান।
এসময় তারা অভিযোগ করেন, গত চার বছরে বিভিন্ন সময় মাউশির তৎকালীন মহাপরিচালক, কলেজ প্রশাসন ও উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর বা সমাধান পাওয়া যায়নি। চূড়ান্ত ফল প্রকাশ নিয়ে বছরের পর বছর ঝুলে থাকার কারণে অনেকের বয়স এখন চাকরির বয়সসীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। তাই প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।