কুষ্টিয়ায় শারমিন সুলতানা নামে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি, সরকারি ঘর ও জমি, ভাতা দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৫০ জনের কাছে থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। পাওনা টাকা না পেয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেছেন ভুক্তভোগীরা। 

সোমবার (৫ মে) দুপুর ১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। ওই নারী একজন এমবিবিএস চিকিৎসক। তিনি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন।

মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর এলাকার সুমি খাতুন বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ হয়ে কুষ্টিযায় ডা.

শারমিন সুলতানা কাছে এসেছিলাম। তার কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলাম। তার সঙ্গে বেশ কয়েক বছরের পরিচয়। হঠাৎ করে ৭-৮ মাস আগে সরকারি চাকরি, জায়গা-জমি, ঘরবাড়ি ও ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছে থেকে টাকা নিয়েছেন ডা. শারমিন। তার প্রলোভনে পড়ে আমি, আমার আত্মীয়-স্বজনসহ ৩০ থেকে ৪০ জন তাকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা দিয়েছি। তিনি আমাদের টাকাও ফেরত দেন না, চাকরিও দেন না, জমিও দেন না, ভাতার ব্যবস্থা করেও দেন না।’’

আরো পড়ুন:

ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের ১৬ নির্দেশনা

সংকট নিরসনে বিশেষ বিসিএসে নিয়োগ হবে ২ হাজার চিকিৎসক

তিনি আরো বলেন, ‘‘তাই আজকে আমরা কুষ্টিয়ায় এসেছি। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। আমরা গরিব মানুষ, ধারদেনা করে বিভিন্নভাবে কষ্ট করে টাকা ম্যানেজ করে তাকে দিয়েছে। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই।’’

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার সালমা খাতুন বলেন, ‘‘ডা. শারমিন সুলতানা সরকারি চাকরি, জমি, ঘরবাড়ি ও ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে আমাদের ৫০ থেকে ৬০ জনের কাছে থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। জমি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছে থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। আর আমার স্বামীর কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা আমাদের টাকা ফেরত পেতে চাই।’’ 

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা এলাকার খাদিজা খাতুন বলেন, ‘‘জমি দেওয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন ডা. শারমিন। প্রলোভন দিয়ে টাকা নিয়েছেন তিনি। এখন টাকাও ফেরত দেন না, জমিও দেন না। আমার মতো অনেকের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই ডাক্তার। টাকা আদায়ের জন্য আমরা কুষ্টিয়ায় এসেছি। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। আমরা এই ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’ 

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা এলাকার জাহিরা খাতুন বলেন, ‘‘আমার কেউ নেই। আমি খুব গরিব মানুষ। আমার দুইটা ছাগল ছিল। সেই ছাগল বিক্রি করে শারমিন ডাক্তারকে টাকা দিয়েছি। প্রলোভন দেখিয়ে ঘর দেওয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন। পরে টাকাও দেন না, ঘরও দেন না। আমরা তার শাস্তি চাই। আমার টাকা ফেরত চাই।’’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. শারমিন সুলতানা বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। দুপুরে আমি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাই। এ সময় তারা আমাকে মারধর করেন এবং আমার গহনা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন।’’

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘খবর পেয়ে আমরা ওই চিকিৎসককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন বেশ কয়েকজন নারী। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
 

ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র ট ক ৫০ ল খ ট ক খ ত ন বল ন প র য় ৫০ চ ক ৎসক ব যবস থ কর ছ ন আম র ক ম রধর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের উপস্থিতিতে পল্লি চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগ, ৩ দিনেও মেলেনি খোঁজ

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে তরিকুল ইসলাম (৩৫) নামের এক পল্লি চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। এর পর তিন দিনেও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

গত শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের হাতি চামটার ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি তরিকুল ইসলামকে টেনেহিঁচড়ে একটি অটোভ্যানে তুলছেন। অপহরণের সময় সেখানে মাথায় হেলমেট এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ছিলেন। আশপাশে আরো কয়েকজন মানুষ ছিলেন। তরিকুল তাদের সাহায্য চাইলেও তারা এগিয়ে আসেননি। এক ব্যক্তি ভ্যানটি চালিয়ে নিয়ে যান। দুর্বৃত্তদের বলতে শোনা যায়, ‘এখানে প্রশাসনের লোক আছে।’ 

অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলাম ভাতগ্রাম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর কুটিপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। ভাতগ্রাম বাজারে তার চেম্বার ও ওষুধের দোকান আছে। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন।

অপহরণের পর তিন দিন পার হলেও পুলিশ তরিকুল ইসলামকে উদ্ধার করতে না পারায় উদ্বেগ জানিয়েছেন স্বজনরা। অপহরণকারীরা কয়েক বার ফোন দিয়ে অপহৃত তরিকুলের ছোট ভাই হিরুর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে তরিকুলের ছোট ভাই হিরু মিয়া সাদুল্লাপুর থানায় আট জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সাত-আট জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, তরিকুল ইসলামের ওষুধের দোকানে সুমন নামের এক ব্যক্তি ৬ মাস কাজ করেছেন। তাকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হলে বিভিন্ন অজুহাতে তিনি টাকা দাবি করে আসছিলেন তরিকুলের কাছে। এ নিয়ে কয়েকবার স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠকও হয়। গত শুক্রবার বিকেলে তরিকুল বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে ভাতগ্রাম বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে সুমনসহ স্থানীয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার পথরোধ করে মারধর করেন এবং জোরপূর্বক অটোভ্যানে তুলে নিয়ে যান।

বাদী হিরু মিয়া বলেছেন, অভিযোগ দেওয়ার দুই দিন পরও আমার ভাইকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ, সেখানে সাদুল্লাপুর থানার এক এএসআই উপস্থিত ছিলেন। অপহরণকারীরা সবার পরিচিত। দিনে দুপুরে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর কারণে ভাইকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি আমরা। তার দুই মেয়ে শুধু কাঁদছে। 

তিনি আরো বলেন, সর্বশেষ রবিবার দুপুরে অপহৃত তরিকুলের কাছে থাকা মোবাইল ফোন থেকে দুর্বৃত্তরা ফোন করে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমার বড় ভাইকে দ্রুত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হোক। 

রবিবার রাতে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজউদ্দিন খন্দকার সাংবাদিকদের বলেছেন, অপহরণের সময় পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির উপস্থিতির কথা শুনেছি। কিন্তু, স্পষ্ট নয়। অপহরণের শিকার তরিকুল ইসলামকে উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চলছে। 

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারী চিকিৎসককে টেনে-হিঁচড়ে সড়কে এনে মারধর
  • নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তার ওপর মারধর, রক্ষা পাননি চিকিৎসক স্বামীও
  • অপহরণের শিকার সেই পল্লী চিকিৎসক উদ্ধার
  • পুলিশের উপস্থিতিতে পল্লি চিকিৎসককে অপহরণের অভিযোগ, ৩ দিনেও মেলেনি খোঁজ
  • গাইবান্ধায় পল্লিচিকিৎসককে অপহরণের ভিডিও ভাইরাল
  • স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার নেতৃত্বে হাসপাতালে হামলার অভিযোগ