কুষ্টিয়ায় নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় একজোট হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলার চিকিৎসকরা। আজ মঙ্গলবার জরুরি সভা শেষে তারা এ সিদ্ধান্ত জানান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক নাসিমুল বারী বাপ্পী। মারধরের শিকার নারী চিকিৎসক শারমিন সুলতানা সোমবার রাতেই বাড়ি ফিরেছেন। রাত সাড়ে ১১টার পর তাঁর স্বামীর জিম্মায় তাঁকে থানা থেকে হস্তান্তর করে পুলিশ। রাতেই তাঁকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, নারী চিকিৎসক হেনস্তার প্রতিবাদে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে জরুরি সভা হয়েছে। এতে দুই হাসপাতালসহ জেলায় কর্মরত অন্তত ৮০ জন চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার দুপুরে লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে একদল নারী-পুরুষ পূর্বপরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধভাবে চিকিৎসক শারমিন সুলতানা এবং তাঁর স্বামী মোহাম্মদ মাসুদ রানাকে মারধর করে। এ সময় তাদের শ্লীলতাহানি, লাঞ্ছিত ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে তারা।

এতে শারমিন সুলতানা আহত হন। তাঁর কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করে। গুম ও খুনের উদ্দেশ্যে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিরোধে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় জেলার সর্বস্তরের চিকিৎসক ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত এবং এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান চিকিৎসকরা। অন্যথায় বৃহত্তর ও কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, নারী চিকিৎসককে যারা মারধর করেছে, তারা নিশ্চিত করতে পারেনি যে, তিনি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কোনো প্রমাণও দেখাতে পারেননি। চিকিৎসক দম্পতি মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভুয়া ঘটনায় মারধরের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসকের স্বামী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করব।’

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের অর্জুনদাস আগরওয়ালা সড়কে লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ একাধিক ক্লিনিকে রোগী দেখেন চিকিৎসক শারমিন সুলতানা। সোমবার দুপুরে লাইফ ডায়াগনস্টিকের চেম্বারে যাওয়ার পর সেখানে অবস্থান করা একদল নারী তাঁর ওপর হামলা করে। ১৫ থেকে ২০ জন তাঁকে টেনেহিঁচড়ে সড়কের ওপর নিয়ে যায়। 

সেখানে চুলের মুঠি ধরে চিকিৎসকের ওপর হামলা করে। কয়েকজন তাঁর পোশাক ছিঁড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। প্রতারণার নানা অভিযোগ তুলে কয়েকজন মারধরও করে। খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করতে এসে স্বামীও মারধরের শিকার হন। পুলিশ গিয়ে এ দম্পতিকে উদ্ধার করে। তাদের সঙ্গে মারধর করা নারীরাও থানায় যান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র চ ক ৎসক ম রধর র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’

‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ অপারেশন টেবিলে শুয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক চিকিৎসকের মুখে তারেক শাহরিয়ার তন্ময়কে শুনতে হয়েছিল এমন কটূক্তি।

তন্ময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল দিনে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থী। তার কাছে হাসপাতালের সেই অপমান আজো দগদগে ক্ষত।

গত বছর ১৬ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তন্ময়ও অংশ নেন। রাজধানীর ভাটারা থানা ও নতুন বাজারের রাস্তায় দিনভর চলতে থাকে স্লোগান ও মিছিল। ১৭ জুলাই আন্দোলনে সাময়িক বিরতি এলেও পরদিন সকালেই ফের রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা আয়োজন

বাকৃবি ২ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৫৪ জনকে শাস্তি

তন্ময় বলেন, “বন্ধুর ফোনে খবর পেয়ে বের হওয়ার আগে বেলকনি থেকে দেখি আওয়ামী লীগের কিছু লোক বস্তা থেকে অস্ত্র-ছুরি বের করছে। তখনই ভয় পেয়ে আইডি কার্ড গলায় ঝুলাইনি।”

তিনি বলেন, “সেদিন নতুন বাজার থেকে শুরু হওয়া মিছিল বাঁশতলা পেরিয়ে উত্তর বাড্ডার দিকে এগোতে থাকলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। পুলিশও টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ঠিক তখনই পুলিশের শর্টগানের গুলি এসে লাগে আমার বাম চোখে।”

রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে প্রথমে এএমজেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। চিকিৎসকরা জানান, চোখ ফেরানো সম্ভব নয়।

তন্ময় বলেন, “অপারেশনের আগে এক চিকিৎসক এসে বলেছিলেন, ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ তখন আমি দুর্বল অবস্থায় অপারেশন টেবিলে শুয়ে কিছু বলতে পারিনি।”

অপারেশনের পরও তাকে অন্য রোগীর সঙ্গে একই বেডে রাখা হয়। বাইরে ছাত্রলীগের হামলার চেষ্টা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে পাশে দাঁড়ান ও খরচ বহন করেন। খবর পেয়ে রংপুর থেকে ছুটে আসেন তার মা-বাবা। ছেলেকে দেখে ভেঙে পড়েন তারা।

পরে বিদেশে চিকিৎসার চেষ্টা হলেও ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহায়তা, শিক্ষক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা পেয়েও উন্নত চিকিৎসা হয়নি। এখন বিদেশে গেলেও তেমন লাভ নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা।

স্বৈরাচার পতনের এক বছর পর দেশ নতুন আশা দেখলেও তন্ময়ের চোখে আলো ফেরেনি। তিনি বলেন, “১৮ জুলাই শুধু আমার চোখে গুলি লাগেনি, সেদিন আমার স্বপ্নেও গুলি লেগেছিল। আমি শুধু একটা চোখ হারাইনি, হারিয়েছি জীবনের ছন্দও।”

তন্ময়ের জীবনে যে অন্ধকারের দাগ লেগেছে, তা দেশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। স্বৈরাচার বিদায়ের ১ বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য সময় প্রয়োজন।

তন্ময়ের মতো অসংখ্য তরুণের ত্যাগ ও বেদনায় আজকের মুক্তি সম্ভব হয়েছে, যা আমাদের সবার কাছে চিরস্মরণীয়।

ঢাকা/রাকিবুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’
  • নিরাপত্তারক্ষীদের বেঁধে চিনিকলে ডাকাতি, ট্রাক ভরে নিয়ে গেল মাল