যুদ্ধে ইসলামাবাদ-দিল্লি দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই পায়নি: শাহবাজ শরিফ
Published: 17th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ কাশ্মীরসহ বিতর্কিত ইস্যুগুলোর নিষ্পত্তি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াই করার জন্য ভারতকে পূর্ণাঙ্গ সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার (১৬ মে) ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ‘ইয়ুম-ই-তাশাকুর’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শাহবাজ এই আহ্বান জানান।
শনিবার (১৭ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, অতীতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু দুর্ভোগ ছাড়া মানুষ কিছু পায়নি। শাহবাজ শরিফ বলেন, “কাশ্মীর ও পানিবণ্টন ইস্যুর মতো বিরোধ নিষ্পত্তি হলে আমরা বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিষয়ে আলোচনা করতে পারি।”
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধে নতুন পরিকল্পনা ভারতের
ভারত আরেকটি দুঃসাহসিক অভিযান চালাতে পারে: খাজা আসিফ
তিনি ভারতকে শত্রুতা ত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে বসবাসের আহ্বান জানান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই অঞ্চলে টেকসই শান্তির জন্য পাকিস্তান ও ভারতের উচিত আলোচনার টেবিলে আসা এবং জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করা। কাশ্মীর সমস্যা, বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদ দিয়ে আমাদের কথা বলা উচিত।”
পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের কারণে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী উল্লেখ করে শেহবাজ বলেন, এখানে ৯০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে শাহবাজ ছাড়াও জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির মির্জা, সেনাপ্রধান আসিফ মুনির, বিমানবাহিনীর প্রধান মার্শাল জহির আহমেদ বাবর, নৌপ্রধান নাভেদ আশরাফ, ফেডারেল মন্ত্রীসভার সদস্য, কুটনীতিবিদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের সঙ্গে সংঘাত প্রসঙ্গে শেহবাজ দাবি করেন, “আমরা যুদ্ধে জিতেছি কিন্তু শান্তি চাই। আমরা আমাদের শত্রুদের একটি শিক্ষা দিয়েছি কিন্তু আমরা আগ্রাসনের নিন্দা করি। আমরা চাই বিশ্বের এই অংশটি কঠোর পরিশ্রম, অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর মতো জীবনযাপনের মাধ্যমে অন্যদের মতো সমৃদ্ধ এবং প্রগতিশীল হোক।”
তিনি বলেন, “দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের (পাকিস্তান, ভারত) মধ্যে যুদ্ধ উপমহাদেশে বসবাসকারী ১ দশমিক ৬ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের জীবন বিপন্ন করতে পারে।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যদি পারমাণবিক লড়াই হয়, তাহলে কী ঘটেছে তা বলার জন্য কে বেঁচে থাকবে।”
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে পাকিস্তানের বেসামরিক ও সশস্ত্র বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সামনের সারিতে ছিল, এই কথা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “যদি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের (সন্ত্রাসীদের) সঙ্গে লড়াই না করত, তাহলে তারা অন্য অনেক দেশে ঘুরে বেড়াত।”
শাহবাজ শরীফ ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, পহেলগাম ঘটনা নিয়ে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালিয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, পহেলগাম ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তদন্তের প্রস্তাব ভারত প্রত্যাখ্যান করে ৬ মে দিবাগত রাতে পাকিস্তানে হামলা চালায় এবং শিশু, যুবক এবং মায়েদের শহীদ করে।
তিনি বলেন, “শত্রুরা পাকিস্তানের ভেতরে আক্রমণ করে এবং প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তান মিগ ও রাফায়েলসহ ভারতের ছয়টি বিমান ভূপাতিত করে এবং আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার শত্রুর আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে দেয়।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯ মে দিবাগত রাতে ভারত পাকিস্তানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এরপর রাতেই সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি পাল্টা জবাবের অনুমতি দেন। তার অনুমোদন পাওয়ার পর, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতের বিমান ঘাঁটি ও সামরিক অবকাঠামোতে আক্রমণের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়।
শাহবাজ শরীফ বলেন, “সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদার দক্ষতা এবং প্রস্তুতি ছাড়া পাকিস্তান সফলভাবে আত্মরক্ষা করতে পারত না।” তিনি ভারতের বিরুদ্ধ সফল সামরিক অভিযানে নেতৃত্বের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমেদ বাবর এবং নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নাভিদ আশরাফকে ধন্যবাদ জানান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ভ্রাতৃপ্রতিম এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে পাকিস্তানকে সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি এই অঞ্চলে শান্তি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সশস ত র ব হ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় বিএনপি অফিসে আগুন দিল ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও মহানগর কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে ছাত্রদলের সদ্যঘোষিত দক্ষিণ জেলা ও মহানগর কমিটির পদবঞ্চিতরা। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে ওই কার্যালয়ের সামনে নানা স্লোগান দিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আগুন দেয় তারা। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে শনিবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা কান্দিরপাড়ে মিছিল বের করে। পরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ‘অবৈধ কমিটি মানি না, মানবো না; জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো; অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দেয় পদবঞ্চিত ছাত্রনেতারা। এ সময় আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, বিগত ১৭ বছরে যারা আওয়ামী লীগের দ্বারা নির্যাতন ও হামলা-মামলার শিকার হয়েছে, তাদেরকে বাদ দিয়ে যে কমিটি করা হয়েছে তা আমরা মানি না। কমিটি বাতিল করে ত্যাগী নেতাদের সমন্বয় করে নতুন কমিটি দেওয়া হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
ছাত্রদলের নেতারা বলেন, দীর্ঘ ৭ বছর পর গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে কাজী জোবায়ের আলম জিলানীকে সভাপতি ও এমদাদুল হক ধীমানকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল এবং নাহিদ রানাকে সভাপতি ও ফায়াজ রশিদ প্রিমুকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর ছাত্রদলের আংশিক ওই দুটি কমিটি করা হয়। ওই রাতেই দুই কমিটিতে পদবঞ্চিতরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠে এবং নগরীর কান্দিরপাড়ে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা পূবালী চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে। তারা সদ্যঘোষিত কমিটির বিলুপ্তির দাবিতে শনিবার সন্ধ্যায় ফের বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সদ্যবিদায়ী সভাপতি ফখরুল ইসলাম মিঠু বলেন, কমিটি ঘোষণার পর থেকেই দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা গত তিন দিন ধরে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করছে। এরই মাঝে পদপ্রাপ্ত এবং পদবঞ্চিতদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তবে বিএনপি কার্যালয়ে কারা আগুন দিয়েছে তা আমার জানা নেই।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, কার্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ছিল। সম্প্রতি আমরা এ অফিস সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে ছিলাম। ভেতরে কারা আগুন দিয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারিনি।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ এবং কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারপরও বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কে বা কারা আগুন দিয়েছে- তা জানা যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।