আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে তামাকপণ্যের দাম ও কর বাড়িয়ে তামাক করনীতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে ডরপ। বুধবার রাজধানীন সিরডাপ মিলনায়তনে ‘আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধি এবং তামাক করনীতি সংস্কার’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।

ডরপ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এইচএম নোমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো.

আখতারউজ-জামান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব হোসেইন আলী খন্দকার, বিডিআর তদন্ত কমিশনের সদস্য ও সাবেক যুগ্মসচিব মুন্সী আলাউদ্দীন আল আজাদ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডরপের উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান।

সেমিনারে বক্তারা সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একীভূত করে প্রতি ১০ শলাকার সিগারেটের প্যাকেটের সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ৯০ টাকা করার দাবি জানান। তারা বলেন, সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরের দাম কাছাকাছি হওয়ায় দাম বাড়লেও মধ্যম থেকে নিম্ন স্তরের সিগারেটে স্থানান্তরের প্রবণতা বাড়ে। তবে দুই স্তরকে একীভূত করে দাম বাড়ালে ধূমপানের প্রবণতা কমবে। এতে তরুণরা ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণের তামাকজনিত অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

আখতারউজ-জামান বলেন, সিগারেটে চারটি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম খুবই কাছাকাছি। এ কারণে ভোক্তারা যেকোনো একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে দাম বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে।

মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখতে হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স গ র ট র খ চর ত ম ক কর আসন ন স তরক

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় পাঠাতে বসছে ৫ শতাংশ কর, কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে

বাণিজ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের পর এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের ওপর ৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নামে হাউস বাজেট কমিটিতে অনুমোদিত আইনের আওতায় এই কর আরোপ করা হবে।

এই আইনে মার্কিন নাগরিক ছাড়া সব অভিবাসীর প্রেরিত অর্থে করারোপ করা হবে। গ্রিন কার্ডধারী ও এইচ-১বি ভিসাপ্রাপ্তরাও এর আওতায় পড়বেন। কর আরোপের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সীমা নির্ধারণ করা হয়নি, অর্থাৎ ছোট অঙ্কের অর্থ পাঠালেও কর প্রযোজ্য হবে। ফলে বাংলাদেশিদের প্রেরিত প্রবাসী আয়েও এই কর প্রযোজ্য হবে। খবর সিএনবিসি টিভি ১৮ ডট কম।

১ হাজার ১১৬ পৃষ্ঠার এই বিল রোববার রাতে হাউস অব রেপ্রেজেনটেটিভে ১৭–১৬ ভোটে পাস হয়েছে। এরপর তা সিনেটে উত্থাপিত হবে।

বিলটি আইনে পরিণত হলে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের অন্যতম বৃহৎ উৎস যুক্তরাষ্ট্র। প্রবাসী আয় প্রেরণের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কর দিতে হলে ব্যাংকিং মাধ্যমে প্রবাসী পাঠানো কমে যাওয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রবাসী আয় প্রেরণ বেড়ে যেতে পারে, এমন সম্ভাবনা আছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে তা তিন ত্রৈমাসিকে দেশে যত প্রবাসী আয় এসেছে, তার প্রায় ১৮ ভাগ এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। একইভাবে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণে প্রবাসী আয় পায়। ফলে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের অন্যতম প্রধান উৎস। গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৩ কোটি ৭ লাখ ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৪২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৫২ হাজার ২৬ কোটি টাকা(১ ডলার সমান ১২২ টাকা)। এরপর ওপর ৫ শতাংশ কর আরোপিত হলে করের পরিমাণ দাঁড়াত প্রায় ২১ দশমিক ৮৫ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৬৬৫ দশমিক ৭ কোটি টাকা।

গত বছর হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে যায়। জানা যায়, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে একধরনের বড় পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বৈশ্বিক বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশ থেকে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রবাসী আয় কিনে নেয়। পরে সেসব আয় একত্র করে নির্দিষ্ট একটি দেশ থেকে তা গন্তব্য দেশে পাঠায়। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রিগেটেড (সমন্বিত) পদ্ধতিতে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে প্রেরণ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে আয় এসেছে ২ হাজার ৪৫৩ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল সময়ে আয় এসেছিল ১ হাজার ৯১১ কোটি ডলার।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ভারতে। সে বছর তারা পেয়েছে ১২৯ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ষষ্ঠ। বাংলাদেশ পেয়েছে ২৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার।

বিষয়টি হলো, প্রবাসী আয় হলো দেশে মার্কিন ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না বা কোনো দায় পরিশোধ করার দরকার পড়ে না। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। আবার বিদেশি ঋণ পরিশোধেও ডলারের প্রয়োজন হয়। সার্বিকভাবে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের রিজার্ভ বা মজুত দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

এই বাস্তবতায় ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ কর বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর দায়বিহীন ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে বলে বলে শঙ্কা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওয়েজবোর্ড ও মহার্ঘ ভাতা ঘোষণার দাবি ডিইউজের, ঈদে ছুটি ৬ দিন দিতে নোয়াবকে চিঠি
  • রাজ্যের পাওনা আটকে রাখায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তামিলনাড়ুর মামলা
  • চা রপ্তানির বাজারে বড় ব্র্যান্ড ‘সিলন’
  • সঠিক বরাদ্দ ও বাস্তবায়নই কৃষির ভবিষ্যৎ
  • সরকারের তিন ক্রয় প্রস্তাবে ব্যয় ৮৮৯ কোটি টাকা  
  • যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় পাঠাতে বসছে ৫ শতাংশ কর, কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে
  • বাজেটে পানি, পয়োনিষ্কাশন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি
  • আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে, শেয়ারবাজারে করছাড় আসতে পারে
  • ভারতের নিষেধাজ্ঞা: আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি কমবে ৩০ শতাংশ