নওগাঁর নিয়ামতপুরে বিএনপি নেতার প্রভাব খাটিয়ে একটি পরিবারের ১৭ দশমিক ৫৩ একর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। তাঁরা নিজেদের বিএনপি কর্মী দাবি করে প্রাণনাশসহ অন্যান্য সম্পদ দখলের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী মো.

মামুন। এ সময় তাঁর ছোট বোন সুরাইয়া নাজনীন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, তাঁরা বৈধ ওয়ারিশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ওই সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মো. মামুন বলেন, তাঁর দাদা হাজি মফি উদ্দিন একমাত্র ছেলে ময়েন উদ্দিনকে মোতোয়াল্লি করে প্রায় ৮০০ বিঘা সম্পত্তি ওয়াক্‌ফ আওলাদ হিসেবে লিখে দিয়ে যান। ময়েন উদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর তিন ছেলে ইমরান, এনামুল ও মামুন এবং এক মেয়ে সুরাইয়া নাজনীন সুলতানা ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীতে বসবাস করেন।

মামুন অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তাঁদের বসতবাড়ি, পুকুর, আবাদি জমি দখল করার হুমকি দেন স্থানীয় রসুলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুজা উদ্দিন এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পলাশ। তাঁদের প্রভাব খাটিয়ে ডাহুকা গ্রামের বাবুল দেওয়ান, জি এম দেওয়ানসহ কয়েকজন তাঁদের একটি দোতলা বাড়ি জোর করে দখল করে বসবাস করতে শুরু করেন। ওই সম্পত্তি ওয়াক্‌ফ এস্টেটভুক্ত। এ বিষয়ে ঢাকায় ওয়াক্‌ফ এস্টেটের প্রশাসকের কাছে দখল হওয়া বাড়ি উচ্ছেদের অভিযোগ করলে নওগাঁর জেলা প্রশাসককে উচ্ছেদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী ১৫ মে নিয়ামতপুর উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) দখল উচ্ছেদ করে তাঁদের দখল বুঝে দেন। এ ঘটনার পর ১৬ মে বিএনপি নেতা সুজা ও পলাশ দলীয় লোকজন নিয়ে ডাহুকা গ্রামে গিয়ে তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং তাঁরা রাজশাহী থেকে জমি দেখার জন্য গ্রামে গেলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। এ ঘটনার পর তিনি বাদী হয়ে বিএনপি নেতা সুজা, পলাশসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়ামতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

লিখিত বক্তব্যে মামুন বলেন, ‘আমাকে ও আমার ভাইদের আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং সাধন চন্দ্র মজুমদারের লোক আখ্যা দিয়ে অন্যায়ভাবে আমাদের জমি দখল করা হচ্ছে। অথচ আমরা কোনো দিনই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমাদের একটি প্রতিপক্ষ আমার দাদার করে যাওয়া ওয়াক্‌ফ এস্টেটের ১৭ দশমিক ৫৩ একর জমির জাল দলিল তৈরি করে দখলের অপচেষ্টা করে আসছিল। এ ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান। ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতার প্রভাব খাটিয়ে বিবদমান ১৭ দশমিক ৫৩ একর জমি দখল করে নিয়েছে ওই পক্ষ। তাঁরা নিজেদের বিএনপির কর্মী দাবি করে তাঁদের প্রাণনাশসহ অন্যান্য সম্পদ দখলের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ওয়াক্‌ফ এস্টেট সম্পত্তির বৈধ মোতোয়াল্লি হওয়া সত্ত্বেও আমরা আমাদের জমিতে যেতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।’

অভিযোগের বিষয়ে রসুলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুজা উদ্দিন বলেন, ‘মামুনের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ করে। তাঁর বড় ভাই ইমরান সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। তাঁরা জোর করে এলাকার অনেক মানুষের সম্পত্তি দখল করেছেন। এখনো অর্থের প্রভাব খাটিয়ে জালজালিয়াতি করে অন্যের জমি দখল করছেন। সম্প্রতি প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে বাবুল দেওয়ান ও জি এম দেওয়ানের মাটির দোতলা বাড়ি ভেঙে দিয়েছেন। ডাহুকা গ্রামের সেলিম হোসেন নামের এক ব্যক্তির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের এ অভিযানের পর আদালত ডিসি, ইউএনও ও এসি ল্যান্ডকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন। ৭০-৮০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করা একটি বাড়ি ভেঙে ফেলা নিয়ে এলাকার মানুষই ক্ষিপ্ত। এলাকার বিবেকবান মানুষ হিসেবে আমিও ওই গ্রামে গিয়েছিলাম এবং মামুন ও তাঁর ভাইদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পান, সেই লক্ষ্যে কথা বলেছি। জোর করে কাউকে জমি দখল করে দিইনি।’

এ বিষয়ে সেলিম হোসেন বলেন, ‘আমার নানা হাজি মফি উদ্দিনের প্রথম স্ত্রীর ছয় মেয়ে। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র ছেলে মামুনের বাবা ময়েন উদ্দিন। মফি উদ্দিন তাঁর একটি দলিলে তাঁর ৬ মেয়ের নামে ৬৮৯ বিঘা এবং আরেকটি দলিলে ছেলে ময়েন উদ্দিনের নামে ৩৬৫ বিঘা জমি ওয়াক্‌ফ আওলাদ হিসেবে লিখে দিয়ে যান। কিন্তু ময়েন উদ্দিন জালজালিয়াতি করে দুই দলিলের সব সম্পত্তির মোতোয়াল্লি সেজে ভোগদখল করতে থাকেন। তাঁর ছেলেমেয়েরাও একইভাবে দখল করে আছেন এবং অনেক সম্পত্তি বিক্রিও করে দিয়েছেন। জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলমান। যে ১৭ একর সম্পত্তি দখলের কথা বলা হচ্ছে, এটা আমরা হাজি মফি উদ্দিনের বৈধ ওয়ারিশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছি। আমরা কোনো জমি দখল করিনি। বরং তাঁরাই অন্যায়ভাবে ৭০-৮০ বছর ধরে বসবাস করে আসা মানুষকে উচ্ছেদ করে একটি বাড়ি ভেঙে দিয়েছেন। এটা অমানবিক একটা ব্যাপার। তা–ও সেটা প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে করা হয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ এস ট ট অন য য় ন র পর পর ব র ন বল ন ব এনপ দখল র

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁয় বিএনপি নেতার প্রভাব খাঠিয়ে ১৭ একর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

নওগাঁর নিয়ামতপুরে বিএনপি নেতার প্রভাব খাটিয়ে একটি পরিবারের ১৭ দশমিক ৫৩ একর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। তাঁরা নিজেদের বিএনপি কর্মী দাবি করে প্রাণনাশসহ অন্যান্য সম্পদ দখলের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী মো. মামুন। এ সময় তাঁর ছোট বোন সুরাইয়া নাজনীন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, তাঁরা বৈধ ওয়ারিশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ওই সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মো. মামুন বলেন, তাঁর দাদা হাজি মফি উদ্দিন একমাত্র ছেলে ময়েন উদ্দিনকে মোতোয়াল্লি করে প্রায় ৮০০ বিঘা সম্পত্তি ওয়াক্‌ফ আওলাদ হিসেবে লিখে দিয়ে যান। ময়েন উদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর তিন ছেলে ইমরান, এনামুল ও মামুন এবং এক মেয়ে সুরাইয়া নাজনীন সুলতানা ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীতে বসবাস করেন।

মামুন অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তাঁদের বসতবাড়ি, পুকুর, আবাদি জমি দখল করার হুমকি দেন স্থানীয় রসুলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুজা উদ্দিন এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পলাশ। তাঁদের প্রভাব খাটিয়ে ডাহুকা গ্রামের বাবুল দেওয়ান, জি এম দেওয়ানসহ কয়েকজন তাঁদের একটি দোতলা বাড়ি জোর করে দখল করে বসবাস করতে শুরু করেন। ওই সম্পত্তি ওয়াক্‌ফ এস্টেটভুক্ত। এ বিষয়ে ঢাকায় ওয়াক্‌ফ এস্টেটের প্রশাসকের কাছে দখল হওয়া বাড়ি উচ্ছেদের অভিযোগ করলে নওগাঁর জেলা প্রশাসককে উচ্ছেদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী ১৫ মে নিয়ামতপুর উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) দখল উচ্ছেদ করে তাঁদের দখল বুঝে দেন। এ ঘটনার পর ১৬ মে বিএনপি নেতা সুজা ও পলাশ দলীয় লোকজন নিয়ে ডাহুকা গ্রামে গিয়ে তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং তাঁরা রাজশাহী থেকে জমি দেখার জন্য গ্রামে গেলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। এ ঘটনার পর তিনি বাদী হয়ে বিএনপি নেতা সুজা, পলাশসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়ামতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

লিখিত বক্তব্যে মামুন বলেন, ‘আমাকে ও আমার ভাইদের আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং সাধন চন্দ্র মজুমদারের লোক আখ্যা দিয়ে অন্যায়ভাবে আমাদের জমি দখল করা হচ্ছে। অথচ আমরা কোনো দিনই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমাদের একটি প্রতিপক্ষ আমার দাদার করে যাওয়া ওয়াক্‌ফ এস্টেটের ১৭ দশমিক ৫৩ একর জমির জাল দলিল তৈরি করে দখলের অপচেষ্টা করে আসছিল। এ ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান। ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতার প্রভাব খাটিয়ে বিবদমান ১৭ দশমিক ৫৩ একর জমি দখল করে নিয়েছে ওই পক্ষ। তাঁরা নিজেদের বিএনপির কর্মী দাবি করে তাঁদের প্রাণনাশসহ অন্যান্য সম্পদ দখলের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ওয়াক্‌ফ এস্টেট সম্পত্তির বৈধ মোতোয়াল্লি হওয়া সত্ত্বেও আমরা আমাদের জমিতে যেতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।’

অভিযোগের বিষয়ে রসুলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুজা উদ্দিন বলেন, ‘মামুনের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ করে। তাঁর বড় ভাই ইমরান সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। তাঁরা জোর করে এলাকার অনেক মানুষের সম্পত্তি দখল করেছেন। এখনো অর্থের প্রভাব খাটিয়ে জালজালিয়াতি করে অন্যের জমি দখল করছেন। সম্প্রতি প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে বাবুল দেওয়ান ও জি এম দেওয়ানের মাটির দোতলা বাড়ি ভেঙে দিয়েছেন। ডাহুকা গ্রামের সেলিম হোসেন নামের এক ব্যক্তির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের এ অভিযানের পর আদালত ডিসি, ইউএনও ও এসি ল্যান্ডকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন। ৭০-৮০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করা একটি বাড়ি ভেঙে ফেলা নিয়ে এলাকার মানুষই ক্ষিপ্ত। এলাকার বিবেকবান মানুষ হিসেবে আমিও ওই গ্রামে গিয়েছিলাম এবং মামুন ও তাঁর ভাইদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পান, সেই লক্ষ্যে কথা বলেছি। জোর করে কাউকে জমি দখল করে দিইনি।’

এ বিষয়ে সেলিম হোসেন বলেন, ‘আমার নানা হাজি মফি উদ্দিনের প্রথম স্ত্রীর ছয় মেয়ে। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র ছেলে মামুনের বাবা ময়েন উদ্দিন। মফি উদ্দিন তাঁর একটি দলিলে তাঁর ৬ মেয়ের নামে ৬৮৯ বিঘা এবং আরেকটি দলিলে ছেলে ময়েন উদ্দিনের নামে ৩৬৫ বিঘা জমি ওয়াক্‌ফ আওলাদ হিসেবে লিখে দিয়ে যান। কিন্তু ময়েন উদ্দিন জালজালিয়াতি করে দুই দলিলের সব সম্পত্তির মোতোয়াল্লি সেজে ভোগদখল করতে থাকেন। তাঁর ছেলেমেয়েরাও একইভাবে দখল করে আছেন এবং অনেক সম্পত্তি বিক্রিও করে দিয়েছেন। জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলমান। যে ১৭ একর সম্পত্তি দখলের কথা বলা হচ্ছে, এটা আমরা হাজি মফি উদ্দিনের বৈধ ওয়ারিশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছি। আমরা কোনো জমি দখল করিনি। বরং তাঁরাই অন্যায়ভাবে ৭০-৮০ বছর ধরে বসবাস করে আসা মানুষকে উচ্ছেদ করে একটি বাড়ি ভেঙে দিয়েছেন। এটা অমানবিক একটা ব্যাপার। তা–ও সেটা প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ