চট্টগ্রামে ঘরে ঘরে শিশুরা জ্বরাক্রান্ত হইতেছে বলিয়া শুক্রবার সমকাল যেই সংবাদ দিয়াছে, উহাকে বিশেষত সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য এক সতর্ক সংকেতরূপে দেখিলে ভুল হইবে না। চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারের তথ্য উদ্ধৃত করিয়া প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, তাহাদের নিকট কিছুদিন যাবৎ চিকিৎসা গ্রহণ করিতে আগত শিশুর ৬০ শতাংশই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত, তন্মধ্যে ২ হইতে ৮ বৎসর বয়সীই অধিক। এমনকি চার মাস হইতে ১ বৎসরের শিশুও রহিয়াছে। অধিকতর চিন্তার বিষয়, যদ্রূপ একই পরিবারের একাধিক শিশু আক্রান্ত হইতেছে, তদ্রূপ আক্রান্ত অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করিতে হইতেছে। ফলে বাসা আর হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করিতে গিয়া সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে অতিরিক্ত ভোগান্তিতে পড়িতে হইতেছে– আর্থিকের সহিত শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি। অন্যদিকে শয্যা অপেক্ষা রোগীর সংখ্যা অধিক হইবার কারণে হাসপাতালগুলিতে এক শয্যায় একাধিক শিশুকে চিকিৎসা লইতে হইতেছে। গত কয়েক দিনে জ্বরাক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কয়েক গুণ হইয়াছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। শিশু ওয়ার্ডের ৮০ শয্যায় প্রতিদিনই রোগী ভর্তি থাকিতেছে ২০০ জনের উপরে। গত ১৮ মে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৭২ রোগী ভর্তি ছিল; ১৯ মে ছিল ২৪১; ১৭ মে ছিল ২৪০ রোগী। জ্বরের সহিত কাশিও যুক্ত থাকায় আক্রান্ত শিশুদের কষ্ট দ্বিগুণ হইয়া পড়িয়াছে।
প্রতিবেদনে শুধু চট্টগ্রামের সংবাদ থাকিলেও রাজধানীর চিত্রও কমবেশি একই রকম। এখানেও চিকিৎসকের চেম্বার এবং হাসপাতালে জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীরে ব্যথা লইয়া আগত রোগীর ভিড় কম নহে। রোগীদের মধ্যে সকল বয়সের মানুষ থাকিলেও শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই অধিক। সাধারণত এই দুই বয়সসীমার মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাকৃতিক কারণেই অপেক্ষাকৃত কম থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ নানা প্রকার ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এই দুই বয়সীদের মধ্যে অধিক দেখা যায়। আরেক বিষয় হইল, এমন নহে যে কেবল এই বৎসরই এহেন জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটিল। বস্তুত প্রতি বৎসরই এই সময়ে ইহার আধিক্য ঘটে। চট্টগ্রামের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.
এই সকল কিছু মিলাইয়া আলোচ্য সমস্যাকে জনস্বাস্থ্যগত বলিলেও ভুল হয় না। তাই ইহা প্রশমনে স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের বহু কিছু করণীয় রহিয়াছে বলিয়া আমরা মনে করি। একদিকে আক্রান্তদের দ্রুত ও যথাযথ চিকিৎসা যদ্রূপ নিশ্চিত করিতে হইবে, তদ্রূপ রোগ প্রতিরোধের পদক্ষেপ হিসাবে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরাইয়া আনাও গুরুত্বপূর্ণ। জনসচেতনতা গড়িয়া তোলার কাজও এই সকল সংস্থাকে করিতে হইবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফির বিজ্ঞাপন বন্ধে সরকারের ৪ নির্দেশনা
অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফির বিজ্ঞাপন বন্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে চারটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্মবান্ধব রাখতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন ও প্রোমোশনাল কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে। এই ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর পরিপন্থি।
এতে বলা হয়, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ধারা ২০(১) অনুযায়ী, সাইবার স্পেসে জুয়া বা বেটিং সম্পর্কিত পোর্টাল, অ্যাপস বা কনটেন্ট তৈরি, পরিচালনা, প্রচার, বিজ্ঞাপন প্রকাশ বা উৎসাহ প্রদান করা দণ্ডনীয় অপরাধ। একইভাবে, ধারা ২৫(১) অনুযায়ী, পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক কনটেন্ট প্রচার, প্রচারে সহায়তা বা প্রচারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন প্রকাশও অধ্যাদেশ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অনলাইন জুয়া, পর্নোগ্রাফি ও অনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচার প্রতিরোধে রকার ও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ) জরুরি ৪টি নির্দেশনা দিয়েছে-
মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম: দেশের সব পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সংস্থাকে কোনোভাবেই জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে বলা হয়েছে। ডিফল্ট অ্যাডসেন্স বা কাস্টমাইজড বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এমন কনটেন্ট দেখানো হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেলিব্রিটি ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর: দেশি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা কোনোভাবে জুয়া, পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক পণ্য-সেবার প্রোমোশনাল কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। এ ধরনের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সাইবার সুরক্ষা আইন অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
দেশি ও বিদেশি ওয়েবসাইট/অ্যাপ: বাংলাদেশে পরিচালিত বা ব্যবহারকারীর জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য কোনো দেশি বা আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন বা লিংক প্রচার করা যাবে না। জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি এসব কনটেন্ট মনিটরিং করবে এবং প্রয়োজনে ব্লকিং, জরিমানা বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম: মোবাইল কোম্পানি, আইএসপি, গুগল অ্যাডসেন্স, মেটা অ্যাডসহ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্থানীয় আইন ও নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পপ-আপ ব্লকিং ও ফিল্টারিং নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
সরকার বলেছে, নৈতিক, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে সরকারি সংস্থা, মিডিয়া, প্রযুক্তি কোম্পানি ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত কনটেন্ট দেখতে পান, তারা [email protected] ঠিকানায় তা রিপোর্ট করতে পারবেন।
এতে আরো বলা হয়েছে, শুধু আইনি পদক্ষেপ নয়, সরকারের এই উদ্যোগ তরুণ সমাজের নৈতিক বিকাশ, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক বন্ধন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাইবার নিরাপত্তা, নৈতিকতা এবং দায়িত্বশীল ডিজিটাল আচরণ নিশ্চিত করতে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পযবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এবং বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজ করছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ফিরোজ