‘বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে হরতাল-অবরোধ’
Published: 15th, November 2025 GMT
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তর বন্ধে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), চট্টগ্রাম। সংগঠনের নেতারা বলেছেন, সিদ্ধান্ত না পাল্টালে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তাঁরা।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের নতুন বাজার মোড় এলাকায় স্কপের মশালমিছিলের আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এ কথা বলেন বক্তারা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক কাজী শেখ নুরুল্লা বাহার।
কাজী শেখ নুরুল্লা বাহার অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম বন্দর সরকারের রাজস্ব আয়ে লাভজনক অবদান রাখা সত্ত্বেও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও লালদিয়ায়র চর বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিনা দরপত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিউমুরিং টার্মিনাল হস্তান্তরের উদ্যোগ পতিত আওয়ামী লীগ সরকারই নিয়েছিল। জুলাই বিপ্লবের পর বর্তমান সরকার কেন একই পথে হাঁটছে এর জবাব সরকারকে দিতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস কে খোদা তোতন, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি তৌহিদ আলম প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারী মশালমিছিলে অংশ নেন। নতুন বাজার মোড় থেকে বড়পোল মোড় পর্যন্ত মিছিলটি প্রদক্ষিণ করে। স্কপ নেতারা জানান, ২২ নভেম্বর সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে শ্রমিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে।
বিদেশিদের হাতে একের পর এক টার্মিনাল ছেড়ে দেওয়া নিয়ে এ বছরের শুরু থেকে নানা সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। শুরুতে এনসিটি বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামে বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। এরপর পেশাজীবী ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এই উদ্যোগের আপত্তি জানায়। এ ছাড়া বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বন্দর মাশুল বাড়ানোর অভিযোগ তুলে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামও কর্মসূচি পালন করে।
আন্দোলনের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব ৩৩ বছরের জন্য বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই দায়িত্ব পাচ্ছে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস। শিগগির প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার চুক্তি হবে।
গত বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় টার্মিনালটি নির্মাণ ও পরিচালনায় ৩৩ বছরের জন্য বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এই মেয়াদ আরও ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে এই চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ছাড়াও ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনালও সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএর হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু সরকারি অনুমোদনের। চালু থাকা টার্মিনালটি হস্তান্তরের চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বা এনসিটি পরিচালনা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে দর-কষাকষি শুরু হয়েছে। আগামী মাসে (ডিসেম্বর) এই টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজনীতি ছাড়লেন লালুপ্রসাদের মেয়ে রোহিনী
নির্বাচনে বড় হারের পর নতুন সংকটে পড়েছে বিহারের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)। পারিবারিক বিরোধের জেরে আজ শনিবার আরজেডি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির প্রধান নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের মেয়ে রোহিণী আচার্য। একই সঙ্গে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন জোটের পরাজয়ের এক দিন পরই এমন ঘোষণা দিলেন তিনি। বিরোধীদলীয় জোটটি এবারের নির্বাচনে ২৪৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩৫টিতে জয় পেয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে রোহিণী লিখেছেন, ‘আমি রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছি এবং পরিবারকে অস্বীকার করছি। সঞ্জয় যাদব ও রামিজ আমাকে এটাই করতে বলেছেন...আর সব দায় আমি নিজের কাঁধে নিচ্ছি।’
সঞ্জয় যাদব রাজ্যসভায় আরজেডি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি লালুপ্রসাদের ছেলে তেজস্বী যাদবের বিশ্বস্ত সহযোগী। রামিজ তেজস্বীর পুরোনো বন্ধু হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রতিবেশী রাজ্য উত্তর প্রদেশের একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, লালুপ্রসাদের পর তেজস্বীই দলের নেতৃত্ব দেবেন।
গত মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বাবা লালুপ্রসাদ ও ভাই তেজস্বীকে আনফলো করেন রোহিণী। ওই সময়ই লালুপ্রসাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। সঞ্জয় যাদব অন্যদের বঞ্চিত করে দলের ভেতরে ক্ষমতা সংহত করছেন বলে সমালোচনা করেছেন রোহিণী।
আরজেডি পরিবারের সদস্য হওয়ার পাশাপাশি রোহিণী চিকিৎসাবিদ্যায় ডিগ্রি রয়েছে। তিনি পরে গৃহিণী হিসেবে সিঙ্গাপুরে থাকা স্বামীর সঙ্গে থিতু হন। কয়েক বছর আগে বাবা লালুপ্রসাদের জন্য কিডনি দান করে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন রোহিণী। তিনি গত বছর বিহারের সারন জেলা থেকে লোকসভা নির্বাচন করে পরাজিত হন।
ধারণা করা হচ্ছে, লালুপ্রসাদের বড় ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবকে দল থেকে বহিষ্কার করায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন রোহিণী। যদিও বিধানসভা নির্বাচনের সময় তাঁকে ছোট ভাই তেজস্বীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। তেজস্বী এবারের নির্বাচনে জোটের হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য লড়েছিলেন।
ধারণা করা হচ্ছে, লালুপ্রসাদের বড় ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবকে দল থেকে বহিষ্কার করায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন রোহিণী। যদিও বিধানসভা নির্বাচনের সময় তাঁকে ছোট ভাই তেজস্বীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। তেজস্বী এবারের নির্বাচনে জোটের হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য লড়েছিলেন।বিহারের নির্বাচনে যা ঘটেছেবিধানসভা নির্বাচনে এবার ২৪টি আসন পেয়েছে আরজেডি। অথচ পাঁচ বছর আগে বিধানসভায় দলটি পেয়েছিল ৭৫ আসন। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সর্বোচ্চ আসন জিতলেও মহাগঠবন্ধনের আসন সংখ্যা তলানিতে পৌঁছায়। এটি কংগ্রেস ও আরজেডির জন্য বড় ধরনের ধাক্কা।
এনডিএ জোটের প্রধান দুই দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও জনতা দল (জেডি) ১০১টি আসনে ৮৫ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। এ ঘটনা থেকে এনডিএর বড় ধরনের জয়ের কারণটি বোঝা যায়। জোটটি বিধানসভার ২৪৩টি আসনের মধ্যে ২০০টির বেশি আসনে জয় পেয়েছে। রাজ্যটিতে সবচেয়ে বড় একক দল হিসেবে উত্থান ঘটেছে বিজেপির।
আরও পড়ুনবিহারে বিজেপি জোটের কাছে কংগ্রেস–আরজেডির ভরাডুবি১৪ নভেম্বর ২০২৫