রায়গঞ্জে অজ্ঞানপার্টি সন্দেহে দুই ইরানি নাগরিককে মারধর, থানায় মামলা
Published: 26th, May 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সলঙ্গা থানা এলাকায় অজ্ঞান পার্টি সন্দেহে দুই ইরানি যুবককে মারধর করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় আজ সোমবার থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে সলঙ্গা থানার ভূঁইয়াগাঁতী হাইস্কুল রোডের ভৌমিক মার্কেটে মারধরের শিকার হন তারা।
ইরানের ওই নাগরিকরা হলেন- আসকান (২৯) ও হুসাইন (৩৩)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইরানি যুবকরা টাকা ভাঙ্গানোর কথা বলে ভৌমিক মার্কেটের ফিডের দোকানে প্রবেশ করে। এ সময় টাকার সঙ্গে শয়তানের নিঃশ্বাস (সম্মোহন করার ওষুধ) ব্যবহারের মাধ্যমে ফিডের দোকানদার আব্দুল বাবুকে সম্মোহিত করে তারা। এতে বিদেশিরা যা বলছিল, বাবু ঠিক তাই করছিল। একপর্যায়ে বাবু তার দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে বেশ কিছু টাকা তাদের হাতে দেয়। বিদেশীদের পকেটে সেগুলো রাখার সময় কিছু টাকা পড়ে যায়। এই বিষয়টি একই মার্কেটের জুয়েলার্সের মালিক বিচিত্র কুমার দাসের নজরে আসে। তিনি মার্কেটে অজ্ঞান পার্টি ঢুকেছে বলে চিৎকার দেন। এতে আশপাশে থাকা প্রায় শতাধিক লোক এসে তাদের গণধোলাই দেয়।
সলঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আহসান হাবীব এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ওই দুই ইরানি যুবককে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বগুড়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ঢাকা ফেরার পথে ভুইয়াগাঁতী এলাকায় বাস থামালে তাদের সঙ্গে থাকা একটি একহাজার টাকার নোট খুচরা করতে ওই দোকানে যায়। এ সময় তারা গণধোলাইয়ের শিকার হন। এ ঘটনায় প্রহৃত যুবকরা অজ্ঞাতনামা ৩০-৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। বিকেল চারটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
সলঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানান, বিষয়টি তদন্তধীন রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম রধর স র জগঞ জ সলঙ গ
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন ফ্যাসিবাদের আগমন ধ্বনি শোনা যাচ্ছে
নতুন ফ্যাসিবাদের আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তার মধ্যে নতুন ফ্যাসিবাদের আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে। পুরো সমাজের মধ্যে আবার একটা নতুন ফ্যাসিবাদী শক্তির নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।
শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘নাগরিক সংহতি সমাবেশ’–এ বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এই সমাবেশের আয়োজন করা হয় ‘যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারুল ইসলামকে দায়মুক্তি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে জামায়াত-শিবিরের হামলার প্রতিবাদে’। গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের উদ্যোগে এই সমাবেশ করা হয়।
সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেখানে জনগণ একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সরকারের ভূমিকা নির্লিপ্ত, কোথাও তাদের অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না। বরং হামলা-নির্যাতনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি বাহিনীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, নারী, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, শিক্ষকসহ যেকোনো স্তরের মানুষ যখন নিজেদের অধিকার আদায়ে কথা বলেন, তখনই তাঁদের ওপর হামলা হয়। আর যারা হামলা করে তারা রক্ষা পায়, কারণ সরকারের ভেতরেই তাদের মদদদাতা রয়েছে।
২৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা হয়। এর প্রতিবাদে এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারকে নির্দোষ ঘোষণার প্রতিবাদে ২৮ মে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের প্রতিবাদ সমাবেশেও পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা হয়। দুটি ঘটনাতেই ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যের ব্যানার’–এ শিবিরের বর্তমান ও সাবেক কিছু নেতা–কর্মী হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে।
একজন যুদ্ধাপরাধীকে দায়মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এ টি এম আজহারুল ইসলাম ১৯৭১ সালে একটি যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের নেতা ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা দলিল-প্রমাণসহ ছিল। আদালত যদি কোনো ত্রুটির কারণে আগের রায় বাতিলও করে, তাহলেও যুদ্ধাপরাধের সত্যতা তো মুছে ফেলা যায় না।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, যে ব্যক্তি ইতিহাসের বিবেচনায় চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, তাঁকে নির্দোষ ঘোষণার মাধ্যমে ইতিহাসকেই বিকৃত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ’৭১–এর শহীদ, নির্যাতিত নারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বর্তমান তরুণ কর্মীদের অনেকেই ’৭১ সালে জন্মায়নি। তারা যুদ্ধাপরাধ করেনি ঠিকই, কিন্তু তারা যদি সেই রাজনীতি ধারণ করে, তবে সেই অপরাধের দায় থেকেও তারা মুক্ত থাকতে পারে না।’
যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ইসলামবিরোধী বলে প্রচার করা হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এটা ভয়ংকর মিথ্যাচার। ১৯৭১ সালে শহীদ হওয়া মানুষের অধিকাংশই ছিলেন ধার্মিক মুসলমান। সুতরাং, তাঁদের হত্যাকারীদের বিচারকে ইসলামবিরোধী বলা মানে ইসলামেরই অবমাননা করা।’
যারা ইতিহাস বিকৃত করছে, বৈষম্য–নিপীড়নের রাজনীতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি যত দিন থাকবে, তত দিন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে লড়াই চলবে। আর সেই লড়াই হবে বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশের পথচলার ভিত্তি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিন। প্রবল বৃষ্টির কারণে অনুষ্ঠান সংক্ষেপ করেন আয়োজকেরা। এই সংহতি সমাবেশের সঞ্চালক ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক জাবির আহমেদ।