শেরপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৬০টি পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করেছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। আজ সোমবার সকালে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপকারভোগীদের কাছে এসব ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়।

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

আশরাফুল আলম রাসেলসহ আরও অনেকে। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ‘চ্যারিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিস’ বিভাগের প্রজেক্ট এক্সিকিউটিভ রফিউল করিম রাফি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেরপুরসহ সারা দেশের বন্যাদুর্গত বিভিন্ন জেলায় মোট ১ হাজার ৫০০টি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ফেনীতে ২৯০, লক্ষ্মীপুরে ২৬০, নোয়াখালীতে ২৪০, কুমিল্লাতে ২৫০, ময়মনসিংহে ১০৫, চাঁদপুরে ৫০, কুড়িগ্রামে ৬৫, লালমনিরহাটে ২০, নেত্রকোনায় ২৫ এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফটিকছড়িতে ৩৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন বন্যাপরবর্তী সময়ে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাসস্থান, কৃষি ও ব্যবসায় ক্ষতির আওতায় বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে মোট ৮ হাজার ১৭০টি পরিবারের মধ্যে ৩০ কোটি ১৯ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শেরপুরের ১৯৯টি পরিবারকে ৪০ হাজার করে মোট ৭৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

এর বাইরে বন্যাকবলিত ১০০টি দরিদ্র পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে প্রতিটি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দামের ১০০টি অটোরিকশা দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

সংসদে নারী আসনব্যবস্থা সংস্কারের এখনই সময়

নারী নেতৃত্ব কেবল ন্যায়বিচারের প্রশ্ন নয়, এটি দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুরক্ষা ও গণতন্ত্র উন্নয়নের প্রমাণিত উপায়। ইউএনডিপির হিসাব বলছে, যেসব দেশে সংসদে অন্তত ৩০ শতাংশ নারী রয়েছেন, সেখানে মা ও শিশুর মৃত্যুহার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। সুইডেনে নারী সংসদ সদস্য ৪৫ শতাংশ হওয়ার পর নারীবান্ধব নীতি দ্বিগুণ হয়েছে এবং কর্মক্ষেত্রে ও পরিবারে লিঙ্গবৈষম্য কমেছে। বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সমান হলে জিডিপি প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত বাড়তে পারে।

নীতি নির্ধারণে নারী থাকলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ে। বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সমান হলে জিডিপি অর্ধেক পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বাংলাদেশের সংসদে নীতিনির্ধারণে নারীরা অংশ নিতে পারেন দুইভাবে—সাধারণ আসনে নির্বাচিত হয়ে বা ৫০টি সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে। তবে সাধারণ আসনে নির্বাচিত নারীর সংখ্যা খুবই কম। ২০০১ সালে ৭ জন, ২০০৮ সালে ২০ জন, ২০১৮ সালে ২২ জন (৭.৩৩ শতাংশ) নির্বাচিত হয়েছেন।

দুই ব্যবস্থা মিলেও সংসদে নারীর অংশগ্রহণ কখনোই ২২ শতাংশ দাঁড়ায়নি, যদিও দেশের জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী। সংরক্ষিত ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় কার্যকর অংশগ্রহণ হয়নি, মনোনয়নও বাড়েনি, অথচ এত বছরেও এ ব্যবস্থার কোনো সংস্কার হয়নি।

সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থায় নারী সংসদ সদস্যরা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় তাঁদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা থাকে না। ফলে জনগণের সঙ্গে তাঁদের জবাবদিহিমূলক সম্পর্ক তৈরি হয় না; মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতেও তাঁদের সম্পৃক্ততা কমে যায়। নিজের এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে গেলেও তাঁরা বাধার মুখে পড়েন। কারণ, সাধারণ আসনের সংসদ সদস্য মনে করেন, এটি তাঁর একক দায়িত্ব।

সর্বশেষ যদি রাজনৈতিক দলগুলো ১০০টি আসন সংরক্ষণ এবং সেখানে সরাসরি নির্বাচনে একমত না হয়, তাহলে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়। শুরুতে বর্তমান পদ্ধতিতে ৫০টি সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে সাধারণ আসনে ন্যূনতম ৩০টি আসনে নারী মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করা হবে। এটি আরপিও সংশোধন করে এ বিষয়ে ধারা যুক্ত করতে হবে।

প্রশাসনের সহায়তা মেলে না। দলেও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কেন্দ্র থেকে তাঁদের ‘বিরোধ এড়িয়ে চলার’ নির্দেশ দেওয়া হয়। অনেক সময় নারী সংসদ সদস্যদের সরকারি অনুষ্ঠান বা মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। প্রকল্প প্রস্তাব দিলেও বলা হয়, ‘এ এলাকা আপনার না।’ সংসদ সদস্য হয়েও তাঁদের বাস্তব কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ সীমিত।

সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন সরাসরি দল থেকে আসে, যেখানে যোগ্যতা নয়, ঘনিষ্ঠতা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও আর্থিক লেনদেন প্রাধান্য পায়। অভিজ্ঞ নারী নেত্রীরা উপেক্ষিত হন, বরং ত্যাগী পুরুষ নেতার স্ত্রী বা আত্মীয়রা পুরস্কারস্বরূপ মনোনয়ন পান। এতে নারীদের মধ্যে ‘কাকে খুশি করলে মনোনয়ন মিলবে’ মনোভাব তৈরি হয়।

এতে নারীদের সাধারণ আসনে অংশগ্রহণের আগ্রহ কমে যায়। তাঁদের বলা হয়, ‘তোমাদের জন্য তো সংরক্ষিত আসন আছে।’ এতে সাধারণ আসনে মনোনয়ন কমে যায় এবং দলও যোগ্য নারী খুঁজে পায় না। ফলে সংরক্ষিত আসন কেবল সংখ্যা বাড়ায়, নেতৃত্ব বা ক্ষমতায়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে না।

এই পরিস্থিতি রাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতিকর। সংসদে যদি সদস্যরা জনগণের সমস্যা না তুলতে পারেন, আইন প্রণয়নে অংশ না নেন, তাহলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়। সরকার যে বেতন, ভাতা ও সুবিধা দেয়, তা যদি কার্যকর নেতৃত্বে রূপ না নেয়, তবে সেটি একপ্রকার অর্থনৈতিক অপচয় হিসেবেই গণ্য হয়।

প্রশ্ন হতে পারে, বিকল্প কী হতে পারে? আসলে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তিনটি ধরনের ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে—

১. নির্বাচনের মাধ্যমে সংরক্ষিত আসন

মোট আসনসংখ্যা ৪০০ করে এর মধ্যে ১০০টি (২৫ শতাংশ) আসন নারীর জন্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এই আসনগুলোতে শুধু নারী প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। প্রতি চারটি আসনের একটি সংরক্ষিত থাকবে, এগুলো ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে নির্ধারিত হবে এবং নির্বাচন কমিশন আগেই তা ঘোষণা করবে।

২. সাধারণ আসনে বাধ্যতামূলক নারী মনোনয়ন

বাকি ৩০০ আসনে অন্তত ১০ শতাংশ নারী মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করা উচিত। এ বিষয়ে আরপিও-তে ধারা সংযোজন করে তা আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। এই ধারা লঙ্ঘন করলে দলীয় নিবন্ধন স্থগিত, অর্থদণ্ড বা পাবলিক ফান্ডিং বন্ধের মতো শাস্তির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

৩. নারী প্রার্থীদের জন্য পাবলিক ফান্ডিং

অনেক নারী প্রার্থীর নিজ নামে সম্পদ বা অর্থ না থাকায় নির্বাচনী ব্যয় বহন করা কঠিন হয়। বিআইজিডির গবেষণা বলছে, মাত্র ৪ শতাংশ নারীর নিজের নামে জমি বা সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে। তাই তাঁদের জন্য আলাদা ‘পাবলিক ফান্ডিং’ বরাদ্দ করা যেতে পারে। অনেক দেশ ইতিমধ্যেই এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

রুয়ান্ডায় নারী প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত তহবিল ব্যয় বাধ্যতামূলক এবং বেশি নারী জয়ী হলে বাড়তি অর্থ মেলে। নেপালে ‘ইনক্লুশন রিপোর্ট’ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন প্রশিক্ষণ ও প্রচার ব্যয় সহায়তা করে। সুইডেনে ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি বোনাস’ দেওয়া হয়, যেখানে নারী-পুরুষ সমান মনোনয়নের ভিত্তিতে বাড়তি অনুদান দেওয়া হয়।

ইউএন উইমেন ও ইন্টারন্যাশনাল আইডিয়া বলছে, আর্থিক সহায়তা থাকলে নারীদের জয়ের সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়।

সর্বশেষ যদি রাজনৈতিক দলগুলো ১০০টি আসন সংরক্ষণ এবং সেখানে সরাসরি নির্বাচনে একমত না হয়, তাহলে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়। শুরুতে বর্তমান পদ্ধতিতে ৫০টি সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে সাধারণ আসনে ন্যূনতম ৩০টি আসনে নারী মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করা হবে। এটি আরপিও সংশোধন করে এ বিষয়ে ধারা যুক্ত করতে হবে।

পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে এটি বাড়িয়ে ৬০টি মনোনয়ন এবং সংরক্ষিত আসন ২৫-এ নামিয়ে আনা হবে। পরেরবার ৩৩ শতাংশ নমিনেশন সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের সাধারণ আসনে অংশগ্রহণ বাড়বে এবং সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজনীয়তা ধীরে ধীরে কমে যাবে।

এই পুরো প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন শুধু সংখ্যা নয়, গুণগত দিক থেকেও টেকসই ও কার্যকর হবে।

লিপিকা বিশ্বাস নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন–বিষয়ক বিশ্লেষক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংসদে নারী আসনব্যবস্থা সংস্কারের এখনই সময়
  • প্রতি গোলে ১০০টি করে গাছ লাগায় ব্রাজিলের এই ক্লাব