পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার নির্মাণাধীন মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধনের আগেই সমুদ্রে বিলীনের পথে। সমুদ্রতীরঘেঁষা এ সড়কে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠেছে।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি গত বুধবার সকাল ৬টার দিকে পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এর প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বড় বড় ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে শুরু হওয়া জোয়ারের তাণ্ডবে মেরিন ড্রাইভটির তিন-চার স্থানের অনেকাংশ ভেঙে গেছে। ভাঙা অংশ ঢেউয়ের তোড়ে সমুদ্রে চলে গেছে। এমনকি মেরিন ড্রাইভ রক্ষায় তৈরি গাইডওয়াল, ওয়াকওয়ে ভেঙে পড়ে রয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় সাধারণ মানুষ। 
স্থানীয়দের ভাষ্য, নিম্নমানের কাজ ও সঠিক তদারকি না থাকায় মেরিন ড্রাইভটি টেকসই হয়নি। ফলে অতিদ্রুত এটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের ধারণা– আইলা, সিডর বা এই ধরনের শক্তিশালী কোনো ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানলে নির্মাণাধীন এই সড়কটি পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে।
জানা যায়, ২০২৪ সালে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পর্যটকদের সুবিধা ও কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় মেরিন ড্রাইভের আদলে দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজ হাতে নেয় কুয়াকাটা পৌরসভা। এর কাজের মান নিয়ে স্থানীয় অনেকের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। 
স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম জানান, তাদের চোখের সামনে জনগণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। নামমাত্র মেরিন ড্রাইভ, যেখানে নেই কোনো রড, নেই টেকসই কোনো গাইড ওয়াল। এটি ভেঙে পড়েছে। আসছে বর্ষাকালে সমুদ্রের ঢেউ আরও তীব্র হবে। প্রতি বর্ষাতেই সমুদ্র আগ্রাসী রূপ ধারণ করে, উপকূলের অনেক ক্ষতি হয়।
মিজানুর রহমান নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মেরিন ড্রাইভের কাজের নামে চলছে হরিলুট। কাজে কতটা অনিয়ম হয়েছে তা এখন স্পষ্ট। এখানে একটি টেকসই মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাস ও ঢেউয়ের তোড়ে কুয়াকাটা সৈকতের আশপাশের পুলিশ বক্স এলাকা, সরদার মার্কেট, ফুচকা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনার অনেকাংশ ভেঙে পড়েছে। সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মাইকিং করে সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা।
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার মো.

বেল্লালকে কল করলে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী নিয়াজ মাহমুদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তাদের খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ইয়াসীন সাদিক বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে সড়কটি রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
এ বিষয়ে ইউএনও রবিউল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের পর শত তদবির করা হলেও ঠিকাদারকে রাস্তার বাকি বিল দেওয়া হয়নি। বিল ও জামানত জমা আছে। এই রাস্তার ক্ষতিপূরণ আদায় করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা