লোহাগাড়ার তিন খালে ভাঙন, লোকালয়ে ঢুকছে পানি
Published: 31st, May 2025 GMT
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ডলু, হাতিয়া ও হাঙর খালের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে পানি। ওই এলাকার বাসিন্দারা বসতঘর বিলীন হওয়ার আশংকায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। যার ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এবং খালের পানি বৃদ্ধি পেলে বিলীন হয়ে যেতে পারে প্রায় ৩ শতাধিক বসতঘর।
জানা যায়, আধুনগর সরদানী পাড়ায় ডলু খালের পাড় ঘেষা গারাঙ্গিয়া রশিদিয়া সড়কে এই ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। আধুনগর বাজার থেকে মছদিয়া হয়ে গারাঙ্গিয়ার আলুরঘাট পর্যন্ত এই সড়ক বিস্তৃত। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সওদাগর পাড়া, সিপাহী পাড়া ও মছদিয়া বড়ুয়া পাড়ার প্রায় ৫৬ হাজার লোকজন যাতায়াত করেন।
অন্যদিকে, আধুনগর ইউনিয়নে হাতিয়ার খালে রুস্তমের পাড়া সড়কের মঞ্জুরের দোকানের উত্তর পাশে, দক্ষিণ আধুগনগর হিন্দু পাড়া ও সিকদার পাড়ায় নতুন ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া ডলু খালে সরদনী পাড়া, হাঙর খালে ফরিয়াদিরকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ও ধলিবিলা আইজানি বাপের পাড়ায় পুরাতন ভাঙন দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে আতংকের মধ্যে রয়েছেন ওইসব এলাকার লোকজন। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানির ঢলে বিলীন হয়ে যেতে পারে বহু বসতঘর।
গত বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলার সিংহভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যার ফলে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কেও মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও উপজেলার আমিরাবাদ, লোহাগাড়া সদর, পুটিবিলা, কলাউজান, চুনতি, পদুয়া, চরখা ও বড়হাতিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডলু, টংকাবতী, হাঙ্গর, হাতিয়া, কলপাগলি, বোয়ালিয়া, থমথমিয়া ও সুখছড়ি খালসহ বিভিন্ন ছড়ার পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব খালের অনেক স্থানে ভাঙনের আশংকা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের সদস্য নাছির উদ্দিন জানান, ধলিবিলা এলাকায় হাঙর খালের ভাঙন সংস্কার না করায় পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে ৭/৮টি বসতঘর বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়া ফরিয়াদিরকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে হাঙর খালের ভাঙনে লোকালয়ে পানি ঢুকে মুন্সির পাড়া, সিকদার পাড়া, দরগা মুড়া, নিজতালুক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
আধুনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন জানান, টানা বর্ষণে হাতিয়ার খালে নতুন করে ৩টি ভাঙন দেখা দিয়েছে। রুস্তমের পাড়া সড়ক ভাঙনের ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরো বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে। এছাড়া আধুনগর সর্দারনী পাড়ায় ডলু খালের ভাঙন সংস্কার না হওয়ায় পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পানি বৃদ্ধি পেলে বসতঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি লোহাগাড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মো.
উপজেলার পুটিবিলা ছুটার পাড়া এলাকায় ডলু খালের পাড় ঘেষে চলাচলের রাস্তার। এ বর্ষায় সড়কটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে। টানা ভারি ভর্ষণে পাহাড়ি ঢলে ডলু নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ভাঙ্গতে শুরু করেছে ছাটার পাড়ায় খালের পাড়। ভেঙে গেছে পাড়ঘেষা চলাচলের রাস্তা। দুর্ভোগে পড়েছে চলাচলরত জনসাধারণ।
বয়োবৃদ্ধ আবুল হাশেম বলেন, গেল তিন/চার বছর থেকে লোহাগাড়ার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এর আগে এমন ভয়াবহ ভাঙন দেখেনি। খালগুলো থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে খালের গভীরতা বেড়ে যায়। যার ফলে নদীর পাড় ও পাড় ঘেষা সড়ক এবং ঘরবাড়ি খালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প হ ড় ঢল উপজ ল র এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
নালিতাবাড়ীতে বন্য হাতির আক্রমণে ৩০ বসতবাড়ি ভাঙচুর, ধান-চাল খেয়ে সাবাড়
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বাতকুচি টিলার ঢালে গতকাল শুক্রবার রাতে ৩০টি বাড়িতে হানা দিয়েছে ৩৫ থেকে ৪০টি বন্য হাতির পাল। এ সময় ঘর ভেঙে ঘরে থাকা ধান-চাল খেয়ে আসবাব তছনছ করেছে হাতির পালটি।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে একই এলাকায় হাতির আক্রমণে সুরতন নেছা (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পাশের কায়াটাবাড়ি এলাকায় বন বিভাগের বিট কার্যালয়সহ ছয়টি ঘর ভেঙে তছনছ করে হাতির দল।
বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার দাওধারা-কাটাবাড়ি পাহাড়ের টিলায় এক সপ্তাহ ধরে ৩৫ থেকে ৪০টি বন্য হাতি দল বেঁধে অবস্থান করছে। গত কয়েক দিনে হাতির আক্রমণে বাতকুচি বিট কার্যালয়, দাওধারা-কাটাবাড়ি ছয়টি বসতঘরে হামলার পাশাপাশি গত বুধবার রাতে মধুটিলা ইকো পার্কের ক্যানটিনে হামলার ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে বৃষ্টির মধ্যে হাতির পালটি বাতকুচি নামাপাড়া এলাকায় সুরতন নেছার ঘরে হানা দেয়। এ সময় হাতির আক্রমণে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর থেকে হাতির পালটি বাতকুচি পাহাড়ের টিলায় অবস্থান করছে।
আরও পড়ুনগভীর রাতে লোকালয়ে ফিরে এল হাতির পাল, বাড়িতে হামলায় নারীর মৃত্যু৩০ মে ২০২৫গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে হাতির পালটি জঙ্গল ছেড়ে বাতকুচি এলাকায় নেমে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তা, এলাকাবাসী ও এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা রাত ১১টা পর্যন্ত মশাল জ্বালিয়ে হইহুল্লোড় করে হাতির দলকে বাতকুচি জঙ্গলের দিকে ফিরিয়ে দেয়। পরে হাতির দলটি বাতকুচি নামাপাড়া এলাকায় হানা দেয়। এ সময় হাতির আক্রমণের ভয়ে পরিবারের লোকজন নিরাপদ দূরত্বে সরে পড়েন। এ সময় ৩০টি বসতঘর ভেঙে ঘরে থাকা ধান-চাল খেয়ে আসবাব তছনছ করে দেয়। শেষ রাতে দলটি বাতকুচি জঙ্গলে ফিরে যায়।
আরও পড়ুননালিতাবাড়ী সীমান্তে ৬ বসতঘর ভেঙে ধান-চাল খেয়ে গেল বন্য হাতির দল২৭ মে ২০২৫ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হোসেন আলী (৪৫) বলেন, ২৩টি পরিবারের ৩০টির বেশি বসতঘর ও আসবাব ভেঙে তছনছ করেছে বন্য হাতির দল। ঘরে থাকা ধান-চাল খেয়ে সাবাড় করেছে। এখন ধান-চাল দূরের কথা একমুঠো শর্ষেও ঘরে নেই। হাতির আক্রমণে পরিবারগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুনশেরপুরে বন বিভাগের কার্যালয়ে বন্য হাতির হানা, আসবাব তছনছ২৭ মে ২০২৫বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মশাল জ্বালিয়ে হাতির দলকে বাতকুচি জঙ্গলের দিকে ফেরাতে তাঁরা রাত ১১টা পর্যন্ত চেষ্টা করেন। পরে রাত ১২টার দিকে হাতির দল বাতকুচি নামাপাড়া এলাকায় বসতঘর ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, হাতির দলটি এখন বাতকুচি এলাকার জঙ্গলে অবস্থান করছে। এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনহাতির আক্রমণে মৃত্যু: উপার্জনক্ষম দুজনকে হারিয়ে দিশেহারা দুটি পরিবার২৪ মে ২০২৫