যুক্তরাজ্যে অভিবাসন প্রসঙ্গে রাজনীতিবিদরা অনেক মিথ্যা কথা বলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় কিছু বিষয় খুব সহজ বলে দাবি করা হয়। যেমন– ব্রিটেনে প্রবেশ করা খুব সহজ; আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া খুব সহজ; নাগরিকত্ব অর্জন করাও খুব সহজ। যুক্তরাজ্যকে নির্জীব দেশ হিসেবে তুলে ধরা হয়, যেন এভাবেই ভবিষ্যতের ব্রিটিশদের গ্রহণ করা হয়, যাদের তারা কোনো চার্জ, পরীক্ষা বা আমন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না। 

‘উন্মুক্ত সীমান্ত’ কথাটির ‘ব্যর্থ পরীক্ষা’ মোকাবিলায় সরকারের সর্বশেষ বহু নীতি এসব মিথ্যা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। কারণ এটি অভিবাসীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তোলার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এই নীতিগুলোর মধ্যে একটি ব্যাপকভাবে নজর কেড়েছিল। সেটি হলো কিয়ার স্টারমারের উৎকণ্ঠাজড়িত বক্তৃতার একটি তুচ্ছ বিষয়। তবে এর পরিণতি হবে সাংঘাতিক। এই নীতিমালায় ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সময়সীমা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হচ্ছে। তারপর আপনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন এবং নাগরিকত্ব পাবেন। যেখানে পাঁচ বছরের শর্তাধীনে একজন নাগরিকত্ব পেতেন, সেখানে এ খবর আমাকে হতাশ করেছে। 

যদি সরকারের নতুন নীতিমালা কার্যকর হয়, তাহলে নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এখন কমপক্ষে ১১ বছর সময় নেবে। তা ছাড়া এ হিসাবে ব্রিটেনে ছাত্রত্ব বা অন্যান্য ভিসায় কাটানো সময় অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। আমি অভিজ্ঞতা থেকে জানি, পাঁচ বছর ইতোমধ্যে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে চাকরি ধরে রাখা এবং আইনের আকস্মিক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘ পরীক্ষা। সেই সময় দ্বিগুণ করার ফলে পেশাদার নিরাপত্তা থেকে শুরু করে অভিবাসনের ব্যাপারে উদ্বেগের সেই আকুলতা তথা ‘অন্তর্ভুক্তি’ সবকিছুই যুক্ত রয়েছে। 
বহু তথ্য সংক্ষেপে তুলে ধরা ও ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তের কারণে নাগরিকত্বের ভুল তথ্য সরবরাহ করে। ব্রেক্সিট ও মহামারির পর সংগ্রামরত স্বাস্থ্য ও সেবা খাতে সহায়তা করার প্রয়োজনীয়তার কারণে কর্মভিসার সংখ্যা স্বল্প মেয়াদে বৃদ্ধি পায়। আর অভিবাসন সংখ্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিভিন্নভাবে ভাগ করার ত্রুটি। যেমন শিক্ষার্থী ও স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে যারা দীর্ঘমেয়াদি ভিসায় প্রবেশকারী সবাই রয়ে যাবেন বলে অন্তর্নিহিত একটি ধারণা থাকে। 

২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে কর্মক্ষেত্রে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ কর্মীর পাঁচ বছর পরও বৈধ বা অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকার ছুটি ছিল। এই হিসাব অনুসারে, সব কর্মী ও তাদের পরিবার, এমনকি অর্ধেকেরও যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্বের আবেদন করার সম্ভাবনা কম। আর মেয়াদ বৃদ্ধির শাস্তির যন্ত্রণা বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন হবে। বিশেষত ১০ বছরের সীমা পূর্ববর্তীদের ওপর প্রয়োগ করা অকারণে নিষ্ঠুর হবে। যারা যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন এই ধারণার ভিত্তিতে যে, নাগরিকত্ব লাভ একটি বিকল্প পছন্দ এবং সেই ভিত্তিতে তারা জীবনের বড় বড় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তারা এখন আক্ষরিক অর্থেই নিজেদের স্থির হতে পারেননি বলে মনে করেন। 
প্রস্তাবিত নতুন নিয়ম ঘোষণার পর আমি অসংখ্য চিঠিপত্র ও ফোন পেয়েছিলাম। ক্রিস্টিন নামে এক দক্ষ কর্মী ফোনে বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি এটি অন্যায্য’; যাঁর এক বছর পরেই নাগরিকত্ব লাভের কথা ছিল। ‘নতুন দেশে আসার সিদ্ধান্ত জীবনে চাট্টিখানি কথা নয়।’

এই অদূরদর্শী ও নিষ্ঠুর পরিবর্তনের আসল সংকট এখানেই। যারা এ দেশে আসেন এবং জীবন গড়ে তোলেন, সন্তান জন্ম দেন বা আনেন, সমাজ কাঠামোর অংশ হয়ে ওঠেন এবং তাদের নাগরিকত্বের সময়জুড়ে নিরন্তর কাজ করেন, তারা শিগগিরই এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ব্রিটিশ রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক দূরে সরিয়ে নিতে পারেন– যা ভয় ও উদ্বেগের চেয়ে বেশি কিছু দ্বারা চিহ্নিত হবে। যদি কখনও কোনো ‘ব্যর্থ পরীক্ষা’ হয়ে থাকে, সেটি হবে এটিই।

নাসরিন মালিক: গার্ডিয়ানের কলাম লেখক; দ্য গার্ডিয়ান 
থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য খ ব সহজ পর ক ষ চ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়

এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।

তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।

পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।

এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।

আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।

এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ