জি–৭ সম্মেলনে আমন্ত্রিত মোদি, শিখ রোষানলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নি
Published: 7th, June 2025 GMT
জি–৭ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমন্ত্রিত হবেন কি না, অবশেষে সেই জল্পনার অবসান ঘটল। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি গতকাল শুক্রবার ফোন করেন নরেন্দ্র মোদিকে। ১৫–১৭ জুন সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানান।
গতকাল রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই খবর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি লেখেন, ‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির ফোন পেয়ে আমি আনন্দিত। নির্বাচনে জয়ের জন্য অভিনন্দন ও সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। জি–৭ সম্মেলনে যোগ দিতে আমি উন্মুখ।’
তবে নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কানাডায় বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের একাংশের রোষানলে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী কার্নি। অভিবাসী শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে যাঁরা স্বাধীন খালিস্তানের সমর্থক, তাঁরা এ কারণে প্রধানমন্ত্রী কার্নির সমালোচনা করছেন। তাঁদের অভিযোগ, শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে ভারত সরকারের ওপর। তদন্তও চলছে। এই অবস্থায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো উচিত হয়নি।
খালিস্তানপন্থী শিখ সম্প্রদায়ের এই অসন্তোষ ও যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী কার্নি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী কার্নি ওই প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, অভিযোগটি বিচারাধীন। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়।
কানাডার আলবের্তার কানানাস্কিসে বসছে ৫১তম জি–৭ শীর্ষ সম্মেলন। গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও প্রতিবার অন্য কয়েকটি দেশকে এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। গত ছয়টি সম্মেলনে ভারত বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে যোগ দিয়েছে। কানাডা এবার এই সম্মেলনের উদ্যোক্তা, কিন্তু সে দেশের সাবেক সরকারের আমলে নিজ্জর হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারত-কানাডা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ওই হত্যায় ভারতের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। যদিও ভারত তা অস্বীকার করেছিল।
সেই থেকে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। দুই দেশই পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার করে। পরবর্তী সময় নির্বাচনে নতুন সরকার গঠিত হয়। নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে অভিনন্দন জানান মোদি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ফোন করেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত অনিতা আনন্দকে। তখন থেকেই মনে করা হচ্ছিল, সম্পর্কের শীতলতা হয়তো কাটতে চলেছে।
তবে শীতলতা সত্যিই কাটছে কি না, জানার জন্য সবাই অপেক্ষা করছিল জি–৭ সম্মেলনে মোদি আমন্ত্রিত হন কি না দেখতে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অনেক দিন আগেই। কিন্তু মোদির জন্য কোনো বার্তা জুন মাসের গোড়াতেও আসেনি। তা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে যথেষ্ট জল্পনা চলছিল। মনে করা হচ্ছিল, যেকোনো কারণেই হোক নতুন সরকার মোদিকে আমন্ত্রণ জানাতে হয়তো এখনো দ্বিধান্বিত। ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দল এ নিয়ে সরকারের সমালোচনাও শুরু করে দেয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা ভারতীয় কূটনীতির আরও একটি ব্যর্থতা। অবশেষে গতকাল সব জল্পনার অবসান ঘটল মোদিকে কার্নি ফোন করায়।
শিখ সম্প্রদায়ের একাংশের তীব্র বিরোধিতা এবং মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী কার্নি গণমাধ্যমকে বলেছেন, বৈশ্বিক দুনিয়ায় ভারতের গুরুত্ব অনুধাবন করেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র। বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের কেন্দ্রে তার অবস্থান। সেই কারণেই তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
কার্নির এই যুক্তি অবশ্য অনুমোদন করেনি সে দেশে বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের একাংশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আমন ত র ত র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।