রাজশাহীতে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পুঁজি গায়েব
Published: 8th, June 2025 GMT
রাজশাহীতে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম না পেয়ে অনেকেই ফেলে দিয়েছেন। গরুর চামড়ার দাম গত বছর ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবার তা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার ওপরে কেউ নিচ্ছেন না। এতে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা মূলধন হারিয়ে ধরাশায়ী হয়ে পড়েছেন।
পাইকার ক্রেতারা বলছেন, এবারের চামড়া রোগাক্রান্ত গরুর। এছাড়া লবণের দাম বেশি। প্রচণ্ড গরমে অধিকাংশ চামড়া নষ্ট হবার পথে। এ কারণে এবার দাম কম।
ঈদের দিন সকাল থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা গ্রামাঞ্চল ঘুরে চামড়া কেনেন। এবারও তারা একইভাবে চামড়া কিনেছেন। তারা বলেন, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখেছি, সরকার গরুর চামড়া ১ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এটা দেখে গরুর চামড়া তারা কিনেছেন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার বেশি কেউই দাম বলছে না।
ঈদের দিন বিকেলে প্রতি বছরের মত একদিনের চামড়ার হাট বসে পুঠিয়া উপজেলা সদরে। এখানে আলী হোসেন নামের এক মৌসুমী ব্যবসায়ী ২০টি গরুর চামড়া কিনেছেন ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে। কিন্তু বিক্রি করেছেন ৪০০ টাকা করে। আলী হোসেন বলেন, টিভিতে দেখেছি সরকার ১ হাজার ৩০০ টাকা করে দাম ধরে দিয়েছে। তাই বেশি দামে কিনেছি। বিক্রি করে সব পুঁজি শেষ।
দেলোয়ার হোসেন নামের আরেক মৌসুমী ব্যবসায়ী বলেন, ছাগলের চামড়া গত বছর ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার ১০ টাকা। এরমধ্যে খাজনা দিতে হয় ৫ টাকা। ভ্যানভাড়া পড়েছে ১০ টাকা। এই দামে চামড়া বিক্রি করে আলস টাকাও উঠছে না। পকেট থেকে লোকসান হচ্ছে। তাই রাগ করে ২৫টা চামড়া ফেলে দিয়েছি।
চামড়ার পাইকার ক্রেতা আব্দুল ওয়াহাব বলেন, এবার লবণের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তীব্র গরমে চামড়ার মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ গরুর চামড়া লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় মান খুবই খারাপ। এ কারণে সরকার বেশি দাম ধরে দিলেও বাজারে দাম কম।
রাজশাহী জেলা চামড়া সমিতির নেতৃবৃন্দের দাবি, এবার চামড়া কেনা ও সাময়িক সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে লবণ অনুদান দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই লবণ সমিতিভুক্ত ব্যবসায়ীরা সবাই পায়নি। মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলোকে বেশি পরিমাণ লবণ দেওয়া হয়েছিল। ফলে এর থেকে ব্যবসায়ীরা তেমন উপকৃত হয়নি। অনুদান দেওয়া লবণের বেশিরভাগই বাজারে বিক্রি হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ৯৭ জন। তাদের অধীনে প্রায় ৩ হাজারের বেশি মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জেলার গোদাগাড়ী, তানোর, বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও পবা ছাড়াও রাজশাহী শহরে ঘুরে চামড়া কেনেন। শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত তারা রাজশাহীতে ৪৭ হাজার চামড়া কিনেছেন। রাজশাহীতে গরু খাসি বকরি ভেড়া মিলে কোরবানি হয়েছে তিন লাখ ৩৫ হাজার পশু।
সমিতিভুক্ত ব্যবসায়ীদের চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার ৪৫০টি। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নাটোর মোকামের জন্য কিছু চামড়া কিনেছেন। সমিতির ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র গরুর চামড়াই কিনেছেন। আড়তে চাহিদা না থাকায় খাসির চামড়া তারা কেনার প্রয়োজনবোধ করেননি। রাজশাহীতে খাসি বকরি ভেড়া কোরবানি হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৩৪টি। খাসির চামড়া আড়তে না নেওয়ায় বিপুল পরিমাণ এই চামড়ার অর্ধেকের বেশি এখনো অবিক্রীত অবস্থায় রয়ে গেছে।
রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী (গ্রুপ) সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, গরুর চামড়া কোথাও কোথাও ৭০০ টাকা পর্যন্ত কেনা-বেচা হয়েছে। খাসি বকরি ও ভেড়ার চামড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা করে কেনা-বেচা হয়েছে। এবার গরুর চামড়ায় গুরুতর সমস্যা হয়েছে। লাম্পি স্কিন ও অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত অনেক গরু কোরবানি করেছেন লোকজন। সংগৃহীত চামড়ার ৩০ শতাংশ গরুর চামড়া নষ্ট। এসব চামড়া ঢাকায় ট্যানারিতে বিক্রি করতে পারব না। অন্যদিকে খাসির চামড়ারও অধিকাংশই কাটা ও ফুটা।
চামড়া সমিতির নেতা আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, কোনদিন সীমান্ত পথে চামড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হয় না। কিন্তু প্রশাসন অকারণে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় চামড়া স্থানান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এতে বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজশাহী থেকে নাটোরের বড় মোকামে চামড়া স্থানান্তর করতে না পারলে বিপুল পরিমাণ চামড়া শুধুমাত্র সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ এতো বিপুল পরিমাণ চামড়া সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা আমাদের নেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক রব ন ব প ল পর ম ণ ব যবস য় র ক রব ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ দমনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন, ডেমোক্র্যাটদের ক্ষোভ
অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তল্লাশি অভিযানের জেরে টানা দুই দিন ধরে বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট দলীয় গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম।
স্থানীয় সময় রোববার সকাল থেকে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের লস অ্যাঞ্জেলেসে দেখা গেছে। এর আগে দুই দিন সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। খবর-বিবিসি
লস অ্যাঞ্জেলেসের সিটি হলের কাছে রোববার ভোরে হেলমেট পরা সেনাদের অস্ত্র এবং হাতে ঢাল নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। দুপুরের পর আরও বিক্ষোভ হওয়ার আশঙ্কায় আগে থেকেই সেখানে তাঁদের মোতায়েন করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়। বিশেষ করে লাতিন-অধ্যুষিত একটি ডিস্ট্রিক্টে অভিযানে গেলে স্থানীয় লোকজন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। সেখানকার প্যারামাউন্ট ডিস্ট্রিক্টে বিক্ষুব্ধ মানুষদের সরাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়, লাঠিপেটা করা হয়।
আইসিইর অভিযানে এ সপ্তাহে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ১১৮ জন অনিবন্ধিত অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ জন আটক হয়েছেন গত শুক্রবার। যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট-দলীয় গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এ অভিযানকে ‘নিষ্ঠুর’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় হোয়াইট হাউস থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব অভিযান যুক্তরাষ্ট্রে ‘অবৈধ অপরাধীদের’ অনুপ্রবেশ বন্ধ ও তাদের প্রতিহত করার জন্য অপরিহার্য। লস অ্যাঞ্জেলেসের এখনকার পরিস্থিতিতে যেকোনো সহিংসতা কিংবা ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করার চেষ্টায় ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোর ঘোষণা দিয়েছেন টম হোম্যান।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এ অভিযানকে ‘নিষ্ঠুর’ বলে নিন্দা জানান। এ ঘটনায় হোয়াইট হাউস থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব অভিযান যুক্তরাষ্ট্রে ‘অবৈধ অপরাধীদের’ অনুপ্রবেশ বন্ধ ও তাঁদের প্রতিহত করার জন্য অপরিহার্য। এই সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ব্যর্থ’ ডেমোক্র্যাট নেতারা তাঁদের নাগরিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছেন। এমন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে দেওয়া অরাজক পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের আদেশে সই করেছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
অভিযান চলাকালে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় কয়েকজনকে আটকের কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) উপপরিচালক ডন বনগিনো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স পোস্টে বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে তিনি লেখেন, ‘আপনি অরাজকতা করলে আমরা আটক করব। আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে।’ আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ডেভিড হুয়ের্তা রয়েছেন। তাঁকে শুক্রবার আটক করা হয়। হুয়ের্তা সার্ভিস এমপ্লয়িজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়নের (এসইআইইউ) ক্যালিফোর্নিয়া শাখার সভাপতি।
তবে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উসকানি’ বলে মন্তব্য করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ঘাটতির কারণে নয়, বরং তাঁরা একটি নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে চান। এ সময় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তাদের (ট্রাম্প প্রশাসনকে) সে সুযোগ দেবেন না। কখনো সহিংস হবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করুন।’
ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরোধিতা করেছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নও (এসিএলইউ)। মানবাধিকার সংগঠনটি মনে করে, লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর ট্রাম্পের নির্দেশ ‘অপ্রয়োজনীয়, উসকানিমূলক ও ক্ষমতার অপব্যবহার’।
এসিএলইউর ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রজেক্টের পরিচালক হিনা শামসি বলেন, ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দাদের ‘ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে’।
এদিকে বিক্ষোভ দমনে প্রয়োজনে লস অ্যাঞ্জেলেসে মেরিন সেনা মোতায়েনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তিনি জানান, লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ঘটনায় ক্যাম্প পেন্ডলটনে থাকা মেরিন সেনারা মোতায়েনের জন্য ‘উচ্চ সতর্কতায়’ রয়েছেন।
বিক্ষোভ মোকাবিলায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘোষণা দিয়ে শনিবার এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, সহিংসতা অব্যাহত থাকলে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ওই ঘাঁটির মেরিন সেনাদেরও মোতায়েন করা হতে পারে।