ঈদের ছুটিতে সর্বাধিক পর্যটক সমাগম ঘটে দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। পর্যটকের চাপ সামলানোর জন্য যে নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকার কথা, সেটা নেই বললেই চলে। ফলে পর্যটকের মৃত্যুর মতো বেদনাদায়ক ঘটনাও সেখানে ঘটছে। এবারের ঈদের ছুটিতে দুই দিনেই অন্তত ছয়জন পর্যটক সমুদ্রে গোসল করতে নেমে মারা গেছেন। বারবার এমন ঘটনা ঘটলেও এর কোনো কার্যকর প্রতিকার মিলছে না। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত বলা হলেও কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্ভবত সবচেয়ে করুণই বলতে হবে। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের মাত্র পাঁচ কিলোমিটারে কিছু লাইফগার্ড ও বিচকর্মী থাকেন, বাকি সৈকত এলাকা একেবারেই অরক্ষিত। বিশেষ করে টেকনাফ, হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর—সব জায়গায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলেও নেই কোনো সমন্বিত উদ্ধারব্যবস্থা। পর্যটকেরা গুপ্তখালের হুমকি বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছেন।

সরকার, হোটেল-মোটেলের মালিক, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি—সবাই এই বিশাল পর্যটনশিল্প থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছে। কিন্তু সেই আয়ের ন্যূনতম অংশও পর্যটকের জীবনের নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে না। এই অবহেলা অমার্জনীয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বছরে কয়েক শ কোটি টাকা আয়ের বিনিময়ে কি একটি সি-নেটিং ব্যবস্থা, আধুনিক লাইফগার্ড ইউনিট বা পর্যাপ্ত মনিটরিং টাওয়ার তৈরি করা যায় না?

বিশ্বের উন্নত সমুদ্রসৈকতগুলোতে নির্দিষ্ট সুইমিং জোন থাকে, যেখানে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়। বাংলাদেশেও এক যুগ আগে এমন এক উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কয়েক মাসেই ঢেউয়ের ধাক্কায় ধ্বংস হয় এবং তারপর আর কেউ ফিরে তাকায়নি। অথচ ভাঙনরোধ ও নিরাপদ গোসলের জন্য প্রযুক্তিগত ও পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব।

শুধু প্রশাসন নয়, হোটেল ব্যবসায়ী ও স্থানীয় পর্যটন ব্যবস্থাপনার প্রতিটি অংশীদারও দায় এড়াতে পারেন না। পর্যটকেরা শুধু নিজেরা সচেতন থাকাই যথেষ্ট নয়, তাঁদের সচেতন করাও গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত লাইফগার্ড, বিচকর্মী ও মনিটরিং ক্যামেরা এখানে যুক্ত করা উচিত। টানা কয়েক দিনের ছুটিতে অতিরিক্ত স্বেচ্ছাসেবী বা খণ্ডকালীন লাইফগার্ড বা বিচকর্মী নিযুক্ত করা যেতে পারে।

যদি পর্যটক সৈকতে গিয়ে প্রাণ হারান, তাহলে সেটির দায় কেবল ‘নিজ দোষে দুর্ঘটনা’ বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় না। পর্যটক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ, উদ্ধার এবং সেবার জন্য জরুরি তহবিল গঠন করা হোক। হোটেলমালিকদের নিয়েও একটি সমন্বিত উদ্যোগ গড়ে তোলা হোক, যাতে তাঁরা নিরাপদ পর্যটনে অংশ নেন। মানুষ আনন্দ করতে পরিবার–স্বজন–বন্ধু নিয়ে ঘুরতে গিয়ে এভাবে লাশ হয়ে ফিরবে, তা মানা যায় না। আমরা কক্সবাজারে আর কোনো পর্যটকের মৃত্যু দেখতে চাই না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইফগ র ড ব যবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়ে বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বরের বাবার মৃত্যু

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় বিয়ে বাড়ির আলোকসজ্জায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন বরের বাবা বিষু পাল (৬৫)। বুধবার (৩০ জুলাই) উপজেলার গুনই মদনমুরত গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, বিষু পালের বড় ছেলে বিজয় পালের বিয়ে ঠিক হয় ৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার)। সেই উপলক্ষে বাড়িতে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়। বাড়ির একটি গ্রিলে অস্থায়ী বিদ্যুৎ লাইনের তার ঝুলছিল। যেখানে লিকেজ ছিল। সকালে অসাবধানতাবশত সেই গ্রিলে হাত দিলে বিষু পাল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্দার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

আরো পড়ুন:

কুড়িগ্রামে সাপের কামড়ে সাপুড়ের মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ কৃষকের মৃত্যু

বানিয়াচং থানার এসআই সজিব ঘোষ জানান, ঘটনাটি মর্মান্তিক। বিয়ের আনন্দময় পরিবেশ হঠাৎ করে বিষাদে পরিণত হয়েছে। বিকেলে বিষু পালের পরিবারের সদস্যরা বিনা ময়নাতদন্তে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য হবিগঞ্জ জেলা সদরে গিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

ঢাকা/মামুন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ