বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো অসুবিধা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিক। তাই যেকোনো সময় তিনি আসতে পারেন। তিনি যে সময় মনে করবেন, তখনই দেশে ফিরতে পারবেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের সালনা হাইওয়ে থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারতে যদি বাংলাদেশের লোক থাকে, অবশ্যই বাংলাদেশ তাদের গ্রহণ করবে, তবে সেটা যথাযথ প্রক্রিয়ায় (প্রপার চ্যানেলে) আসতে হবে। কিন্তু ভারত এটা অনুসরণ না করে জঙ্গল ও রাস্তা দিয়ে ঠেলে (পুশইন) পাঠাচ্ছে। বেআইনিভাবে অমানবিক ঠেলে পাঠানো হবে না। এ ব্যাপারে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানানো হয়েছে।

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান, হাইওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শফিকুল ইসলাম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো.

যাবের সাদেকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পরে উপদেষ্টা বিশিয়া কুড়িবাড়িতে বিজিবি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। দুপুরে তাঁর বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) শ্রীপুর আঞ্চলিক কেন্দ্র পরিদর্শনের কথা আছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাইফেল–পিস্তল নিয়ে খেলার শুরু, ১৬২ বছর পর যেখানে দাঁড়িয়ে জাপানের ক্রিকেট

ব্রিটিশরা সেদিন ম্যাচটি খেলেছেন কোমরে পিস্তল ঝুলিয়ে। কারও কারও কাছে রাইফেলও ছিল।

ক্রিকেট ম্যাচে রাইফেল–পিস্তলের উপস্থিতি খুবই অপ্রত্যাশিত বিষয়। তবে ১৮৬৩ সালের ২৫ জুন ইয়োকোহামায় সেদিনের ম্যাচে ব্রিটিশদের কাছে অন্য কোনো পথ ছিল না। ইতিহাস ও কিংবদন্তি অনুসারে, স্থানীয় সামুরাই যোদ্ধারা সেদিন ব্রিটিশ বণিকদের ওপর আক্রমণ করতে পারেন, এমন শঙ্কা ছিল। কারণ? জাপান ছাড়তে অসম্মতি জানানো বিদেশিদের হত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন সামুরাই যোদ্ধারা। বাধ্য হয়ে সেখানে বসতি গড়া ইউরোপীয়রা প্রতিরক্ষার জন্য ইয়োকোহামায় ব্রিটিশ নৌবাহিনীর দ্বারস্থ হয়।

ব্রিটিশ বণিকদের রক্ষা করতে সেদিন তাদের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করেছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনী। যদিও আসল লক্ষ্য ছিল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর এ কারণেই সেই ম্যাচে অংশ নেওয়া অনেকের কাছেই পিস্তল ও রাইফেল ছিল। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে সে ম্যাচই জাপানে আয়োজিত প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ, যার মূলে ছিল আসলে সামুরাইদের হুমকি। তখন মূলত বিদেশিরাই ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন জাপানে।

তবে ১৬২ বছর পর দৃশ্যটি কিছুটা হলেও পাল্টেছে জাপানে। যদিও বেসবল–পাগল দেশটিতে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বেসবলের তুলনায় সমুদ্রে এক বিন্দু শিশিরের মতো। তবে আশার জায়গাও আছে।

জাপান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। টোকিওর মিনাতো সিটিতে গাছপালা ও পাহাড়ের কোলে অব্যবহৃত একটি স্কুল ভবন থেকে ক্রিকেট পরিচালনা করা হয় জাপানে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে এই অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, জাপানে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। আগামী বছর ঘরের মাঠে তারা এশিয়ান গেমস আয়োজন করবে। এই প্রতিযোগিতা ও ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক দিয়ে ক্রিকেট জাপানে অন্য স্তরে পৌঁছাবে বলে অ্যাসোসিয়েশনটি আশা করছে। মহাদেশীয় ও বৈশ্বিক—এ দুটি প্রতিযোগিতায় ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আগেই।

জাপান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা অ্যালান কার জাতিতে ইংরেজ। তাঁর ভাষ্য, ‘এখানে (জাপানে) মানুষের খেলার সুযোগ করে দিতেই আমার ১১ বছর কেটেছে। কাজটা সহজ হতো যদি তারা জানত এই খেলার অস্তিত্ব আছে। আসলে যেটা সেভাবে চোখে পড়ে না সেটায় তো আর মন লাগে না।’

কার জানিয়েছেন, জাপানে পূর্ণবয়স্ক ও শিশু–কিশোর মিলিয়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ নিয়মিত ক্রিকেট খেলেন। একটু অনিয়মিতভাবে খেলার সংখ্যা এর তিন গুণ। কিন্তু বেসবলের তুলনায় এটা কিছুই না। বেসবল সেখানে লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসার খেলা এবং লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্সে সোহেই ওহতানির মতো বৈশ্বিক তারকারও জন্ম দিয়েছে জাপান। যদিও জাপানে ক্রিকেট ও বেসবলের আবির্ভাব প্রায় একই সময়ে। জাপানে বেসবলের আবির্ভাব ১৮৫৯ সালে।

স্কটল্যান্ডের এক চা–বণিক জাপানে প্রথম ক্রিকেট ক্লাবের (ইয়োকোহামা ক্রিকেট ক্লাব) গোড়াপত্তন করেন ১৮৬৮ সালে। কিন্তু বিদেশি ছাড়া স্থানীয়রা এই ক্লাব কিংবা ক্রিকেটের প্রতি তেমন আগ্রহ দেখাননি।

বিংশ শতকে এসে আশির দশকে জাপানের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু হয়। আইসিসি এর কারণ ব্যাখ্যায় বলেছিল, ‘ছাত্ররা অনন্য কিছুর খোঁজে ছিল।’ তবে সেভাবে ক্রিকেটের জোয়ার তখন কিংবা পরবর্তী সময়েও তৈরি হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে বসত করা মানুষদের কল্যাণে জাপানে খেলাটির যা একটু বিস্তার ঘটেছে। জাপান জাতীয় দলে খেলা বেশির ভাগ ক্রিকেটারের মা–বাবা এসেছেন ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো থেকে।

জাপানের নারী টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক মাই ইয়ানাগিদা এএফপিকে বলেন, ‘খেলাটির নাম ক্রিকেট, তা তিনি জানতেন; কিন্তু এটা কেমন খেলা সেটা জানতেন না।’ টোকিওতে ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি ক্রিকেটের সংস্পর্শে খেলাটি সম্বন্ধে জানতে পারেন। এ মাসে জাপানের সানো সিটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রফি টুর্নামেন্টে এএফপিকে ইয়ানাগিদা আরও বলেন, ‘(ক্রিকেটে আসার আগে) আমি বেসবল ও সফটবল খেলেছি। কিন্তু ক্রিকেটে ৩৬০ ডিগ্রি কোণেই শট খেলা যায়। আমার মতে এটা এমন এক খেলা যেখানে দল হিসেবে খেলতে হয়।’

টোকিও থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে জাপান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সদর দপ্তরে সান সিটি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেটা আসলে একটি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ এবং এই স্কুল এক দশকের বেশি সময় আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। এই টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে হারের পর চ্যাম্পিয়ন হয় জাপান। হংকং, চীন, ফিলিপাইন ও মঙ্গোলিয়ার মতো ক্রিকেটের ক্ষুদ্র শক্তিমত্তার দেশগুলো এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ায় আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে জাপানের ছেলেদের দল খেলার যোগ্যতা অর্জনের কয়েক সপ্তাহ পর সান সিটি ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্টে সাফল্য পায় মেয়েরা।

জাপানে আগামী বছর আয়োজিত হতে যাওয়া এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট থাকছে এবং দীর্ঘ ১২৫ বছর পর লস অ্যাঞ্জেলেসের আসর দিয়ে ক্রিকেট ফিরবে অলিম্পিকে।
২০১০ এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে ব্রোঞ্জ জেতে জাপানের মেয়েদের দল। ২০২৩ এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে অভিষেক হয় জাপানের ছেলেদের দলের। সেবার এক জয়ের সঙ্গে একটি ম্যাচ হারে জাপানের ছেলেদের দল।

জাপানের ছেলেদের জাতীয় ক্রিকেট দলে রয়েছেন বেসবলের সাবেক তারকা শোগো কিমুরা। ১৪ বছর জাপানের খ্যাতিমান সব বেসবল দলে খেলার পর ২০১৭ সালে ক্রিকেটে নাম লেখান কিমুরা। মেয়েদের দলের অধিনায়ক ইয়ানাগিদার বিশ্বাস, এশিয়ান গেমস ও অলিম্পিক দিয়ে জাপানের ক্রিকেটে ‘বিশাল প্রভাব’ ফেলা সম্ভব। তাঁর ভাষায়, ‘অলিম্পিকের খেলা হিসেবে এটি সংবাদমাধ্যমে আসবে এবং সংবাদমাধ্যমের দ্বারা ক্রিকেট আরও পরিচিতি পাবে।’

তবে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের ক্রিকেট ইভেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা জাপানের জন্য বেশ কঠিন কাজ হবে। তাদের ছেলেদের টি–টোয়েন্টি দল র‌্যাঙ্কিংয়ে ৪২তম এবং মেয়েদের দল ৪৩তম। দুটি দলের সব খেলোয়াড়ই অপেশাদার এবং অ্যালান কারের ভাষায়, এশিয়ার বাইরের দলগুলোর সঙ্গে জাপানের ম্যাচ আয়োজন করা বেশ কঠিন কাজ। তাঁর মতে, জাপানে ক্রিকেট খুব দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলার কোনো পথ নেই। কিন্তু তাতে কাজ থেমে থাকবে না। কারণ, খেলাটিকে অনেকেই সেখানে হৃদয় থেকে ভালোবাসেন।

কারের ভাষায়, ‘আমরা একটি ভিত তৈরির চেষ্টা করছি, যেখান থেকে একসময় সবাইকে চমকে দেওয়ার আশা রাখি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ