অলসতা দূর করার জন্য নবীজির নিত্যদিনের প্রার্থনা
Published: 21st, October 2025 GMT
মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অলসতা। এটি ধীরে ধীরে মন, শরীর ও আত্মাকে দুর্বল করে দেয়। ইসলামে অলসতা শুধু কাজের অনীহা নয়, বরং এক ধরনের আত্মিক ব্যাধি বলে বিবেচিত। তাই মহানবী মুহাম্মদ (স.) প্রতিদিনের দোয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দোয়ায় বিশেষভাবে অলসতা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন।
ইসলামে কর্মপ্রেরণাকোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর বলো, তোমরা কাজ করো, আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও মুমিনগণ তোমাদের কাজ দেখবেন।” (সুরা তাওবা, আয়াত: ১০৫)
অর্থাৎ, ইসলামে কাজ বা শ্রম কোনো পার্থিব বিষয় নয়, বরং এক ধরনের ইবাদত।
অলসতা এই ইবাদতের পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই রাসুল (স.
ইমাম নববী (রহ.) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এখানে ‘বলবান’ বলতে কেবল শারীরিক শক্তি বোঝানো হয়নি; বরং বোঝানো হয়েছে আত্মিক শক্তি, কর্মোদ্যম, ও আল্লাহর আদেশ পালনে দৃঢ় সংকল্প। আর ‘দুর্বল মুমিন’ বলতে বোঝানো হয়েছে সেই ব্যক্তিকে, যে ঈমানদার হলেও অলসতা ও অনীহায় ভোগে, ফলে আমল কম করে। (শারহ সহিহ মুসলিম, ১৬/২০৫, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ২০০১)
যে ব্যক্তি সকালবেলা আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত থাকে, তার সারাদিনে বরকত নেমে আসে।আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৭৮আরও পড়ুনসম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা১২ অক্টোবর ২০২৫অলসতা দূর করতে নবীজির দোয়ানবীজি (স.) নিজে কখনও অলসতা পছন্দ করতেন না। তিনি ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন, ফজরের পর জিকির করতেন, মানুষকে কাজে উৎসাহ দিতেন এবং বলতেন, “যে ব্যক্তি সকালবেলা আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত থাকে, তার সারাদিনে বরকত নেমে আসে।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৭৮)
তিনি দোয়া করতেন,
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল হারামি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজু বিকা মিন আজাবিল কবরি, ওয়া আউজু বিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কাপুরুষতা ও বার্ধক্য থেকে, কৃপণতা থেকে। আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই কবরের আজাব থেকে এবং জীবিত ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭২২)
এই দোয়ায় দুটি শব্দ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, ‘আল-‘আজ্য’ (অক্ষমতা) ও ‘আল-কাসাল’ (অলসতা)। অক্ষমতা মানে মানসিক দুর্বলতা, মানে যখন মানুষ ভালো কিছু করতে চায়, কিন্তু আত্মবিশ্বাস পায় না। আর অলসতা হলো শারীরিক বা মানসিক অনীহা, অর্থাৎ, যখন কাজ করতে ইচ্ছা হয় না, যদিও সক্ষমতা আছে।
নবীজি (স.) আমাদের শিখিয়েছেন, এই দুই দিক থেকেই আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া উচিত, কারণ এগুলো মানুষকে ধীরে ধীরে হতাশা, দরিদ্রতা ও পাপাচারের দিকে ঠেলে দেয়।
দোয়া কীভাবে অলসতা কমায়১. দোয়া মনোযোগ ও উদ্যম বাড়ায়: নিয়মিত দোয়া বা আধ্যাত্মিক অনুশীলন মস্তিষ্কে ডোপামিন নামের হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। ডোপামিন আমাদের ‘উদ্যমের রাসায়নিক’, যা কাজের প্রতি আগ্রহ ও আনন্দ জাগায়।
২. দোয়া মানসিক শক্তি জোগায়: যারা সকালবেলা প্রার্থনা বা ধ্যান করেন, তাদের মনোযোগ ও কার্যক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি থাকে।
আরও পড়ুনকথা যেভাবে দোয়া হয়ে যায়১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫নবীজির শেখানো দোয়া একটি মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাও বটে। প্রতিদিন সকালে এই দোয়া পাঠ করলে মানসিক দৃঢ়তা বাড়ে, মনোবল দৃঢ় হয় এবং কাজের প্রতি নতুন উৎসাহ জাগে।৩. আল্লাহর ওপর নির্ভরতা মানসিক চাপ কমায়: দোয়া করার সময় মানুষ যখন নিজের সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তখন তার মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। মনোবিজ্ঞানে একে বলা হয় ‘সেলফ-এফিক্যাসি’, যা অলসতা ও হতাশা কাটাতে সহায়তা করে।
সবচে’ বড় কথা হল, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে শক্তি ও সামর্থ্য দান করেন, যেন বান্দা সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়।
অলসতা দূর করার কিছু নববী অভ্যাস১. ভোরে জেগে ওঠা ও ফজর আদায় করা। ভোরের আলো ও ফজরের স্নিগ্ধ সময় মানসিক সুস্থতা আনে।
২. ফজরের পর জিকির বা কোরআন তিলাওয়াত, যা মনোযোগ ও মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করে।
৩. শরীরচর্চা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, এর মাধ্যমে শারীরিক উদ্যম বৃদ্ধি পায় এবং অলসতা কেটে যায়।
৪. প্রতিদিনের কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আধ্যাত্মিক মনোসংযোগ ঘটে।
৫. সদকা ও সমাজসেবা করা, যা পরার্থপরতা মানসিক তৃপ্তি এনে শক্তি বাড়ায়।
অলসতা মানুষকে পিছিয়ে দেয়, কর্ম ও প্রার্থনা তাকে এগিয়ে নেয়। নবীজি (স.)–এর শেখানো এই দোয়া শুধু ধর্মীয় নয়, মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাও বটে। প্রতিদিন সকালে এই দোয়া পাঠ করলে মানসিক দৃঢ়তা বাড়ে, মনোবল দৃঢ় হয় এবং কাজের প্রতি নতুন উৎসাহ জাগে।
তাই আসুন, আমরা প্রার্থনা করি, “হে আল্লাহ, আমাকে অলসতা ও অক্ষমতা থেকে মুক্ত রাখুন।”
আরও পড়ুনক্ষমা প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ ৩ সময়২৪ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র বল আল ল হ এই দ য়
এছাড়াও পড়ুন:
অলসতা দূর করার জন্য নবীজির নিত্যদিনের প্রার্থনা
মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অলসতা। এটি ধীরে ধীরে মন, শরীর ও আত্মাকে দুর্বল করে দেয়। ইসলামে অলসতা শুধু কাজের অনীহা নয়, বরং এক ধরনের আত্মিক ব্যাধি বলে বিবেচিত। তাই মহানবী মুহাম্মদ (স.) প্রতিদিনের দোয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দোয়ায় বিশেষভাবে অলসতা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন।
ইসলামে কর্মপ্রেরণাকোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর বলো, তোমরা কাজ করো, আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও মুমিনগণ তোমাদের কাজ দেখবেন।” (সুরা তাওবা, আয়াত: ১০৫)
অর্থাৎ, ইসলামে কাজ বা শ্রম কোনো পার্থিব বিষয় নয়, বরং এক ধরনের ইবাদত।
অলসতা এই ইবাদতের পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই রাসুল (স.) বলেছেন, “বলবান মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ আছে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪)
ইমাম নববী (রহ.) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এখানে ‘বলবান’ বলতে কেবল শারীরিক শক্তি বোঝানো হয়নি; বরং বোঝানো হয়েছে আত্মিক শক্তি, কর্মোদ্যম, ও আল্লাহর আদেশ পালনে দৃঢ় সংকল্প। আর ‘দুর্বল মুমিন’ বলতে বোঝানো হয়েছে সেই ব্যক্তিকে, যে ঈমানদার হলেও অলসতা ও অনীহায় ভোগে, ফলে আমল কম করে। (শারহ সহিহ মুসলিম, ১৬/২০৫, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ২০০১)
যে ব্যক্তি সকালবেলা আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত থাকে, তার সারাদিনে বরকত নেমে আসে।আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৭৮আরও পড়ুনসম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা১২ অক্টোবর ২০২৫অলসতা দূর করতে নবীজির দোয়ানবীজি (স.) নিজে কখনও অলসতা পছন্দ করতেন না। তিনি ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন, ফজরের পর জিকির করতেন, মানুষকে কাজে উৎসাহ দিতেন এবং বলতেন, “যে ব্যক্তি সকালবেলা আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত থাকে, তার সারাদিনে বরকত নেমে আসে।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৭৮)
তিনি দোয়া করতেন,
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল হারামি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজু বিকা মিন আজাবিল কবরি, ওয়া আউজু বিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কাপুরুষতা ও বার্ধক্য থেকে, কৃপণতা থেকে। আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই কবরের আজাব থেকে এবং জীবিত ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭২২)
এই দোয়ায় দুটি শব্দ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, ‘আল-‘আজ্য’ (অক্ষমতা) ও ‘আল-কাসাল’ (অলসতা)। অক্ষমতা মানে মানসিক দুর্বলতা, মানে যখন মানুষ ভালো কিছু করতে চায়, কিন্তু আত্মবিশ্বাস পায় না। আর অলসতা হলো শারীরিক বা মানসিক অনীহা, অর্থাৎ, যখন কাজ করতে ইচ্ছা হয় না, যদিও সক্ষমতা আছে।
নবীজি (স.) আমাদের শিখিয়েছেন, এই দুই দিক থেকেই আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া উচিত, কারণ এগুলো মানুষকে ধীরে ধীরে হতাশা, দরিদ্রতা ও পাপাচারের দিকে ঠেলে দেয়।
দোয়া কীভাবে অলসতা কমায়১. দোয়া মনোযোগ ও উদ্যম বাড়ায়: নিয়মিত দোয়া বা আধ্যাত্মিক অনুশীলন মস্তিষ্কে ডোপামিন নামের হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। ডোপামিন আমাদের ‘উদ্যমের রাসায়নিক’, যা কাজের প্রতি আগ্রহ ও আনন্দ জাগায়।
২. দোয়া মানসিক শক্তি জোগায়: যারা সকালবেলা প্রার্থনা বা ধ্যান করেন, তাদের মনোযোগ ও কার্যক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি থাকে।
আরও পড়ুনকথা যেভাবে দোয়া হয়ে যায়১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫নবীজির শেখানো দোয়া একটি মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাও বটে। প্রতিদিন সকালে এই দোয়া পাঠ করলে মানসিক দৃঢ়তা বাড়ে, মনোবল দৃঢ় হয় এবং কাজের প্রতি নতুন উৎসাহ জাগে।৩. আল্লাহর ওপর নির্ভরতা মানসিক চাপ কমায়: দোয়া করার সময় মানুষ যখন নিজের সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তখন তার মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। মনোবিজ্ঞানে একে বলা হয় ‘সেলফ-এফিক্যাসি’, যা অলসতা ও হতাশা কাটাতে সহায়তা করে।
সবচে’ বড় কথা হল, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে শক্তি ও সামর্থ্য দান করেন, যেন বান্দা সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়।
অলসতা দূর করার কিছু নববী অভ্যাস১. ভোরে জেগে ওঠা ও ফজর আদায় করা। ভোরের আলো ও ফজরের স্নিগ্ধ সময় মানসিক সুস্থতা আনে।
২. ফজরের পর জিকির বা কোরআন তিলাওয়াত, যা মনোযোগ ও মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করে।
৩. শরীরচর্চা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, এর মাধ্যমে শারীরিক উদ্যম বৃদ্ধি পায় এবং অলসতা কেটে যায়।
৪. প্রতিদিনের কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আধ্যাত্মিক মনোসংযোগ ঘটে।
৫. সদকা ও সমাজসেবা করা, যা পরার্থপরতা মানসিক তৃপ্তি এনে শক্তি বাড়ায়।
অলসতা মানুষকে পিছিয়ে দেয়, কর্ম ও প্রার্থনা তাকে এগিয়ে নেয়। নবীজি (স.)–এর শেখানো এই দোয়া শুধু ধর্মীয় নয়, মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাও বটে। প্রতিদিন সকালে এই দোয়া পাঠ করলে মানসিক দৃঢ়তা বাড়ে, মনোবল দৃঢ় হয় এবং কাজের প্রতি নতুন উৎসাহ জাগে।
তাই আসুন, আমরা প্রার্থনা করি, “হে আল্লাহ, আমাকে অলসতা ও অক্ষমতা থেকে মুক্ত রাখুন।”
আরও পড়ুনক্ষমা প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ ৩ সময়২৪ এপ্রিল ২০২৫