জাতিসংঘের আহ্বানে সারা পৃথিবী ১৫ জুন ‘প্রবীণ নির্যাতন সচেতনতা দিবস’ হিসেবে পালন করছে। এবারের স্লোগান ‘আলোচনার বিস্তার ঘটানো, লক্ষণ চিনুন এবং ঝুঁকি কমান।’ প্রতিপাদ্যের প্রথম ধাপ হলো– প্রবীণরা যতভাবে নির্যাতনের শিকার হন সে ব্যাপারে জনসাধারণের সামনে খোলামেলা আলোচনা তুলে ধরা।
মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো, মানুষ তার দুর্বল জায়গাগুলো আড়াল করতে পছন্দ করে। নির্যাতনকারীরা পরিবারের সদস্য, নিকটতম আত্মীয়স্বজন, সেবাকর্মী, বন্ধুবান্ধবরা হয়ে থাকেন বলে বেশির ভাগ নির্যাতনের ঘটনা ভুক্তভোগী প্রবীণরা নিজ থেকেই চেপে যান।
একজন প্রবীণ মানসিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। কখনও চড়, থাপ্পড়, গলাধাক্কা, খুন্তি কিংবা লাঠি দ্বারা আঘাত করা কিংবা খাবারদাবার, ওষুধ, চিকিৎসা গ্রহণে বাধা সৃষ্টি বা অসহযোগিতা করা ইত্যাদি শারীরিক নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত। পছন্দ করতে বাধা দেওয়া, গালাগালি করা, খোটা দেওয়া, তির্যক মন্তব্য করা, অবহেলা ও অসম্মান করা, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, অতীতের ব্যর্থতাকে সামনে নিয়ে আসা ইত্যাদি মানসিক নির্যাতন। চাহিদা অনুসারে টাকা-পয়সা খরচ করতে না পারা কিংবা জমিজমা ও অন্যান্য টাকা-পয়সাজনিত ব্যাপারে তারা আর্থিক নির্যাতনের শিকার হন। সামাজিক কাজে অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি, বিচার-সালিশ বৈঠকে না ডাকা, প্রবীণদের কল্যাণে চুপচাপ থাকা, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করা ইত্যাদি সামাজিক নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয় ধাপ হলো নির্যাতনের লক্ষণগুলো চিহ্নিত করতে পারা। যখন কোনো প্রবীণ ব্যক্তি হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যান, কথা বলা কমিয়ে দেযন, প্রিয় জিনিসপত্রের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন না, খাবার খেতে চান না, চিকিৎসা নিতে অনাগ্রহী, বেড়াতে যেতে চান না, পরিধানের কাপড়-চোপড় ময়লা থাকে, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন, নিজের যত্ন নিতে অনিচ্ছুক হযন– তখন বুঝতে হবে তিনি কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
অনেক সময় ভয়ে নির্যাতনের কথা বলতে চান না পাছে আরও বড় ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয় বলে। শরীরের আঘাত দৃশ্যমান হতে পারে কিংবা নাও হতে পারে। প্রবীণরা ছেলেমেয়ে, স্বামী বা স্ত্রী, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হলে পরিবারের অন্য সদস্যরা বুঝতে পারবে। তাদের উচিত এসব নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে নিয়ে আসা। মীমাংসার নামে একে অপরের সঙ্গে মিলিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। সবাই মিলে নির্যাতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে একই ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে না হয়। প্রবীণদের চলাফেরা, কথাবার্তায় নির্যাতনের অনেক লক্ষণ ফুটে ওঠে। চারপাশের মানুষের দায়িত্ব আলোচনার বিস্তার ঘটিয়ে লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা।
তৃতীয় ধাপ হলো প্রবীণ নির্যাতনের ঝুঁকি কমানো। প্রবীণদের বড় একটি অংশ ছেলেমেয়ে, পরিবার-পরিজনের ওপর নির্ভরশীল। তারা পরিবারে সম্মান-মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে চায়। নির্যাতনের শিকার হলে পরিবারে বসবাস নরকতুল্য হয়ে যায়। নির্যাতনের ঝুঁকি কমাতে ওয়ার্ড বা নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসকারী প্রত্যেক প্রবীণের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী, ইমাম, ধর্মীয় নেতা, সমাজকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এলাকায় প্রবীণদের জীবনযাপনের ধরন দেখে ঝুঁকিপূর্ণ প্রবীণদের তালিকা তৈরি করা যায়। সে ক্ষেত্রে অল্প, মধ্যম ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রবীণদের আলাদা তালিকা তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র যৌথভাবে এগিয়ে না এলে কার্যকর ফল পাওয়া সম্ভব হবে না। তাই গ্রাম পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশ, ইউনিয়ন সমাজকর্মীরা একইযোগে কাজ করতে পারেন।
হাসান আলী: প্রবীণ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও সংগঠক
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতন চেয়ে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে ৪১ বছর বয়সী এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রোববার লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে গ্লাসগোগামী একটি ফ্লাইটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি লন্ডনের কাছে বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরের বাসিন্দা।
অভয় নায়েক ইজিজেট ফ্লাইটে হামলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার মতো আচরণ করেছেন। তিনি উড়োজাহাজে বোমা ফাটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি মাঝ আকাশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে চিৎকার করেছিলেন, যা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
ওই ঘটনার একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, অভয় নায়েক স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমেরিকার পতন হোক’, ‘ট্রাম্পের পতন হোক’। এরপরই তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ (যার অর্থ ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’) বলে স্লোগান দেন। পরে দুজন ব্যক্তি তাঁকে কাবু করে উড়োজাহাজের মেঝেতে ফেলে দেন।
ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি কোন ধর্মের অনুসারী, সে ব্যাপারে তাৎক্ষিণক কিছু জানা যায়নি।
ওই ব্যক্তির এমন আচরণের পর পাইলটরা বাধ্য হয়ে গ্লাসগোতে জরুরি অবতরণ করেন। সেখানেই স্কটিশ পুলিশ এসে অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করে।
স্কটল্যান্ডের পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘গত রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে গ্লাসগোতে পৌঁছানো ইজিজেটের একটি ফ্লাইটে এক ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, ঘটনাটি এককভাবে ওই ব্যক্তির, অন্য কেউ জড়িত নন। যেসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে, সেগুলো সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।’
উড়োজাহাজ অবতরণের পরই অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
ইজিজেট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বেপরোয়া আচরণের কারণে একজন যাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহযোগিতা করছি।’
পাইসলি শেরিফ আদালতে হাজিরার সময় অভয় নায়েক কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁকে বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে তাঁকে আবার আদালতে হাজির করা হবে।