তেহরানে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, সবাইকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত
Published: 17th, June 2025 GMT
গত শুক্রবার থেকে ইরানে অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার পর বাংলাদেশের লোকজন মোটামুটি নিরাপদে আছেন। তবে তেহরান ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইসরায়েলি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ফলে ওই পরমাণু কেন্দ্রসহ কমপক্ষে দুটি সংবেদনশীল স্থাপনার প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে পড়ে গেছে তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন।
সোমবার সকালে তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তেহরান থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর মিশনে কর্মরত কূটনীতিকসহ সবাইকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। তবে ইরানের এখনকার পরিস্থিতির কারণে তেহরানের বাইরে উপযুক্ত নিরাপদ আবাসস্থল খুঁজে পাওয়া দুরূহ বিষয়।
বাংলাদেশের ইরান মিশন থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, তেহরানে বাংলাদেশ মিশন ভবনের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইরানের একটি পরমাণু কেন্দ্রসহ কমপক্ষে দুটি সংবেদনশীল স্থাপনা রয়েছে। সেগুলোতে হামলার ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে ইসরায়েল। ফলে বাংলাদেশ মিশন, আশপাশে বসবাসরত কূটনীতিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাঁদের পরিবারের জীবন ও সম্পদ ঝুঁকিতে। সম্ভাব্য হামলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আতঙ্কের মধ্য দিনাতিপাতকারী ওই সব কূটনীতিক ও স্টাফদের পরিবারকে শহরের ৩০-৪০ কিলোমিটার বাইরে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়ছে।
নিরাপদ দুই হাজার বাংলাদেশিতেহরানের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানান, দেশটিতে থাকা প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি নাগরিক এখন পর্যন্ত মোটামুটি নিরাপদে রয়েছেন। তাঁদের প্রায় সবাই তেহরানের বাইরে চলে গেছেন। ইসরায়েল তেহরানকে টার্গেট করেছে এবং স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোকে নিখুঁত নিশানা করা হয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েল তেহরান খালি করার ঘোষণা দিয়েছে।
ইরান পরিস্থিতি সরকার পর্যবেক্ষণ করছে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রয়োজনে ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রমও তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা চলছে।
তেহরান মিশনের পাঠানো প্রতিবেদনের উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানে বাংলাদেশের দূতাবাস কমপ্লেক্স মোটেও নিরাপদ নয়। ওই ভবনের এক কিলোমিটারের মধ্যে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের অবস্থান। তা ছাড়া সেখানে আরও একটি সংবেদনশীল অবকাঠামো রয়েছে। গত কয়েক দিনে ইসরায়েল এটি ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি তেহরানের প্রধান দুটি আইটি সেন্টারের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রটি বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। ওই অবকাঠামোতেও যেকোনো সময় হামলার আশঙ্কা রয়েছে।
ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাঁদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আটজন বাংলাদেশি ও তাঁদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এ ছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশির ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা আটকা পড়েছেন। সব মিলিয়ে তেহরানে শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানতে পেরেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইরানের একাধিক স্থানে প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তাঁরা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সে দেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তাঁরা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। প্রায় দুই শ শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এ ছাড়া মানব পাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সব সময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়।
হটলাইন চালুএমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। রোববার ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস ইমার্জেন্সি হটলাইন স্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের + ৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও + ৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫ নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপসহ) যোগাযোগ করতে বলেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র পর ব র কর মকর ত পর স থ ত অবস থ ন ইসর য় ল ন র এক ব স কর ন র পদ বসব স
এছাড়াও পড়ুন:
সচেতন অবচেতনা
আষাঢ়ে–শ্রাবণে
অগ্নি কি নিবেছে?
একনাগাড়ে কত দিন ধরে
বৃষ্টি চলেছে তো চলেছেই।
জ্যৈষ্ঠে শুরু। তারপর এই
সারাটা আষাঢ় মাস ধরে
বৃষ্টি হচ্ছে। সারা দিন–রাত।
আকাশে পিঙ্গল পর্দা টানা।
সূর্য নেই। মেঘেলা। ধূসর।
রাস্তায় রাস্তায় জলস্রোত।
দিনরাত্রি অঝোর ঝরন।
মনে হয়, কখনো দেখিনি
সূর্য কিংবা রৌদ্রের ঝলক।
জলধারা ভুবন ভাসায়, —
শুধু এক কণা অগ্নি জ্বলে
সব দৃষ্টি–শ্রুতির বাইরে।
(মুস্তফা আনোয়ার–কে)
বৃষ্টির শাবলে আর গাঁইতির চাড়ে
রাত্রির কালো খনি ধসে পড়তে থাকে।
দেখি আর মনে মনে বলি: শেখো–শেখো–
কী করে মেলাতে হয় স্বপ্ন–ও–সত্তাকে।
কিন্তু ভোরবেলাতেই ভুল হয়ে যায়;
বুঝতে পারি না, বৃষ্টি নাকি জ্যোৎস্না ঝরছে?
পুষ্পিতা যুবতী, নাকি জুঁইফুলগাছ?
বেঁচে আছি, নাকি ঢুকে পড়েছি স্বর্গে?
বাস্তবতা নিয়ে আজো খাই হিমশিম,
ঊনষাটেও দেখছি আজো কিছুই মেলে না:
নিসর্গ রহস্যময়: নারী অপ্রবেশ্য;
পৃথিবী আকাশে ঢাকা; মানুষ অচেনা।
রাত্রি একটার ঢাকা। বৃষ্টি হয়ে গেছে এই একটু আগে।
ভিজে কালো রাস্তায় লাল–নীল–হলুদ–পাটকিলে আলোর বাহার।
ফিরছিলাম আমরা দুজন–আমি আর আতাহার।
আকাশ কি মেঘে ঢাকা? কালো মেঘ–ছেঁড়া দু–চারটি তারা
সিল্কের মতন আকাশে জ্বলছে পুঁতির মতন।
এখনো বাতাসে ঠান্ডা, বৃষ্টি থামলো এই কিছুক্ষণ।
পৃথিবীতে এরকম রাত্রি আর আসেনি কখনো।
ময়ূরের মতো এতো বর্ণময়, এমন নীরব–কলস্বরা,
এতো শান্ত-গতিশীল, এতো সশরীরী অথচ অধরা।
আরে। বৃষ্টি ফের: শাদা পর্দা পড়ে গেল রাত্রির নাটকে।
ভিজে কালো রাস্তায় চমকাচ্ছে আকাশের যত তারা।
কোথাও উৎসব নেই, তবু বাজছে ধ্বনি–প্রতিধ্বনিময় সারা–রারা–রারা।
দিনগুলি মিথ্যা হল এরকম বৃষ্টি–বেঁধা রাত্রির ঝংকারে
কতো গ্রীষ্ম ধুয়ে গেল এবারের আষাঢ়ে–শ্রাবণে,
হে রাত্রি, বৃষ্টির রাত্রি, তুমি আজ ঝরছো গহনে।
রাত্রি আজ জেগে উঠলো প্রজ্জ্বলন্ত বৃষ্টির বিভায়,
মেঘে লুপ্ত হয়ে চাঁদ মিশে রইল আমাদের নগরে–বন্দরে,
চলো যাই উড়ে যাই কালো–নীল রাত্রির ভিতরে।
বহুক্ষণ বৃষ্টি থেমে গেছে।
এখন গাছের ডাল থেকে,
পাতা থেকে চুঁইয়ে পড়ছে
জলবিন্দু। হিরের। রুপোর।
কে ডাকছে ডাক নাম ধরে?
এতো রাতে কে ডাকছে? কে? কে?
ভুল। কেউ নেই। কিছু নেই।
পথে পথে সোনার মোহর।