গত শুক্রবার থেকে ইরানে অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার পর বাংলাদেশের লোকজন মোটামুটি নিরাপদে আছেন। তবে তেহরান ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইসরায়েলি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ফলে ওই পরমাণু কেন্দ্রসহ কমপক্ষে দুটি সংবেদনশীল স্থাপনার প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে পড়ে গেছে তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন।

সোমবার সকালে তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তেহরান থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর মিশনে কর্মরত কূটনীতিকসহ সবাইকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। তবে ইরানের এখনকার পরিস্থিতির কারণে তেহরানের বাইরে উপযুক্ত নিরাপদ আবাসস্থল খুঁজে পাওয়া দুরূহ বিষয়।

বাংলাদেশের ইরান মিশন থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, তেহরানে বাংলাদেশ মিশন ভবনের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইরানের একটি পরমাণু কেন্দ্রসহ কমপক্ষে দুটি সংবেদনশীল স্থাপনা রয়েছে। সেগুলোতে হামলার ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে ইসরায়েল। ফলে বাংলাদেশ মিশন, আশপাশে বসবাসরত কূটনীতিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাঁদের পরিবারের জীবন ও সম্পদ ঝুঁকিতে। সম্ভাব্য হামলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আতঙ্কের মধ্য দিনাতিপাতকারী ওই সব কূটনীতিক ও স্টাফদের পরিবারকে শহরের ৩০-৪০ কিলোমিটার বাইরে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়ছে।

নিরাপদ দুই হাজার বাংলাদেশি

তেহরানের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানান, দেশটিতে থাকা প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি নাগরিক এখন পর্যন্ত মোটামুটি নিরাপদে রয়েছেন। তাঁদের প্রায় সবাই তেহরানের বাইরে চলে গেছেন। ইসরায়েল তেহরানকে টার্গেট করেছে এবং স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোকে নিখুঁত নিশানা করা হয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েল তেহরান খালি করার ঘোষণা দিয়েছে।

ইরান পরিস্থিতি সরকার পর্যবেক্ষণ করছে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রয়োজনে ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রমও তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা চলছে।

তেহরান মিশনের পাঠানো প্রতিবেদনের উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানে বাংলাদেশের দূতাবাস কমপ্লেক্স মোটেও নিরাপদ নয়। ওই ভবনের এক কিলোমিটারের মধ্যে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের অবস্থান। তা ছাড়া সেখানে আরও একটি সংবেদনশীল অবকাঠামো রয়েছে। গত কয়েক দিনে ইসরায়েল এটি ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি তেহরানের প্রধান দুটি আইটি সেন্টারের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রটি বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। ওই অবকাঠামোতেও যেকোনো সময় হামলার আশঙ্কা রয়েছে।

ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাঁদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আটজন বাংলাদেশি ও তাঁদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এ ছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশির ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা আটকা পড়েছেন। সব মিলিয়ে তেহরানে শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানতে পেরেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইরানের একাধিক স্থানে প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তাঁরা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সে দেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তাঁরা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। প্রায় দুই শ শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এ ছাড়া মানব পাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সব সময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়।

হটলাইন চালু

এমন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। রোববার ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস ইমার্জেন্সি হটলাইন স্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের + ৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও + ৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫ নম্বরে (হোয়াটসঅ্যাপসহ) যোগাযোগ করতে বলেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র পর ব র কর মকর ত পর স থ ত অবস থ ন ইসর য় ল ন র এক ব স কর ন র পদ বসব স

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে

১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।

এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ