বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের ফাইনাল শেষ হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই আজ মাঠে গড়াচ্ছে চতুর্থ আসরের খেলা। ২০২৫ থেকে ২০২৭ চক্রের উদ্বোধনী সিরিজেই বাংলাদেশ মুখোমুখি হচ্ছে শ্রীলঙ্কার। গলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সকাল ১০টায় শুরু হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রথম টেস্ট। যেখানে ক্রিকেটারদের একমাত্র ব্রত ভালো খেলা। কারণ শুরুটা ভালো হলে জয়ের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়।
গত আসরের পারফরম্যান্সও শান্তদের কিছুটা উজ্জীবিত করতে পারে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৩-২৫ সাইকেলে বেশ কয়কটি ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে আছে বাংলাদেশের। পয়েন্ট টেবিলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক একটা লড়াইও ছিল। লঙ্কানরা ১৩ টেস্ট খেলে পাঁচটিতে জিতে ষষ্ঠ, বাংলাদেশ ১২টি টেস্ট ম্যাচ খেলে চারটিতে জিতে সপ্তম হয়েছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসরে একটা ভালো শুরুর স্বপ্ন দেখছেন।
বাংলাদেশ তৃতীয় আসর শুরু ও শেষ করেছিল জয় দিয়ে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে সিলেটে হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে। ২০২৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে নিজেদের শেষ টেস্ট ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় তাদের মাটিতে। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করছে অ্যাওয়ে সিরিজ দিয়ে। অর্থাৎ গল থেকে লঙ্কা অভিযান শুরু করছেন বাংলাদেশ। যেখানে বাজিমাত করতে চান শান্তরা। গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘নতুন প্রতিপক্ষ এবং নতুন কন্ডিশন। এই কন্ডিশনে অনেকের খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ওই অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে পারলে আমার মনে হয় সিরিজে ভালো কিছু হবে। তবে আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আমরা যারা ব্যাটিংয়ে আছি।’ চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা আজ থেকে মাঠে গড়ালেও শান্তদের টেস্টের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজে। যেখানে তৃপ্তির চেয়ে অতৃপ্তি বেশি ছিল। সিলেটে প্রথম টেস্ট হারায় দুই ম্যাচের সিরিজ ড্র হয়। শান্ত চান জয় পেয়ে ম্যাচটি মনে রাখতে, ‘আমরা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে কী সিরিজ খেলেছি, ওটা নিয়ে খুব বেশি আগানো ঠিক হবে না। কারণ, শেষ ম্যাচে খুব ভালো স্মৃতি আছে। আগের ম্যাচ হেরে পরের ম্যাচে যেভাবে প্রত্যাবর্তন করেছি, আমার মনে হয় ওটাই দলকে উজ্জীবিত করবে।’
বাংলাদেশ পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে লঙ্কা গেলেও গলে টেস্টে সেরা একাদশ নাও পেতে পারে। দলের একমাত্র অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ ফ্লুতে আক্রান্ত। জ্বর-ব্যথা না থাকলেও ভাইরাসের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মিরাজ না চাইলে টিম ম্যানেজমেন্ট জোরাজুরি করবে না হয়তো। যদিও তাঁর খেলা না খেলার ওপর একাদশে প্রভাব থাকবে। তাই শান্তকে অনিশ্চয়তার কথাই বলতে শোনা গেছে, ‘এখনও মিরাজের শরীরটা খারাপ আছে, তবে উন্নতি করছে। ওর খেলা না-খেলার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ওই জায়গাটা যদি ঠিক থাকে, তাহলে আমরা একটা ভালো কম্বিনেশন নিয়ে নামতে পারব।’
শেষ পর্যন্ত মিরাজ খেলতে না পারলে ব্যাটিং লাইনআপ ছোট হবে। এ ক্ষেত্রে ইনিংস ওপেন করতে পারেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাদমান ইসলাম। মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস ও জাকের আলী খেলবেন মূল ব্যাটার হিসেবে। বোলিং লাইনআপটাও সাজাতে হবে স্পিন বিভাগকে গুরুত্ব দিয়ে। কারণ গল স্পিনস্বর্গ। এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত শেষ চার টেস্টে প্রায় ১০০ উইকেট গেছে স্পিনারদের দখলে। এদিকটা মাথায় রেখে বাঁহাতি তাইজুল ইসলামের সঙ্গে অফ স্পিনার নাঈম হাসান খেলতে পারেন। তিন স্পিনার খেলালে হাসান মুরাদের কপাল খুলবে। পেস বিভাগে হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানার সুযোগ বেশি। এবাদত হোসেন দুই বছর পর দলে ফিরলেও খেলার সম্ভাবনা কম। শ্রীলঙ্কার এ মাঠে জুটি গড়তে পারলে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ থাকে।
শান্তর মতে, ‘এ কন্ডিশনে ব্যাটারদের চ্যালেঞ্জ থাকবে বেশি। কারণ এখানে স্পিনাররা অনেক উইকেট নেন। আবার অনেক রানও হয়। প্রথম দুই-তিন দিন ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ।’
গলে স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত দুটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলকে নিয়ে মুশফিকুর রহিম রেকর্ড গড়া জুটি করেন। আশরাফুল ১৯০ রানে আউট হলেও মুশফিক প্রথম দ্বিশতকের দেখা পান। দুটি শতক আর একটি দ্বিশতকে ওই টেস্ট ড্র হয়েছিল। ২০১৭ সালে মিরাজরা খেলেছেন গলেতে। বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের কাছে হেরে যেতে হয়েছিল সে ম্যাচ।
গল টেস্ট হারলেও কলম্বোয় নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচটি জিতেছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৬ টেস্ট খেলে ওই একটি মাত্র জয় বাংলাদেশের। আরেকটি জয়ের খোঁজে নামার ম্যাচে বৃষ্টি বাধা হতে পারে। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ দিনের বেশির ভাগ সময় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট স ট চ য ম প য়নশ প চ য ম প য়নশ প র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণসহ ৯ বিষয়ে সুপারিশের জন্য নতুন উপদেষ্টা কমিটি
বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণসহ ৯ বিষয়ে সুপারিশের জন্য ১১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল রোববার ‘বাংলাদেশিদের বিদেশে নিয়োগ–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একই প্রজ্ঞাপনে ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল জারি হওয়া প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে গঠিত এ কমিটিতে ১১ জন উপদেষ্টা রয়েছেন। তাঁরা হলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আগের সরকারের একই কমিটি ছিল ১৩ সদস্যের।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, অর্থসচিবসহ ১৬ জন সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হচ্ছেন কমিটির সহায়তাদানকারী কর্মকর্তা। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ী বৈঠক করবে এবং চাইলে নতুন সদস্য যুক্ত করতে পারবে।
কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে বিদেশে জনশক্তি নিয়োগসংক্রান্ত কাজের সমন্বয়, শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও নতুন শ্রমবাজার অন্বেষণের দিকনির্দেশনা, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, অভিবাসী কর্মীদের সামগ্রিক কল্যাণ, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দক্ষতা উন্নয়ন, বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানো ইত্যাদি ৯ ধরনের বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করা। ২০২৪ সালের কার্য পরিধি যা ছিল, গতকালের কার্যপরিধিও একই। দুই কার্যপরিধিতে দাঁড়ি, কমা ও সেমিকোলনের কোনো পরিবর্তন নেই।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বিদেশে তিন লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান কমে গেছে। কারণ, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান—এ তিন শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। বড়দের মধ্যে টিকে আছে শুধু সৌদি আরবের শ্রমবাজার।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, করোনা চলাকালীন ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার কর্মী। ২০২২ সালে গেছেন ১১ লাখের বেশি। ২০২৩ সালে গেছেন আরও বেশি অর্থাৎ ১৩ লাখ। তবে ২০২৪ সালে ৩ লাখ কমে ১০ লাখে দাঁড়ায়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই গেছেন ৫ দেশে। এগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ ২০২৪ সালের জুন থেকে। ওমানে ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন যেখানে সোয়া লাখের বেশি, ২০২৪ সালে গিয়েছেন মোটে ৩৫৮ জন। একই অবস্থা সংযুক্ত আমিরাতেও। এ দেশে ২০২৩ সালে কর্মী গিয়েছিলেন প্রায় ১ লাখ, আর ২০২৪ সালে গেছেন অর্ধেকের কম অর্থাৎ ৪৭ হাজার। তবে সৌদি আরবে ২০২৩ সালে প্রায় ৫ লাখ কর্মী গেলেও ২০২৪ সালে গেছেন সোয়া ৬ লাখ।
সূত্রগুলো জানায়, সরকারিভাবে ১৬৮টি দেশে কর্মী পাঠানোর দাবি করা হলেও ২০২৪ সালে ১৩৫টি দেশে কর্মী গেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ দেশে কর্মী গেছেন নামমাত্র। যেমন ১৪টি দেশে কর্মী গেছেন একজন করে। ১৪টি দেশে গেছেন দুজন করে। ১০ হাজার কর্মী গেছেন, এমন দেশ ৮টি। আর লাখের বেশি কর্মী পাঠানো দেশ শুধু সৌদি আরব।
কমিটির নাম ‘বাংলাদেশিদের বিদেশে নিয়োগসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ রাখা হলো কেন এবং ‘নিয়োগ’ শব্দটিই রাখার উদ্দেশ্য কী—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, নিয়োগের বদলে এটা হওয়া উচিত ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ’। কিন্তু মন্ত্রীদের বদলে উপদেষ্টাদের নাম বসানো ছাড়া আগের প্রজ্ঞাপন থেকে হুবহু সব নেওয়ার কারণে ঘটনাটি এমন হয়েছে।