চাঁদাবাজ মাফিয়াতন্ত্রের সরকার গড়তে দেওয়া যাবে না
Published: 3rd, July 2025 GMT
জুলাই পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে বুধবার ব্যাপক সাড়ার মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এদিনও পদযাত্রায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে পথসভা করেন তারা। সভায় দলটির নেতারা বলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনও রয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ, মাফিয়াতন্ত্র, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে এনসিপি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করবে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে নতুন করে চাঁদাবাজ কিংবা মাফিয়াতন্ত্রের ফ্যাসিবাদী সরকার গড়তে দেওয়া যাবে না। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। আমরা আপনাদের সমর্থন চাই।
দুপুরে কুড়িগ্রামের ঘোষপাড়ায় এক পথসভায় বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কোনো টালবাহানা এনসিপি মেনে নেবে না। বাস্তবসম্মত উপায়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা করতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় কুড়িগ্রাম তথা রংপুর অঞ্চলকে যাতে পিছিয়ে দেওয়া না হয়, সেভাবেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা করতে হবে। ভারতের দালালির দিন শেষ। আমরা স্বাধীন দেশ, মাথা উঁচু করে বাঁচব।’
এর আগে রাজারহাট উপজেলায় আরেক পথসভায় নাহিদ বলেন, ‘আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য আমরা ইশতেহার ঘোষণা করব। গণঅভ্যুত্থানকে যারা ব্যর্থ করতে চাচ্ছে, ষড়যন্ত্র করতে চাচ্ছে– তাদের বিরুদ্ধে ওইদিন প্রতিরোধ গড়ে তুলব শহীদ মিনারে।’
একই সভায় এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘খুনি হাসিনা ফেরাউনের মতো অত্যাচারী ছিলেন। আমরা তাঁর পতন ঘটিয়েছি। আগামীতে এই ফেরাউনের মতো কোনো অত্যাচারী শাসক যেন বাংলার মাটিতে না আসে। নতুন বাংলাদেশে যেন নতুন স্বৈরাচারের জন্ম আর না হয়।’
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অতীতের স্বৈরাচার আমাদের পথ রুদ্ধ করেছে। আবু সাঈদ, মুগ্ধদের রাস্তার মধ্যে গুলি করে হত্যা করেছে। আলেমদের দাড়ি-টুপি নিয়ে অপমানসহ মসজিদের ভেতর থেকে নামিয়েছে। আমাদের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। নতুন বাংলাদেশে আর নতুন করে চাঁদাবাজি হতে দেওয়া যাবে না। খুনি-দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।’
পথসভা শেষে কুড়িগ্রাম-২ আসনে এনসিপির এমপি প্রার্থী হিসেবে ড.
বিকেলে এনসিপির পদযাত্রা লালমনিরহাট শহরের এমটি হোসেন ইনস্টিটিউট মাঠে এসে পৌঁছায়। পদযাত্রা প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের মিশন মোড় চত্বর এলাকায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পথসভায় ট্রাকে স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, এত বড় গণঅভ্যুত্থান, এত মানুষের রক্ত, এত আত্মত্যাগ; আমরা কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন মেনে নেব না। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, মানুষের জীবনের পরিবর্তন করতে হবে। তিনি জানান, নদী ও সীমান্ত সুরক্ষা আন্দোলন শুরু করবে এনসিপি। দেশকে বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সংস্কার না হলে একতরফা নির্বাচনে এনসিপি অংশগ্রহণ করবে না।
পথসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বক্তব্য দেন।
এদিন কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট উভয় জেলাতেই এনসিপি নেতারা এসে পৌঁছলে তাদের একনজর দেখতে রাস্তার পাশে শত শত মানুষ ভিড় করেন। স্কুলের শিক্ষার্থীরা ফুল নিয়ে অভিবাদন জানায় নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ, তাজনুভা জাবীন ও সামান্তা শারমিনদের। দুপুরে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় এনসিপির পদযাত্রায় স্থানীয় বিপুল সংখ্যক মানুষকে অংশ নিতে দেখা যায়।
সকালে রংপুর থেকে কুড়িগ্রাম আসার পথেও বিপুল সংখ্যক মানুষ এনসিপি নেতাদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। রংপুর সাতমাথার বালাটাড়ি এলাকায় এক কৃষক নিজের গাছের পাকা কাঁঠাল পেড়ে আপ্যায়ন করেন এনসিপি নেতাদের। এই আন্তরিকতায় অভিভূত হয়ে দলটির নেতাকর্মীরা বলেন, মানুষের এমন ভালোবাসাই তাদের পথচলার প্রেরণা।
এর আগে মঙ্গলবার রংপুর থেকে এনসিপি তাদের জুলাই পদযাত্রা শুরু করে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প এনস প র পদয ত র পথসভ য় ন র জন আবদ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন: আখতার
জাতীয় পার্টিকে ‘দলদাস ও দালাল’ উল্লেখ করে দলটির বিরুদ্ধে রংপুরের মানুষকে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
আজ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রংপুর নগরের ডিসি মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আখতার হোসেন এ আহ্বান জানান। এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র আজকের কর্মসূচি শেষ হয়।
আজ সকালে এই গণপদযাত্রা শুরু করেছে এনসিপি। রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর পদযাত্রা যায় গাইবান্ধায়। পরে এনসিপির নেতারা রংপুরে ফিরে আসেন।
রংপুরের সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, ‘একটি দল আছে, যে দল বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে সবচেয়ে নগ্নভাবে ভূমিকা পালন করেছে। সেই গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি রংপুরে বিভিন্ন ধরনের নাশকতা করছে। তারা আমাদের ভাইদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। আমরা রংপুরের মাটি থেকে হুঁশিয়ারি দিতে চাই, অবিলম্বে জাতীয় পার্টির গুন্ডা ও দালাল কর্তৃক আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে, সেই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’
রাত সাড়ে আটটার দিকে ডিসি মোড়ের এ সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন। সঞ্চালনা করেন দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
সমাপনী বক্তব্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ হাসান বলেন, ‘আমরা আগামীকাল কুড়িগ্রাম যাব এবং ধারাবাহিকভাবে দেশের ৬৪ জেলা অতিক্রম করে আগস্টে ঢাকায় ঢুকব। ঢাকায় ঢুকে আমরা আমাদের যে লক্ষ্য, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ, আমরা আদায় করে নেব ইনশা আল্লাহ।’
বুধবার পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে এনসিপি নেতারা কুড়িগ্রামে যাবেন। সেখানে কলেজ মোড়ের বিজয়স্তম্ভ চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে ঘোষপাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিফলকে এসে পথসভা করবে। এরপর ফুলবাড়ী উপজেলায় আরেকটি পথসভায় অংশ নিয়ে লালমনিরহাটের উদ্দেশে যাত্রা করবে পদযাত্রা।