ভারতে এমন একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী হয়েও মুসলিম ধর্মের অনেক বিষয় মেনে চলেন। কখনও কখনও জুমার নামাজও আদায় করেন। পূর্বপুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই রেওয়াজ মেনে চলে ওই গোষ্ঠীর মানুষেরা। ওই গোষ্ঠীর নাম হুসাইনি ব্রাহ্মণ। এই গোষ্ঠীর বর্তমানের প্রজন্মের অনেকের মধ্যেই কৃষ্ণ প্রেম যেমন আছে, তেমনি ইমাম হোসাইনের প্রতিও প্রেম রয়েছে। হিন্দু ধর্মের হয়েও মুসলিম ধর্মের প্রতি ভালোবাসা থেকে রোজার মাসে কয়েকটি রোজাও পালন করে থাকেন হোসাইনি হিন্দু ব্রাহ্মণরা।

হুসাইনি ব্রাহ্মণরা ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে এক বিরল সেতুবন্ধ রচনার কারণেই ভারতের সমাজজীবনে একটি অসাধারণ জায়গা অধিকার করে আছেন। এই গোষ্ঠীর মানুষ সংখ্যায় কম হতে পারেন, কিন্তু স্বকীয়তায় ও ধর্মীয় সম্প্রীতিতে এক উজ্জ্বল জনগোষ্ঠী! পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ, ভারতের পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কাশ্মীর, দিল্লি ও লখনৌর নানা প্রান্তে এখনো বেশ কয়েক হাজার হুসাইনি ব্রাহ্মণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেন। কোনো কোনো গবেষক জানাচ্ছেন, আরব উপদ্বীপেও বেশ কিছু হুসাইনি ব্রাহ্মণ আছেন।ভারতে হুসাইনি ব্রাহ্মণরা তাদের জীবনচর্যায় হিন্দু ও মুসলিম – দুই ধর্মেরই কিছু কিছু রীতি রেওয়াজ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরের আশুরা পালনে মহররমের তাজিয়াতেও যোগ দেবেন তাদের অনেকেই।

গবেষক ও ইতিহাসবিদের মতে,  ‘‘হুসাইনি ব্রাহ্মণরা হলেন প্রাচীন ভারত ও ইসলামী বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কের এক 'অতুলনীয় নিদর্শন'। স্বৈরাচারী ইয়াজিদ যখন ইমাম হোসাইনকে কারবালার প্রান্তরে সপরিবারে মেরে ফেলার চক্রান্ত করলেন, তখন তিনি বিশ্ব মানবতার উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছিলেন ‘হাল মিন নাসিরিন ইয়ানসুরনা!’ – যার অর্থ কেউ কি কোথাও আছে, যারা আমাদের সাহায্য করতে পারে? সেই ডাকে সাড়া দিলেন সুদূর ভারতের (হিন্দুস্তান) রাজা সমুদ্রগুপ্ত।’’

আরো পড়ুন:

আরবের অনেক দেশ ভারতের অন্তর্ভূক্ত ছিল, তারপর…

ইউরোপীয় গুপ্তচর যেভাবে মক্কায় ঢুকেছিলেন

এ ব্যাপারে গবেষক ও ইতিহাসবিদরাই বা কী বলছেন? আর আজ এত বছর বাদেও হুসেইনি ব্রাহ্মণরা কীভাবে ধরে রেখেছেন তাদের অতি গর্বের একটি ইসলামী পরম্পরা?

ইউফ্রেটিস (ফোরাত) নদীর পানি আটকে দিয়ে ইয়াজিদের সেনারা ততক্ষণে ইমাম হোসাইন ও তার সঙ্গীদের মৃত্যুর পথ তৈরি করে ফেলেছেন। এদিকে রাজা সমুদ্রগুপ্ত তার বীর সৈন্যদের একটি দলকে কারবালায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, যার নেতৃত্বে ছিলেন বীর যোদ্ধা রিহাব সিধ দত – যিনি পাঞ্জাবের একজন মোহিয়াল ব্রাহ্মণ। কিন্তু দত ও তার সাহসী সেনারা যখন কারবালায় পৌঁছলেন, ততক্ষণে ইমাম হোসাইন শহীদ হয়েছেন। এই ক্ষোভে-দু:খে ভারত থেকে যাওয়া ওই সৈন্যরা স্থির করলেন নিজেদের তরবারি দিয়েই তারা নিজেদের শিরশ্ছেদ করবেন। কিন্তু ইমামের আরব অনুরাগীরা তাদের বোঝালেন, এভাবে জীবন নষ্ট না করে তারা বরং জনাব-ই-মুখতারের বাহিনীতে যোগদান করুন এবং ইমামের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার লড়াইতে সামিল হোন।’’

ইয়াজিদের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ করে প্রাণোৎসর্গ করেছিলেনরিহাব দত ও তার বাহিনীর অনেকেই। যা ভারতীয়দের কাছে কারবালার লোকগাঁতার বেদনাদায়ক অংশ হয়ে গিয়েছিলো। পরে বাহিনীর যারা বেঁচে যান, তাদের কেউ কেউ সেখানেই রয়ে যান – কেউ আবার মাতৃভূমি ভারতে ফিরে আসেন।

কারবালার যে অংশটিতে এই বীর ব্রাহ্মণরা বসতি করেছিলেন সেটি পরিচিত ছিল 'আদ-দায়ার-উল-হিন্দিয়া' নামে।

সূত্র: বিবিসি

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স দ আরব ব র হ মণ র অন ক ক রব ল

এছাড়াও পড়ুন:

অভয়াশ্রমেই নিধনযজ্ঞ মাছের প্রজননে ঝুঁকি

দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য উল্লাপাড়ার ঘাটিনা রেল সেতুর পাশে করতোয়া নদীতে গড়ে তোলা হয়েছে অভয়াশ্রম। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে অভয়াশ্রম থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মা ও পোনা মাছ ধরা হচ্ছে। এতে মাছের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঘাটিনা রেল সেতু ও সড়ক সেতুর মাঝে করতোয়া নদীর প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশে প্রতিবছর মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করে মৎস্য বিভাগ। এই অভয়াশ্রমেই বড়শি ও চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করা হচ্ছে। শিকারিরা রাতে কৌশলে নদীতে বাঁশের খুঁটি পুঁতে জাল ফেলে রাখে। ভোরে সবার অলক্ষ্যে নৌকা নিয়ে খুঁটি থেকে জাল খুলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বের করে আবারও একইভাবে জাল পেতে রাখে। খুঁটিগুলো এমনভাবে পোতা হয় যাতে মাথা এবং পানির উপরিভাগের স্তর সমান হয়। এতে দূর থেকে জাল ফেলার বিষয়টি কেউ সহজে বুঝতে পারে না।

অবৈধ এ কাজে বড় লক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুল হালিম, খোদাবক্স প্রামাণিক, লক্ষ্মীপুর গ্রামের জাকারিয়া হোসেনসহ বেশ কয়েজন জড়িত বলে জানা গেছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে আব্দুল হালিম ও খোদাবক্স প্রামাণিকের ভাষ্য, এক সময় তারা অভয়াশ্রমে অবৈধভাবে মাছ শিকার করতেন। মৎস্য দপ্তরের এক অভিযানে ধরা পড়ার পর তাদের জাল বড়শি কেড়ে নেওয়া হয়। মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। এর পর আর সেখানে যাননা।

এ বিষয়ে কথা বলতে লক্ষ্মীপুর গ্রামের জাকারিয়া হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ পেয়ে মাঝেমধ্যে অবৈধ মাছ শিকার বন্ধে মৎস্য বিভাগ অভিযান চালালেও তেমন কাজে আসছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবলের অভাবে অভয়াশ্রমে সার্বক্ষণিক নজরদারি সম্ভব নয়। এ সুযোগে বছরে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মাছ অবৈধভাবে শিকার করছে দুর্বৃত্তরা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে খোদ উপজেলা মৎস্য অফিস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবৈধ শিকারিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তারা অভয়াশ্রমে কখনও বড়শি আবার কখনও চায়না দুয়ারি জাল ফেলে রুই, কাতল, চিতল, ফলি, কালিবাউশ, বোয়াল, মিরকাসহ দেশি বড় আকারের মা মাছ ও ছোট মাছ শিকার করে। এতে অভয়াশ্রমে মাছের প্রজনন হুমকির মুখে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অভয়াশ্রম তৈরির উদ্দেশ্য ভেস্তে যাবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, প্রতিবছর লক্ষাধিক টাকা খরচ করে অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়। যাতে দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ নিরাপদে আশ্রয় নিয়ে ডিম ছাড়তে পারে। কিন্তু অসাধু ও লোভী মৎস্য শিকারিরা বড়শি বা চায়না দুয়ারি জাল ফেলে মা মাছগুলো নিধন করছে। এতে দেশের মৎস্য প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি আরও জানান, তাঁর দপ্তরে লোকবল খুব কম। তারপরও প্রতিবছর করতোয়া নদীতে অন্তত ১৫ বার অভিযান চালানো হয়। অভয়াশ্রমে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য লোক নিয়োগ না করলে মাছ নিধন বন্ধ করা কঠিন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে ‘ইংলিশ মাস্টারক্লাস’
  • বাংলাদেশে ইংলিশ মাস্টারক্লাস
  • বৃষ্টিযাপন
  • চীন থেকে এলো ১৯ হাজার ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কম্বো কিট
  • অভয়াশ্রমেই নিধনযজ্ঞ মাছের প্রজননে ঝুঁকি
  • শাড়িতে স্কার্টে বর্ষা