হিন্দু ব্রাহ্মণ হয়েও কেন ইমাম হোসাইনকে ভালোবাসেন তারা
Published: 4th, July 2025 GMT
ভারতে এমন একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী হয়েও মুসলিম ধর্মের অনেক বিষয় মেনে চলেন। কখনও কখনও জুমার নামাজও আদায় করেন। পূর্বপুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই রেওয়াজ মেনে চলে ওই গোষ্ঠীর মানুষেরা। ওই গোষ্ঠীর নাম হুসাইনি ব্রাহ্মণ। এই গোষ্ঠীর বর্তমানের প্রজন্মের অনেকের মধ্যেই কৃষ্ণ প্রেম যেমন আছে, তেমনি ইমাম হোসাইনের প্রতিও প্রেম রয়েছে। হিন্দু ধর্মের হয়েও মুসলিম ধর্মের প্রতি ভালোবাসা থেকে রোজার মাসে কয়েকটি রোজাও পালন করে থাকেন হোসাইনি হিন্দু ব্রাহ্মণরা।
হুসাইনি ব্রাহ্মণরা ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে এক বিরল সেতুবন্ধ রচনার কারণেই ভারতের সমাজজীবনে একটি অসাধারণ জায়গা অধিকার করে আছেন। এই গোষ্ঠীর মানুষ সংখ্যায় কম হতে পারেন, কিন্তু স্বকীয়তায় ও ধর্মীয় সম্প্রীতিতে এক উজ্জ্বল জনগোষ্ঠী! পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশ, ভারতের পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কাশ্মীর, দিল্লি ও লখনৌর নানা প্রান্তে এখনো বেশ কয়েক হাজার হুসাইনি ব্রাহ্মণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেন। কোনো কোনো গবেষক জানাচ্ছেন, আরব উপদ্বীপেও বেশ কিছু হুসাইনি ব্রাহ্মণ আছেন।ভারতে হুসাইনি ব্রাহ্মণরা তাদের জীবনচর্যায় হিন্দু ও মুসলিম – দুই ধর্মেরই কিছু কিছু রীতি রেওয়াজ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরের আশুরা পালনে মহররমের তাজিয়াতেও যোগ দেবেন তাদের অনেকেই।
গবেষক ও ইতিহাসবিদের মতে, ‘‘হুসাইনি ব্রাহ্মণরা হলেন প্রাচীন ভারত ও ইসলামী বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কের এক 'অতুলনীয় নিদর্শন'। স্বৈরাচারী ইয়াজিদ যখন ইমাম হোসাইনকে কারবালার প্রান্তরে সপরিবারে মেরে ফেলার চক্রান্ত করলেন, তখন তিনি বিশ্ব মানবতার উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছিলেন ‘হাল মিন নাসিরিন ইয়ানসুরনা!’ – যার অর্থ কেউ কি কোথাও আছে, যারা আমাদের সাহায্য করতে পারে? সেই ডাকে সাড়া দিলেন সুদূর ভারতের (হিন্দুস্তান) রাজা সমুদ্রগুপ্ত।’’
আরো পড়ুন:
আরবের অনেক দেশ ভারতের অন্তর্ভূক্ত ছিল, তারপর…
ইউরোপীয় গুপ্তচর যেভাবে মক্কায় ঢুকেছিলেন
এ ব্যাপারে গবেষক ও ইতিহাসবিদরাই বা কী বলছেন? আর আজ এত বছর বাদেও হুসেইনি ব্রাহ্মণরা কীভাবে ধরে রেখেছেন তাদের অতি গর্বের একটি ইসলামী পরম্পরা?
ইউফ্রেটিস (ফোরাত) নদীর পানি আটকে দিয়ে ইয়াজিদের সেনারা ততক্ষণে ইমাম হোসাইন ও তার সঙ্গীদের মৃত্যুর পথ তৈরি করে ফেলেছেন। এদিকে রাজা সমুদ্রগুপ্ত তার বীর সৈন্যদের একটি দলকে কারবালায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, যার নেতৃত্বে ছিলেন বীর যোদ্ধা রিহাব সিধ দত – যিনি পাঞ্জাবের একজন মোহিয়াল ব্রাহ্মণ। কিন্তু দত ও তার সাহসী সেনারা যখন কারবালায় পৌঁছলেন, ততক্ষণে ইমাম হোসাইন শহীদ হয়েছেন। এই ক্ষোভে-দু:খে ভারত থেকে যাওয়া ওই সৈন্যরা স্থির করলেন নিজেদের তরবারি দিয়েই তারা নিজেদের শিরশ্ছেদ করবেন। কিন্তু ইমামের আরব অনুরাগীরা তাদের বোঝালেন, এভাবে জীবন নষ্ট না করে তারা বরং জনাব-ই-মুখতারের বাহিনীতে যোগদান করুন এবং ইমামের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার লড়াইতে সামিল হোন।’’
ইয়াজিদের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ করে প্রাণোৎসর্গ করেছিলেনরিহাব দত ও তার বাহিনীর অনেকেই। যা ভারতীয়দের কাছে কারবালার লোকগাঁতার বেদনাদায়ক অংশ হয়ে গিয়েছিলো। পরে বাহিনীর যারা বেঁচে যান, তাদের কেউ কেউ সেখানেই রয়ে যান – কেউ আবার মাতৃভূমি ভারতে ফিরে আসেন।
কারবালার যে অংশটিতে এই বীর ব্রাহ্মণরা বসতি করেছিলেন সেটি পরিচিত ছিল 'আদ-দায়ার-উল-হিন্দিয়া' নামে।
সূত্র: বিবিসি
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স দ আরব ব র হ মণ র অন ক ক রব ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় ডিপ ফ্রিজ থেকে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার
ঢাকার কলাবাগান এলাকায় একটি বাসার ডিপ ফ্রিজ থেকে তাসলিমা আক্তার (৪২) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পলাতক রয়েছেন তার স্বামী নজরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে কলাবাগান থানার অফিসার ইনচার্জ( ওসি) মো. ফজলে আশিক রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, দাম্পত্য কলহের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রযুক্তির সহায়তায় নিহতের স্বামী নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে প্রকৃত কারণ জানা যেতে পারে।”
এ ঘটনায় তাসলিমা আক্তারের এক স্বজন বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে সোমবার রাতে কলাবাগান ফার্স্ট লেনের একটি ভবন থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে তালা ভেঙে ডিপ ফ্রিজে মুখ বাঁধা অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ আরো জানায়, মাথায় ভারী বা ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা করা হয়েছে। ফলে মাথার হাড় ভেঙে খুলি বের হয়ে গেছে।
তাসলিমা আক্তারের মেয়ে বলেন, “বাবা আম্মুকে সন্দেহ করতেন। ভাবতেন তার অন্য কারো সাথে সম্পর্ক ছিল এবং খারাপ কাজ করে টাকা উপার্জন করতো। কিন্তু আমার মা তেমন বাইরেই যেতেন না। আমার বাবা নেশা করতো। অধিকাংশ সময় বাইরে থেকে নেশা করে ঘরে ফিরত, কখনও কখনও বাসায় এসেও নেশা করতো। বাবাই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মাকে হত্যা করেছে।”
মাকে হারিয়ে তার হত্যার বিচার চেয়ে তাসলিমার মেয়ে বলেন, “আমরা চাই, বাবার ফাঁসি হোক।”
নিহতের চাচাতো ভাই বলেন, “মাঝে মাঝেই আমার বোন দুলাইভায়ের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। বোনকে মারধর করত। প্রায় বাবার বাড়ি চলে যেত।”
ঢাকা/এমআর/ইভা