একটি দিয়ে শুরু করা রায়হানের ফলের বাগান এখন ১৬টি, বছরে আয় ৫০ লাখ টাকা
Published: 5th, July 2025 GMT
২০০৪-০৫ সালের দিকে নওগাঁর পোরশা ও সাপাহার উপজেলায় ব্যাপক হারে বাণিজ্যিক আম চাষ শুরু হয়নি। তখন উঁচু বরেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত ওই সব এলাকার দিগন্তবিস্তৃত মাঠগুলোয় ধান, গম ও শর্ষের আবাদ হতো। সে সময় পরিবারের তেমন সহযোগিতা না থাকলেও উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া রায়হান আলম (৪২) ফসলি জমিতে আমবাগান করার সিদ্ধান্ত নেন।
ধান ও গরু বেচে পাওয়া এক লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে নিজেদের আট বিঘা জমিজুড়ে আমের চারা রোপণ করেন। দুই বছরে আম বিক্রি করে আয় করেন তিন লাখ টাকা। এভাবে প্রতি বছর পুঁজি বাড়তে থাকলে রায়হান তাঁর বাগানের পরিমাণও বাড়াতে থাকেন। এখন প্রায় ২০০ বিঘা জমিজুড়ে রায়হানের ছোট-বড় ১৬টি ফলদ বাগান। বাগান থেকে বছরে তাঁর আয় ৫০ লাখ টাকার বেশি।
রায়হানের গ্রামের বাড়ি সাপাহার উপজেলার দোয়াশ গ্রামে। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম তাঁর। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনিই বড়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের পর চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকে নিজের সাধনার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। এলাকার অনেক তরুণ তাঁকে অনুসরণ করে তৈরি করেছেন আমের বাগান। তাঁরাও দেখছেন সাফল্যের মুখ। নিজ গ্রাম দোয়াশ ছাড়াও ২০০ বিঘা জমিজুড়ে গড়ে তোলা ফলদ বাগানগুলো সাপাহার, পত্নীতলা ও পোরশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আছে। আম ছাড়াও ড্রাগন ও পেয়ারা চাষ করেন রায়হান। তাঁর বাগানে নিয়মিত ২০–২৫ জন মানুষ কাজ করেন।
সম্প্রতি পোরশা উপজেলার বন্ধুপাড়া এলাকায় গড়ে তোলা মিশ্র ফলের বাগানে কথা হয় রায়হান আলমের সঙ্গে। আম ও ড্রাগনের মিশ্র ওই ফলের বাগান ঘুরিয়ে দেখানোর সময় তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালে হঠাৎ বাবা মারা গেলেন। তখন আমি উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়ি। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে আমার কাঁধে। নিজেদের সামান্য কিছু জমিতে ধানের চাষ করে ছয়জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। তখন চিন্তা করতে থাকি, কীভাবে সংসারের আয় বাড়ানো যায়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমের চাষ বেশ লাভজনক। সিদ্ধান্ত নিই, ধানি জমিতে আমের বাগান করব। বাগান করার প্রস্তাবে আমার পরিবার ও প্রতিবেশী কেউই তখন আমাকে সাপোর্ট করেননি। ধান আর গরু বেচে এক লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে পোরশার সারাইগাছি এলাকার একটি নার্সারি থেকে আম্রপালি, ল্যাংড়া, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা ও ফজলির ২ হাজার চারা কিনে নিজেদের ৮ বিঘা জমিতে রোপণ করি।’
সফল এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, ২০০৫ সালে নিজেদের ফসলি জমিতে আমের চারা রোপণ করার দুই বছর পর বাগানের আম বিক্রি করে তাঁর তিন লাখ টাকা আয় হয়। কৃষিকাজের পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে গেছেন রায়হান। ২০১২ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। নিজের বাগান থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে ২০১৩ সালে সাপাহার উপজেলার হরিকুর ও জামালপুর এলাকায় ৫০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আরও দুটি বাগান গড়ে তোলেন। প্রায় ২০০ বিঘা জমিজুড়ে এখন ১৬টি ফলদ বাগানের মালিক তিনি। তাঁর বাগানে আম্রপালি, বারি-৪ ও গৌড়মতি ছাড়াও ব্যানানা ম্যাঙ্গো, মিয়াজাকি, চিয়াংমাই, ব্রুনাই কিং, কিউজাইসহ দেশি-বিদেশি ২০-২৫ জাতের আম আছে।
রায়হান আলম বলেন, ‘পোরশার বন্ধুপাড়া এলাকায় আছে মিশ্র ফলবাগান। এ বাগানে আমের পাশাপাশি কিছু ড্রাগন ও পেয়ারাগাছ আছে। গত বছর আম, ড্রাগন ও পেয়ারা বিক্রি করেছিলাম প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার। শ্রমিক খরচ, কীটনাশক ও সেচের খরচ বাদ দিয়ে ৫০ লাখ টাকা আয় হয়েছিল। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর ৬০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।’
নতুন যাঁরা আম চাষের জগতে আসতে চান, তাঁদের জন্য তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তার পরামর্শ— বাগানে শুধু এক জাতের আম চাষ না করে একাধিক জাতের আমগাছ লাগানো বুদ্ধিমানের কাজ। বিশেষ করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাকে, এমন বিষয় মাথায় রেখে বাগানে একাধিক জাতের আমগাছ লাগানো উচিত। এক জাতের আমগাছ লাগালে একই সময়ে পরিপক্ব হবে। তখন বাজারে ধস নামলে চাষিকে লোকসানে পড়তে হয়। তাই আমচাষিদের উচিত বাগানে একাধিক জাতের আমের চাষ করা। যাতে এপ্রিল থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আম সরবরাহ করা যায়।
পোরশার বড়গ্রাম এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকার অধিকাংশই আম্রপালি ও ল্যাংড়া জাতের আমের বাগান। রায়হান ভাই প্রথম নাবি জাতের আম বারি-৪ ও গৌড়মতি আমের চাষ শুরু করেন। মৌসুমের শেষ দিকে এসব আম বাজারে আসায় অন্য আমের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়। শীতকালেও তাঁর বাগানে আম পাওয়া যায়। আমি নিজেও এখন আমার বাগানে একাধিক জাতের আম চাষ করি। এতে বেশি লাভবান হওয়া যায়।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত দুই দশক ধরেই নওগাঁর উঁচু বরেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে ধান চাষ বাদ দিয়ে আমবাগান করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এই পেশায় অনেক শিক্ষিত তরুণ আসছেন। আমের বাগান করে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন জেলার এমন কয়েকজন কৃষকের মধ্যে সাপাহারের রায়হান আলম একজন। গতানুগতিক ধারায় বাগানে একই জাতের আমের চাষ না করে তিনি একাধিক জাতের আমের চাষ করেন। এতে তিনি অন্যদের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন। অন্যদেরও উচিত তাঁর মতো বাগানে ভিন্ন ভিন্ন জাতের আমের চাষ করা। এতে তাঁরাও লাভবান হতে পারবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ত র আম র চ ষ আম র ব গ ন ব গ ন কর র চ ষ কর উপজ ল র পর ব র এল ক র আম চ ষ এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির সুযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আগ্রহী প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
পদের নাম: অধ্যাপক
বিভাগ: ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস
পদসংখ্যা: ১
শিক্ষাগত যোগ্যতা: প্রার্থীদের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অথবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ও মার্কেটিং) উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ পিএইচডি ডিগ্রি থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর মধ্যে কমপক্ষে সাত বছর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রার্থীদের ইনডেক্সড/ডিওআই (ডিজিটাল অবজেক্ট আইডেন্টিফায়ার) সংবলিত মানসম্মত জার্নালে কমপক্ষে ১২টি গবেষণা প্রকাশনা থাকতে হবে। শিক্ষক হিসেবে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের সামগ্রিক শিক্ষা ও শিক্ষা আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিশেষ অবদানও যোগ্যতা হিসেবে গণ্য করা হবে। বিভাগের অভ্যন্তরীণ পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।
বেতন স্কেল: ৫৬,৫০০-৭৪,৪০০ টাকা
যেভাবে আবেদন
সার্টিফিকেট, মার্কশিট, প্রশংসাপত্র ও অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্রের সত্যায়িত প্রতিলিপিসহ ১১ কপি দরখাস্ত পাঠাতে হবে।
আবেদন ফি
রেজিস্ট্রারের অনুকূলে এক হাজার টাকা মূল্যের পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট পাঠাতে হবে।
আবেদনপত্র পাঠানোর ঠিকানা
রেজিস্ট্রার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১০০০।
আবেদনের শেষ সময়
৩১ আগস্ট ২০২৫।