যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক আরোপ ঠেকাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে জোর কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু দেশ আলোচনায় এগিয়েছে। কিছু দেশের ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত শুল্কের পরিমাণ উল্লেখ করে ১২ দেশকে চিঠি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিঠিগুলোয় সই করেছেন। আগামী সোমবার সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো হবে। তবে কোন কোন দেশ চিঠি পাচ্ছে, তা উল্লেখ করেননি ট্রাম্প। সোমবার বিষয়টি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বাণিজ্য উপদেষ্টা গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, আগামী বুধবার ৯ জুলাই মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিতীয় দফায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠক থেকে শুল্ক নিয়ে ভালো ফল পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য রয়েছে, এমন দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক আরোপ করেন তিনি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতির কথা উল্লেখ করে অনেক দেশের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বিশ্ববাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতার লক্ষ্যে ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেন ট্রাম্প। ৯ জুলাই সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে।

রয়টার্স জানায়, স্থানীয় সময় শুক্রবার ওয়াশিংটন থেকে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের উদ্দেশে রওনা দেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানে ওঠার আগে সাংবাদিকদের কাছে চিঠির বিষয়টি জানান তিনি। এদিন শুল্ক নিয়ে প্রথম ধাপে বিভিন্ন দেশকে চিঠি দেওয়া হবে বলে আগে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে পরে তারিখে পরিবর্তন করে সোমবার করা হয়।

নতুন এই শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। শুল্প নিয়ে পরিকল্পনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু চিঠিতে সই করেছি। সেগুলো সোমবার পাঠানো হবে। হয়তো ১২টি চিঠি।’ চিঠির মাধ্যমে দেশগুলোকে ১০ বা ২০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৬০ বা ৭০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প যে ৬০ বা ৭০ শতাংশ শুল্কের কথা বলেছেন, তা ২ এপ্রিল ঘোষণা করা পাল্টা শুল্কের সর্বোচ্চ পরিমাণের চেয়ে বেশি। এ থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনেক দেশের আলোচনা আশানুরূপ অগ্রগতি পায়নি। যেমন জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। চুক্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যে এ সপ্তাহেই টোকিওর ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য আলোচনাও ‘জটিল’ পর্যায়ে রয়েছে বলে শুক্রবার সিএনএনকে জানিয়েছিলেন ইইউর একজন কূটনীতিক। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, চুক্তি নিয়ে আলোচনা ৯ জুলাইয়ের আগে শেষ না-ও হতে পারে। আর শুক্রবার ইউরোপীয় কমিশনের বাণিজ্য মুখপাত্র ওলফ গিল সিএনএনকে বলেন, আলোচনা খুবই স্পর্শকাতর পর্যায়ে রয়েছে।

শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নই নয়, ভারতসহ অনেক দেশই এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি। তাই চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময়সীমা বাড়তে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন। যেমন গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেছেন, ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ নয়। আর সংবাদমাধ্যম ফক্স বিজনেসের সঙ্গে আলাপচারিতায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘শ্রমিক দিবস’–এর আগেই বাণিজ্য চুক্তির পাট চুকিয়ে নেওয়া হবে। আগামী পয়লা সেপ্টেম্বর দেশটিতে শ্রমিক দিবস পালন করা হবে।

আলোচনার জন্য ট্রাম্পের ৯০ দিনের সময়সীমা ফুরিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত শুধু যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র। মে মাসে করা ওই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এ ছাড়া গাড়ি ও উড়োজাহাজের ইঞ্জিনসহ কয়েকটি খাতে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।

ভিয়েতনামের সঙ্গেও যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চুক্তি হয়েছে, তা এ সপ্তাহে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে ওই চুক্তিতে সই হয়েছে কি না, জানা যায়নি। এপ্রিলে ভিয়েতনাম থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন তিনি। বর্তমানে তা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্য বিনা শুল্কে ভিয়েতনামে প্রবেশ করতে পারবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প শ ক রব র ইউর প য় সময়স ম স মব র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

তিন কারণে রপ্তানিতে প্রণোদনা প্রত্যাহার ৫ মাস পেছাল

তিন কারণে রপ্তানিখাতে আর্থিক প্রণোদনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সময়সীমা আরো ৫ মাস পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের (২০২৬) জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। এখন তা পিছিয়ে আগামী বছরের নভেম্বর মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদনও করেছেন। 

যে  কারণগুলোর কারণে সময়সীমা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে তা হলো, আমেরিকা কর্তৃক বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিকহারে শুল্কারোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ এবং গত বছরে রাজনৈতিক কারণে শিল্পখাতে অস্থিরতা। ইতোমধ্যে ২০২৪ সাল থেকে এই রপ্তানি প্রণোদনা ধাপে ধাপে কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।

বিগত সাত অর্থবছরে রপ্তানিখাতে প্রণোদনার দেয়ার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক প্রণোদনা সিংহভাগ (৮০ ভাগেরও বেশি) পেয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরিপোশাক শিল্প।  

আরো পড়ুন:

পাঁচ বছরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ২২৮ শতাংশ

জবিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী সংস্থাটির কমিটি ফর ডেভলেপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সুপারিশ অনুসারে আগামী ২৪ নভেম্বর ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পরবর্তী সময়ে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিস অ্যান্ড কাউন্টারভেলিং মেজারস (এএসসিএম) অনুসারে রপ্তানি নির্ভর সাবসিডি অর্থ্যাৎ কোনো আর্থিক প্রণোদনা দেয়াা যাবে না। 

এ অবস্থায় রপ্তানিতে বিদ্যমান প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা একসঙ্গে প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানিকারকেরা হঠাৎ করে চ্যালেঞ্জর সম্মুখিন হতে পারেন বা রপ্তানি বাণিজ্য নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে। সেই বাস্তবতায় ২০২৬ সালের মধ্যে রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা ধাপে ধাপে বা  ক্রমান্নয়ে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত রয়েছে, যা পূর্ববর্তী সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত। উক্ত কর্মপরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ধাপে সব পণ্যের (৪৩টি খাতের) রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা ২০১৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আংশিক হ্রাস করা হয়েছে।  দ্বিতীয় ধাপে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে এ নগদ সহায়তা আরো কিছুটা হ্রাস করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে জানিয়েছে, এই  কর্মপরিকল্পনা অনুসারে তৃতীয় ধাপে  ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে রপ্তানি প্রণোদনা/নগদ সহায়তার যার আংশিক হ্রাস করার কথা ছিল। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা কর্তৃক বাংলাদেশের উপর প্রতিযোগী দেশের তুলনায় অধিক হারে শুল্ক আরোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ভারত সরকার দেয় বিধিনিষেধ এবং গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শিল্পখাতে কিছুটা অস্থিরতা থাকার কারণে দেশের রপ্তানিখাত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। পরিবর্তিত এ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রপ্তানি প্রণোদনার হার এ মুহূর্তে আরো হ্রাস করা হলে রপ্তানিকারকেরা অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হবেন। এ পর্যায়ে তৃতীয় ধাপে নগদ সহায়তা হ্রাসের পরিকল্পনা ৬ (ছয়) মাসের জন্য বিলম্বিত করা যেতে পারে। সে প্রেক্ষিতে, নগদ সহায়তার  তৃতীয় ধাপে হ্রাসের লক্ষ্যে ইতোপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত শিথিল করে আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা যুক্তিযুক্ত হবে।  একইভাবে, ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে চতুর্থ ধাপে নগদ সহায়তা হ্রাস কিছুটা বিলম্বিত করে এলডিসি উত্তোরণের দিন হতে অর্থাৎ এর ২০২৬ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা সমীচীন হবে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হলে তিনি তা অনুমোদন করেছেন। ফলে রপ্তানি সহায়তা প্রত্যাহার প্রায় এক বছর পিছিয়ে গেল। এতে দেশের রপ্তানিকেরা বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আরো খানিকটা সময় পেলেন।

ঢাকা/হাসনাত/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন কারণে রপ্তানিতে প্রণোদনা প্রত্যাহার ৫ মাস পেছাল
  • বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মৌখিক পরীক্ষার সূচি প্রকাশ
  • জাপানে উচ্চশিক্ষা সুযোগ: যাত্রা কোথা থেকে কীভাবে শুরু করবেন?
  • ৮৫ ব্রোকারেজ হা্‌উসকে আগস্টের মধ্যে চালু করতে হবে ব্যাক অফিস সফটওয়্যার
  • ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা ১৬ জুলাই থেকে