আটলান্টার আকাশে ছিল উত্তেজনার ঝড়। আর মাঠে সেই ঝড়ের নাম পিএসজি। খেলছিল ৯ জন নিয়ে, তবু মাথা নোয়ায়নি। ভয়ডরহীন, তীব্র আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিয়ে শক্তিশালী বায়ার্ন মিউনিখকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে লুইস এনরিকে’র দল।

এই ম্যাচ যেন সাহস, পরিকল্পনা আর প্রত্যয়ের এক অপূর্ব মিলন। প্রথমার্ধে গোল না পেলেও রক্ষণে দোন্নারুম্মার অসাধারণ দৃঢ়তায় বারবার বেঁচে যায় প্যারিসিয়ানরা। আর আক্রমণে যতবার সুযোগ এসেছে, শাণিত ছিল তাদের প্রত্যাঘাত।

৭৮ মিনিটে দিজিরে দুয়ে যখন বাঁ পায়ের নিচু শটে নয়ারকে পরাস্ত করলেন, তখনো কেউ ভাবেনি এই ম্যাচ শেষ হবে এক মহাকাব্যিক নাটক হয়ে। গোলের পরপরই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ডিফেন্ডার উইলিয়ান পাচো। সংখ্যাগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়েও পিছিয়ে যায়নি পিএসজির মনোবল।

আরো পড়ুন:

দাপট দেখিয়ে প্রথমার্ধেই তুর্কমেনিস্তানের জালে বাংলাদেশের ৭ গোল

লা লিগার সূচি প্রকাশ, বার্সা-রিয়াল এল ক্লাসিকো কবে?

প্রতিপক্ষ যেন ঠিক তখনই চাপে পড়ে। লড়াই তখন দুই শিবিরের মানসিক শক্তির। অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই আরও একটি লাল কার্ড! কনুই দিয়ে আঘাত করে বহিষ্কৃত হলেন বদলি নামা লুকা এরনঁদেজ। তখন মাঠে পিএসজির মাত্র নয়জন।

তবে সংখ্যার ঘাটতি পুষিয়ে দিল হৃদয়ের আধিক্য। ৯ জনের দল হয়েও পাল্টা আক্রমণে উসমান দেম্বেলের দ্বিতীয় গোলটি যেন বার্তা দিল, ‘‘আমরা কেউ নই, তবু হার মানি না।’’

শেষদিকে বিতর্কিত এক পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি, যা বায়ার্নের জন্য আশার আলো হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু ভিএআরে পর্যালোচনায় তা বাতিল হয়। পিএসজির ডাগআউটে তখন তুমুল উচ্ছ্বাস, যেন শেষ বাঁশির অপেক্ষা শুধু আনুষ্ঠানিকতা। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় নিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে তারা।

সেমিফাইনালে পিএসজি মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদের। ইউরোপ সেরা পিএসজি কি পারবে সবচেয়ে বেশি চ্যাম্পিয়ন হওয়া রিয়ালকে টপকে যেতে? সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে বুধবার দিবাগত রাত পর্যন্ত। 

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল স ম ফ ইন ল প এসজ

এছাড়াও পড়ুন:

দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের বিপক্ষে দুই ম্যাচে কেমন খেলল আনচেলত্তির ব্রাজিল

গ্রিক দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন ‘ফর্ম’ বা ‘আইডিয়াজ’-এর কথা। তাঁর মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি চিরস্থায়ী, নিখুঁত ও আদর্শ রূপ আছে। আমরা পৃথিবীতে যা দেখি, তা আসলে সেই নিখুঁত রূপেরই অনুকরণ। যেমন কালো রঙের একটা নিখুঁত ধারণা আমাদের মনের ভেতরে আছে বলেই আমরা চারপাশে কালো রঙের নানা রূপ দেখি। বাস্তবে আমরা যে কালো দেখি, সেটা আসলে সেই নিখুঁত কালোরই প্রতিলিপি।

ফুটবলকে যদি প্লেটোর এই ধারণার আলোকে দেখি, তবে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের সৃষ্টি ‘জোগো বনিতো’কে নিখুঁত ফুটবল বলা যায়। আমরা যে ফুটবলের নান্দনিকতা, কৌশল আর সৌন্দর্য দেখি, তা মূলত সেই নিখুঁত ফুটবলেরই প্রতিফলন। আমাদের চোখ সব সময় সেই আদর্শ ফুটবল খুঁজে বেড়ায়। কোথাও তার আভাস পেলেই আমরা উল্লসিত হয়ে উঠি। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই প্রত্যাশা থাকে ব্রাজিলের কাছেই, যারা নিজেরাও অনেক আগেই সেই খেলা পেছনে ফেলে এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ ঘিরে আবারও সামনে এসেছে ‘জোগো বনিতো’র আলাপ। সেদিন ৯০ মিনিট ধরে অসাধারণ ফুটবল খেলেছিল ব্রাজিল। এরপরই কিছু সংবাদমাধ্যম ও সমর্থক প্রশ্ন তোলে—ব্রাজিলের ‘জোগো বনিতো’ কি আবার ফিরে এল? তবে প্লেটোর ফর্মের যুক্তি মেনে নিলে, সেই নিখুঁত রূপ আসলে কোথাও নেই।

আরও পড়ুনদক্ষিণ কোরিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে যা বললেন ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তি১০ অক্টোবর ২০২৫

বরং মনে হয়, ব্রাজিলও হয়তো ভুলে গেছে সেই রূপটা কেমন ছিল। কিন্তু হারানো ঐতিহ্যের প্রতি টানই মাঝেমধ্যে আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই খেলার কথা। ‘জোগো বনিতো’র আলোচনাটা সরিয়ে রাখলেও, সেদিন ৫–০ গোলে জেতার পথে ব্রাজিলের ফুটবল সত্যিই ছিল চোখধাঁধানো। অনেক দিন পর সমর্থকেরা হয়তো খেলা দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলেন। যদিও পরের ম্যাচে জাপানের বিপক্ষে সেই ব্রাজিলকে পাওয়া গেল সামান্যই।

প্রথমার্ধে ২–০ গোলে এগিয়েও শেষ পর্যন্ত ৩–২ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। আনচেলত্তি এ ম্যাচে দলে অনেক পরিবর্তন এনেছিলেন। তবু প্রশ্ন উঠতেই পারে—আসল ব্রাজিল কোনটা? দক্ষিণ কোরিয়াকে উড়িয়ে দেওয়া দল, নাকি জাপানের বিপক্ষে এগিয়েও হেরে যাওয়া দল? হয়তো আসল ব্রাজিলকে খুঁজতে হবে এই দুই রূপের মাঝামাঝি কোথাও।

ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি

সম্পর্কিত নিবন্ধ