হঠাৎ ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে নদীর দুই পাশের চরের ফসলি জমি। এর মধ্যে রয়েছে চরের বিস্তীর্ণ এলাকার সবজির ক্ষেত। কৃষকরা বলছেন, গত বছরের বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই এবার হঠাৎ বন্যায় ডুবছে তাদের ফসল। কষ্টের ফসল হারিয়ে যাওয়ায় কাঁদছেন চরের কৃষকরা। অনেককেই ডুবন্ত জমি থেকে নানা জাতের সবজি তুলে নিতে দেখা গেছে। 

কৃষি বিভাগ বলছে, হঠাৎ গোমতীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরের প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আমতলী ও কাচিয়াতলীসহ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, চরের যেসব জমিতে করলা, মুলা, লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছিল, তা এখন পানিতে ডুবে আছে। কৃষকের অনেকেই মাথায় হাত দিয়ে নদীর কিনারায় বসে আছেন। কৃষকরা বলছেন, আর মাত্র দুই দিন সময় পেলেই এসব সবজি বাজারে তোলা যেত।

আমতলী এলাকার কৃষক সুজন মিয়া জানান, গোমতী নদীর এ চরে প্রায় ৩ একর জমিতে নানা জাতের সবজি চাষ করেছেন। আর দুই দিন পরই এসব ফসল বাজারে বিক্রি করা যেত। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে সব ফসল তলিয়ে গেছে। তার ভাষ্য, তিনি ব্যাংক ঋণ ও কিস্তি নিয়ে দুই বছর আগে কৃষিকাজ শুরু করেছেন। তার প্রায় ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁর। 

কাচিয়াতলী এলাকার কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। এবারের বন্যায় আমাদের সব ফসল পানিতে ডুবে গেল। পানিতে নেমে কিছু করলা সংগ্রহ করেছি, বাকি সব নষ্ট হয়ে গেছে।’ বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবীদ্বারের বেশ কিছু এলাকার চিত্র একই।

পাঁচথুবী এলাকার কৃষক আবদুল কাদের ও আবদুস সালাম জানান, ৩-৪ দিন সময় পেলেই সবজি বিক্রি করতে পারতেন তারা। কিন্তু পানিতে সব ফসল ডুবে গেছে। মাচায় কিছু করলা আছে, সেগুলো নৌকায় করে গিয়ে সংগ্রহ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, গোমতী নদীর চরে চলতি বন্যায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। সব উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকার যদি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বরাদ্দ দেয় তাহলে তারা পাবেন।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, গোমতী নদীর বিপৎসীমার সর্বোচ্চ পরিমাপ ১১ দশমিক ৩০ মিটার হলেও পানির উচ্চতা ৬ থেকে ৮ মিটার হলেই চরের অনেক কৃষিজমি ডুবে যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় এই নদীর পানি ৯ দশমিক ৪৮ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক র বন য য় র সবজ র ফসল

এছাড়াও পড়ুন:

আমতলীতে বিএনপির দুই পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১৫

বরগুনায় আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা শেষে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার তালুকদার বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জনকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা লুনা বিনতে হক বলেন, আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তির পর যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৭ জুলাই চাওড়া ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সম্মেলন উপলক্ষে আজ তালুকদার বাজারের একটি মাদ্রাসায় প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। সভায় ছালাম মল্লিক ও হাসান বয়াতি ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিটির সভাপতি পদ দাবি করেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার জেরে হাসান বয়াতির ভাতিজা সোহাগ বয়াতিকে ছালাম মল্লিকের ছেলে শাহীন মল্লিক মারধর করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানান, সোহাগের বাবা ইদ্রিস বয়াতি ছেলেকে মারধরের বিষয়টি জানতে পেরে ছালাম মল্লিকের কাছে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে উভয় পক্ষ হাসপাতালে যাওয়ার পথে আবার তালুকদার বাজারের চৌরাস্তায় সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের ১৫ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে আহত ইদ্রিস বয়াতি (৪০), সাগর (১৫), আল মামুন (২৬), সোহাগ বয়াতি (২১), ইমরান মাতুব্বর (১৮), হিরণ মৃধা (২৩), হাসান বয়াতি (৩২), শাহীন মল্লিক (২৫), সালাম মল্লিক (৫২), নুর আলম মল্লিক (২১) ও আসিফ মল্লিককে (২২) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

জানতে চাইলে সভাপতি পদপ্রার্থী হাসান বয়াতি প্রথম আলোকে বলেন, ছালাম মল্লিক গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ করেছেন। এখন তিনি ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটিতে সভাপতির পদ দাবি করেন। তাঁর ভাতিজা সোহাগ বয়াতি এর প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সোহাগকে মারধর করেন ছালামের ছেলে শাহীন। এর জেরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় তাঁর পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে ছালাম মল্লিক বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কথা বলায় আমার ছেলের সঙ্গে হাসানের ভাতিজার কথা–কাটাকাটি হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে আমার পক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছেন।’

জানতে চাইলে চাওড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তুতি সভা শেষে পদ-পদবি নিয়ে ছালাম মল্লিক ও হাবিব বয়াতির লোকজনের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব তুহিন মৃধা বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমতলীতে বিএনপির দুই পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১৫